Advertisement
E-Paper

বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল বিএসএফই, ও পারেও ঘাড় ধাক্কা! ঘরে ফিরলেন অসমে ‘পুশব্যাকের শিকার’ প্রৌঢ়া

সম্প্রতি ‘ফরেনার্স ট্রাইবুনাল’ যাঁদের বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত করেছে, তাঁদের ও পারে পাঠানোর কাজ শুরু করেছে অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি নির্দেশকে হাতিয়ার অনুপ্রবেশকারীদের ‘পুশব্যাক’ করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৫ ১৫:০০

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ভোরবেলা আচমকাই বাড়িতে পুলিশের হানা। স্বামী-মেয়ের সামনে বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়াকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। থানায় নিয়ে গিয়ে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা। প্রৌঢ়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এর পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরাই তাঁকে ছেড়ে দিয়ে এসেছিল ও পারে। মানে বাংলাদেশে!

কী ঘটল, কেন ঘটল, তখনও বোধগম্য হয়নি প্রৌঢ়ার। একের পর এক ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ওই অবস্থাতেই হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গিয়েছিলেন ও পারের গ্রামে। সেখানেও গ্রামবাসীদের তাড়া, ও পারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গলা ধাক্কা! প্রায় দু’দিন ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ কাটানোর পর অবশেষে বাড়ি ফিরলেন অসমের রহিমা বেগম।

অনুপ্রবেশকারীদের ও পারে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অসমে। তিনি সেই প্রক্রিয়ারই শিকার বলে দাবি করেছেন গোলাঘাট জেলার বাসিন্দা রহিমা। তাঁর আইনজীবীর দাবি, সরকারি নথিতে নম্বরের ভুলে প্রৌঢ়াকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে সেই ভুল ধরা পড়তেই তাঁকে আবার অসমে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যদিও এই গোলযোগের অভিযোগ নিয়ে বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ার এবং অসম পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।

সম্প্রতি ‘ফরেনার্স ট্রাইবুনাল’ যাঁদের বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত করেছে, তাঁদের ও পারে পাঠানোর কাজ শুরু করেছে অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি নির্দেশকে হাতিয়ার অনুপ্রবেশকারীদের ‘পুশব্যাক’ করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট এবং গুয়াহাটি হাই কোর্টে। আদালত সূত্রে দাবি, অন্তত ৫০ জনকে ইতিমধ্যেই ও পারে পাঠিয়ে দিয়েছে অসম সরকার।

রহিমাও তাঁদেরই একজন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে তিনি বলেন, ‘‘গত ২৫ মে ভোর ৪টে নাগাদ বাড়িতে পুলিশ আসে। আমরা ঘুমোচ্ছিলাম। ওই অবস্থায় আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পুলিশ সুপারের অফিসে। সেখানে কিছু নথি জমা দিয়েছিলাম। আমার হাতের ছাপও নেওয়া হয়। সারা দিন সেখানে কাটানোর পর বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল আমাকে।’’

প্রৌঢ়ার দাবি, শুধু তিনি একা নন, আরও অনেকেই ছিলেন তাঁর সঙ্গে। সকলকে একসঙ্গে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে বিএসএফ জওয়ানেরা তাঁদের একটি গাড়িতে করে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ও পারে ছেড়ে দেন। তাঁদেরকে কিছু বাংলাদেশি মুদ্রাও দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন রহিমা। তিনি বলেন, ‘‘বিএসএফ আমাদের হুমকি দিয়েছিল। বলেছিল, এ পারে যেন আর না আসি! আমরা ধানখেতে পড়ে ছিলাম। খাওয়ার জল ছিল না। তাই খেতে পড়ে থাকা জলই খেয়েছি। কী করব বুঝতে না পেরে হাঁটতে হাঁটতে একটা গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলাম। সেখানকার লোকেরাও আমাদের তাড়া করেন। ওদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও আমাদের ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে। তার পর সেখান থেকেও আমাদের ভাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে এসেছি, সেখানেই ফিরে যেতে বলা হয়েছিল।’’

নো ম্যানস ল্যান্ডেই একটা গোটা দিন তাঁরা ছিলেন বলে দাবি করেছেন রহিমা। তাঁর কথায়, ‘‘পরের দিন সন্ধ্যায় বিএসএফের লোকেরা আমাদের আবার ডাকেন। তার পর আবার একটি গাড়িতে করে আমাদের কোকরাঝাড়ে নিয়ে আসে। সেখান থেকে আমাকে গোলাঘাটে নিয়ে আসা হয়। বাকিদের কী হয়েছে, আমি জানি না।’’

রহিমা নিখোঁজ হওয়ার পরেই থানায় যোগাযোগ করেছিল তাঁর পরিবার। সঙ্গে গিয়েছিলেন প্রৌঢ়ার আইনজীবী লিপিকা দেবও। তিনি বলেন, ‘‘জোরহাটে পুলিশ আর ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। সেখানে দেখি রহিমার রেজিস্ট্রেশনের নথিতে নম্বরের গন্ডগোল। আমরা বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানাই। তার পরেই ওঁকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নম্বরের গন্ডগোল রয়েছে জানা সত্ত্বেও কেন রেজিস্ট্রেশন অফিসে বিষয়টি জানানো হল না, জানি না।’’

Himanta Biswa Sarma Assam NRC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy