লোকালয়ে হানা রুখতে হাতিদের গলায় ‘রেডিও কলার’ পরানোর সুপারিশ করলেন বিশেষজ্ঞরা।
১৪ বছর পর বিশ্বের হাতি বিশেষজ্ঞদের বৈঠক বসল অসমে। তিন দিনের আলোচনা হল গুয়াহাটির পাঁচতারা হোটেলে। ১৫টি দেশের ৭৫ জন বিশেষজ্ঞ তাতে অংশ নেন। প্রধান অতিথি ছিলেন আইইউসিএনের স্টিয়ারিং কমিটির উপদেষ্টা সাইমন স্টুয়ার্ট। ভারতের তরফে অংশ নেন ডব্লিউটিআইয়ের সিইও বিবেক মেনন, ভারতীয় হস্তি প্রকল্পের আইজি তথা অধিকর্তা আর কে শ্রীবাস্তব, কেন্দ্রের এডিজি (বন্যপ্রাণ), রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল বিকাশ ব্রহ্ম। তিনি জানান, রাজ্যে হাতি-মানুষের সঙ্ঘাত ক্রমবর্ধমান। তার কারণ, কমে আসছে জঙ্গল। দখল হচ্ছে হাতি করিডর। বিবেক মেনন জানান, এশিয়ায় হাতি অধ্যুষিত প্রায় সব দেশেই হাতি-মানুষ সংঘাত বাড়ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা ১৩টি দেশের জন্য ‘এলিফ্যান্ট অ্যাকশন প্ল্যান’-এর খসড়া বানাবেন।
শ্রীবাস্তব জোর দেন, জঙ্গল বাঁচানো, হাতি শিকার আটকানোর উপরে। তাঁর মতে— বিভিন্ন পাহাড়, জঙ্গলে খননকাজ, পাথর খাদান তৈরি, সড়ক ও উন্নয়নপ্রকল্প দেশে হাতিদের আবাস ও সংখ্যার সঠিক সমীক্ষারও দাবিও জানান তিনি।
তিন দিনের বৈঠকে হস্তি প্রকল্পের অধিকর্তার তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এশিয়ার হাতি বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলি হাত মিলিয়ে হাতিদের বর্তমান আবাস, বিচরণ প্রকৃতি, চারণভূমি নিয়ে মানচিত্র তৈরি করবে। সে জন্য হাতিদের গলায় রেডিও কলার পরানো ও স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শ্রীবাস্তব জানান, ওই মানচিত্র তৈরি হলে হাতি করিডরগুলির অবস্থান, হাতিদের গতিবিধি জানা যাবে। জানা যাবে কোথায় হাতিদের খাবার কমছে, কখন, কোন এলাকা দিয়ে তারা জনবসতিতে ঢুকছে। এতে মানুষের মৃত্যু যেমন কমবে, তেমনই বিষ দিয়ে হাতি মারা বা তড়িদাহত হয়ে হাতির মৃত্যুও কমানো যাবে। সরকারি হিসেবে, গড়ে বছরে এ দেশে ৪০০ জন হাতির আক্রমণে মারা যায়। মানুষের হামলায় হাতির মৃত্যুর গড় সংখ্যা ১০০টি। হাতিরা বছরে অন্তত দশ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমির শষ্য নষ্ট করে। ২০১৪-১৫ সালে অসমে হাতির আক্রমণে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বন্য হাতির পাশাপাশি, পোষা হাতিদের সংরক্ষণ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। পোষা হাতির দেহে মাইক্রোচিপ বসানো থাকে। যা দিয়ে তাদের শণাক্ত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, ২০০৪ সালে এক বার মাত্র মাইক্রোচিপ বসানোর কাজ হয়েছিল। সে বার দেড় হাজার হাতির দেহে মাইক্রোচিপ বসানো হয়। হাতি বিশেষজ্ঞদের কাছে ফের মাইক্রোচিপ জোগাড় করা, বসানো ও মাইক্রোচিপ পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে সাহায্য চায় রাজ্য বন দফতর।
এর আগে গত বছর ভারতীয় বন মন্ত্রক প্রথম ভারত-বাংলাদেশ হাতি সংরক্ষণ নিয়ে বৈঠক করে। কিন্তু ওই বৈঠকে ভারত সরকারের প্রস্তাবগুলি বাংলাদেশ এখনও কার্যকর করেনি। একই ভাবে নেপালে পোষা হাতি ও বুনো হাতি সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারতের প্রস্তাবে এখনও স্বীকৃতি মেলেনি। ভুটান, নেপাল, মায়ানমার, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্তর্দেশীয় হাতি সংরক্ষণ নিয়ে সমঝোতায় মধ্যস্থতা করার জন্য ভারতের তরফে আন্তর্জাতিক হাতি সংরক্ষণ গ্রুপের কাছে আর্জি জানানো হয়।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, অসমে ২০১২ সালে শেষ বার হাতিসুমারি হয়েছিল। তখন হাতির সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ২৩৯টি। পরের হাতিসুমারি শুরু হওয়ার কথা আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে।
এ দিকে, গত ৪৮ ঘণ্টায় বাক্সা জেলার কুমারিকাটায় ভারত-ভুটান সীমান্তে হাতির হানায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, গত রাতে ২ নম্বর কালীপুর গ্রামে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে থেবলাই বসুমাতারির মৃত্যু হয়। শুক্রবার একই জায়গায় দাসিলাল ভুঁইঞা নামে এক ব্যক্তিকে মারে হাতির পাল। গোয়ালপাড়া জেলার চেচাপানি ও ছাতাবাড়িতেও চলছে হাতিদের তাণ্ডব। ৫০টি হাতির দল এলাকায় ত্রাস ছড়িয়েছে। নষ্ট করেছে অনেক ধান খেত।