Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বিদর্ভে রাহুল

৪৪ ডিগ্রিতে ১৫ কিলোমিটার পার ‘কৃষকবন্ধু’র

কতটা পথ পেরোলে তবে ভরসা ফেরানো যায়! অকাল ঝড়-বৃষ্টিতে সর্বহারা কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে আজ মহারাষ্ট্রের অমরাবতী থেকে সেই ভরসা ফেরানোর পদযাত্রাই শুরু করলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতে কৃষকদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমস্যার কথা শুনলেন খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। কৃষকদের অধিকার রক্ষায় লড়াইয়ের অঙ্গীকারও করলেন।

মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে পদযাত্রায় রাহুল গাঁধী। যাত্রাপথে এক কৃষকের দরজায় দাঁড়িয়েই গলা ভেজালেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে পদযাত্রায় রাহুল গাঁধী। যাত্রাপথে এক কৃষকের দরজায় দাঁড়িয়েই গলা ভেজালেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৩:৫৮
Share: Save:

কতটা পথ পেরোলে তবে ভরসা ফেরানো যায়!

অকাল ঝড়-বৃষ্টিতে সর্বহারা কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে আজ মহারাষ্ট্রের অমরাবতী থেকে সেই ভরসা ফেরানোর পদযাত্রাই শুরু করলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতে কৃষকদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমস্যার কথা শুনলেন খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। কৃষকদের অধিকার রক্ষায় লড়াইয়ের অঙ্গীকারও করলেন।

তবে শুধু অঙ্গীকারেই থেমে রইলেন না রাহুল। যে বিদর্ভে গরমের দিনে কাঠফাটা রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকাই মুশকিল, সেই অমরাবতীর রাস্তা দিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার হাঁটলেন তিনি। আজ সেখানকার তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ধবধবে কুর্তা পাজামায় সুসজ্জিত রাহুল কোনও গ্রামে চৌপাল বসিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বললেন, কখনও বা আত্মঘাতী কৃষকের বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এলেন। কখনও আবার কোনও বাড়ির থেকে এক ঘটি জল চেয়ে গলা ভেজালেন। বোঝালেন, তিনি কৃষকদের পাশে দাঁড়াতেই এসেছেন।

বিদর্ভে রাহুলের এই পদযাত্রা প্রথম নয়। মনমোহন সিংহের জমানায় কয়েক দফায় বিদর্ভের কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রে মনমোহন সরকারের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রেও তখন কংগ্রেস সরকার চলছে। পরে কেন্দ্র কৃষি ঋণ মকুবের সিদ্ধান্তও নিয়েছিল। যদিও সেই বিদর্ভেই গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের!

আজকের পদযাত্রা অবশ্য সে দিনের থেকে একেবারেই আলাদা। রাহুলের ঘোষিত লক্ষ্য, কৃষকদের হয়ে লড়াই করে তাঁদের ক্ষতিপূরণ আদায় করা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অবশ্য একাধিক। প্রথমত, কংগ্রেসে তাঁর নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠা করা। জনমানসের পাশাপাশি দলের অন্দরেও ভরসা ফিরিয়ে এনে সভাপতি পদের জন্য নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করা। দ্বিতীয়ত, মোদী সরকারকে কৃষক বিরোধী বলে তুলে ধরে কৃষকদের কাছে নিজের ভাবমূর্তির শুদ্ধকরণ। আজও তাই বাছা বাছা কয়েকজন পুঁজিপতির সঙ্গে মোদী সরকারের সখ্য নিয়ে অভিযোগ করেন তিনি। ফের তুলে আনেন কৃষকদের প্রতি কেন্দ্রের উদাসীনতার কথা। রাহুল-সনিয়া যে ভাবে কৃষক-সমস্যা নিয়ে সরব হচ্ছেন, তাতে চাপ বাড়ছে সরকারের ওপর। রাজনৈতিক ভাবে রাহুলকে মোকাবিলা করতে আজ প্রথম মুখ খুলেছেন মোদী মন্ত্রিসভার অন্যতম মন্ত্রী অরুণ জেটলি। মোদী সরকারকে ‘স্যুট বুটের সরকার’ বলে রাহুলের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়ে আজ সংসদে অর্থ বিল নিয়ে আলোচনার জবাবি বক্তৃতায় জেটলি বলেন, ‘‘স্যুট-বুটের নয়, কেন্দ্রে আসলে সুঝ-বুঝের সরকার চলছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়েও কাল তাঁকে কটাক্ষ করেন রাহুল। সেই সূত্র ধরে কংগ্রেস নেতা কে ভি টমাস বলেন, ‘‘দশ মাসে ১৬ বার বিদেশে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’’ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে এ প্রসঙ্গেও একটিও বাক্যব্যয় করেননি জেটলি। তবে রাহুলের অন্তরালে থাকার প্রসঙ্গ টেনে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা অন্তত জানতাম তিনি কোথায় গিয়েছেন!’’ ৫৬ দিন অজ্ঞাতবাসের পর অনেক বেশি আক্রমণাত্মক অবতারে ফিরে এসেছেন রাহুল। বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাহুল কোথায় গিয়েছিলেন তা নিয়ে কথা না বাড়ানোর সিদ্ধান্তই নিয়েছে বিজেপি। তবে জেটলি আজ আসরে নামায় অনেকেই মনে করছেন, রাহুলকে মোকাবিলার জন্য এ বারও আক্রমণাত্মক হচ্ছে বিজেপিও!

বিদর্ভে রাহুলের পদযাত্রা নিয়ে আজ তোপ দেগেছেন বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘এটা রাহুলের পদযাত্রা নয়। কদযাত্রা!’’ হিন্দিতে ‘কদ’ মানে ব্যক্তিত্বের ওজন। সম্বিতের মতে, পদযাত্রা করে আসলে তিনি দলে কর্তৃত্ব বাড়াতে চাইছেন। সমালোচনা করলেও নতুন চেহারার রাহুলকে সামনে রেখে কংগ্রেস যে অনেকটাই নড়ে চড়ে বসেছে তা স্পষ্ট। সনিয়া না রাহুল, দলের রাশ কার হাতে থাকা উচিত তা নিয়ে প্রকাশ্যে মত প্রকাশ যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনই রাহুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠরা। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মনিশঙ্কর আইয়ার বলেন, ‘‘রাহুল যে ভাবে পদযাত্রায় বেরিয়েছেন, তা দেখে রাজীব গাঁধীর কথা মনে পড়ছে। ১৯৮৭ সালে ঠিক এমনই পরিস্থিতি হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রাজীব এ ভাবেই কৃষকদের সমস্যা খতিয়ে দেখেছিলেন।’’

রাহুল যদিও প্রতিদিন পদযাত্রা করবেন না। আজ বা কাল সকালে দিল্লি ফেরার কথা তাঁর। কাল সকালেই হয়তো নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র অমেঠীতে যাবেন। হয়তো সেখানেও পায়ে হেঁটে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমস্যার কথাও শুনবেন!

মানুষের পাশাপাশি দলের অন্দরেও ভরসা ফেরানোর যাত্রা এখানেই শেষ হচ্ছে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE