Advertisement
E-Paper

গ্রামের উঠোনে জনতা-দরবার রঘুবরের

সন্ধে নামতেই যেখানে অন্ধকার নেমে আসে, যেখানে বাড়িতে বিদ্যুৎ আসে অতিথির মতো— সেই গ্রামে সূর্য ডুবতে না ডুবতেই জ্বলল বৈদ্যুতিক আলোর মালা। গাছ, রাস্তা, বাড়ির উঠোন সব জায়গা হ্যালোজেন, বাল্বের আলোয় ঝলমলে। দুমকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে মলুটি গ্রামে বাসিন্দাদের কাছে গত সন্ধেটা সত্যিই ছিল অন্যরকম।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০৪:০৮
জনতার মুখোমুখি। দুমকার মলুটি গ্রামে রঘুবর দাস। ছবি: চন্দন পাল।

জনতার মুখোমুখি। দুমকার মলুটি গ্রামে রঘুবর দাস। ছবি: চন্দন পাল।

সন্ধে নামতেই যেখানে অন্ধকার নেমে আসে, যেখানে বাড়িতে বিদ্যুৎ আসে অতিথির মতো— সেই গ্রামে সূর্য ডুবতে না ডুবতেই জ্বলল বৈদ্যুতিক আলোর মালা। গাছ, রাস্তা, বাড়ির উঠোন সব জায়গা হ্যালোজেন, বাল্বের আলোয় ঝলমলে। দুমকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে মলুটি গ্রামে বাসিন্দাদের কাছে গত সন্ধেটা সত্যিই ছিল অন্যরকম।

হবে না-ই বা কেন? গত রাতে যে সেই গ্রামের অতিথি ছিলেন স্বয়ং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী!

সন্ধে নামতেই বড় কনভয় নিয়ে ৭২টি টেরাকোটা মন্দিরে ঘেরা ঐতিহাসিক মলুটি গ্রামে পৌঁছন রঘুবর দাস। সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ তিনি হাজির হন ‘জনতা দরবারে’। হাজারো নালিশ, সমস্যা নিয়ে তখন সেখানে জমেছে কয়েক হাজার মানুষের। শুধু মলুটিই নয়, শিকারপাড়া, বদলপুর-সহ দুমকার প্রত্যন্ত কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এসেছিলেন। রঘুবর আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পথ অনুসরণ করে এগোতে চান। মোদীজি যেমন গ্রাম দত্তক নিয়ে উন্নয়ন করতে চেয়েছেন, সে ভাবেই তিনি গ্রামবাসীদের সমস্যা বুঝতে সেখানে রাত কাটাতে চাইছেন।

হরেক সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন সাধারণ মানুষ। এক গ্রামবাসী মাইক হাতে নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নালিশ জানান, ‘‘আমাদের এখানে মাসে ২০-২২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। আলো আসলেও ভোল্টেজ এতটাই কম থাকে যে চলন্ত ফ্যানের ব্লেড গোণা যায়!’’ কেউ বলেন, ‘‘চাষবাসের জন্য সাবমার্সিবল পাম্প নেই।’’ মধ্যবয়সী এক মহিলা বলেন, ‘‘এই গ্রামে ১০০ শতাংশ বাসিন্দাই বঙ্গভাষী। কিন্তু এখানকার স্কুলে বাংলা বই পাওয়া যায় না। বাংলা পড়ার জন্য আমাদের চন্দন নদী পেরিয়ে ও পারে পশ্চিমবঙ্গে যেতে হয়।’’

জনতার দরবার চলাকালীন রীতিমতো মিছিল করে পৌঁছন পার্শ্বশিক্ষক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অস্থায়ী কর্মীরা। তাঁদের দাবি— চাকরি স্থায়ী করতে হবে।

একে তো ভ্যাপসা গরম। তার মধ্যে এত সমস্যা শুনতে শুনতে ঘেমে উঠেছিলেন রঘুবর। তিনি অবশ্য ঢালাও আশ্বাস দিতে শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, এক মাসের মধ্যে মলুটিতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। রাঁচিতে ফিরেই পার্শ্বশিক্ষক ও অস্থায়ী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীদের চাকরি পাকা করার বিষয়ে আলোচনা করবেন। এ ভাবেই কেটে যায় আড়াই ঘণ্টা। রাত ৯টা নাগাদ মলুটির অতিথি নিবাসে বিশ্রাম নিতে যান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেখানেও ভিড় জমে স্থানীয় মানুষের।

জনতার দরবারে যেতে দেরি হয়েছিল বলে অতিথি নিবাসের সামনে পৌঁছেছিলেন ৮৫ বছরের গোপালদাস মুখোপাধ্যায়। প্রাক্তন শিক্ষক গোপালবাবু মলুটির মন্দির নিয়ে গবেষণা করেন। তা নিয়ে দু’টি বইও লিখেছেন। তাঁর বক্তব্য, ২০ কিলোমিটার দূরের তারাপীঠে যদি মানুষের ঢল নামতে পারে, তবে মলুটির মৌলীক্ষা মায়ের মন্দিরে কেন পর্যটকরা আসবেন না? কেন টেরাকোটার মন্দিরগুলি অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাবে? এটা কেনই বা ঝাড়খণ্ডের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হবে না?

ভিড়ের বহর দেখে মিনিট কুড়ি বিশ্রাম নিয়ে অতিথি নিবাসের বাইরে আসেন রঘুবর। ফের তাঁকে ঘিরে ধরে জনতা। কিছু অপ্রিয় প্রশ্নের মুখেও তাঁকে পড়তে হয়। কয়েক জন প্রশ্ন তোলেন— এ সব প্রতিশ্রুতি কি বাস্তবায়িত হবে? দিনের বেলাও তো আসতে পারতেন? আপনি চলে গেলেই তো বিদ্যুৎ চলে যাবে! একটু বিরক্ত হয়েই রঘুবর বলেন, ‘‘সদর্থক জিনিস ভাবুন। অন্য কিছু নয়। আমি মুখ্যমন্ত্রী, যখন খুশি রাজ্যের যে কোনও জায়গায় যেতে পারি।’’

রাত যত ঘনাচ্ছিল, ততই তটস্থ হচ্ছিল পুলিশ। মলুটি গ্রাম কিছুটা হলেও মাওবাদী প্রবণ। পুলিশ আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রীকে সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ভিড়ে তখন কার্যত বন্দি রঘুবর। দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্নেও জেরবার। তা সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘১৮১৮ নম্বরে এ সংক্রান্ত অভিযোগ করলে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’’ এরপরই তিনি অতিথি নিবাসের বাতানুকূল ঘরে রাত্রিবাস করতে চলে যান।

তা নিয়েই তোপ দেগেছে বিরোধীরা। গোড্ডার কংগ্রেস সভাপতি দীপিকা সিংহ পাণ্ডে বলেন, ‘‘গ্রাম ঘুরে উনি নাটক করছেন। যে গ্রামে কখনও বিদ্যুৎ থাকে না। সেখানে এসি চালিয়ে ঘুমোলেন। এর পর সেখানে ওঁকে আর কোনও দিনই দেখা যাবে না।’’ যদিও এ সব কথা মানতে নারাজ রঘুবর। তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, ‘‘এ ভাবে আরও জায়গা আমি ঘুরব।’’

আজ সকালে তারাপীঠে পুজো দিতে যান রঘুবর। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী লুইস মরাণ্ডি। রঘুবর জানান, আগামী দিনে তারাপীঠ, মলুটি ও দেওঘর নিয়ে একটি বড় মাপের পর্যটন প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ঝাড়খণ্ডের।

Raghubar Das chief minister jharkhand deepika singh pandey congress bjp aryabhatta khan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy