বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে গত কাল নির্বাচন কমিশনের সামনে একাধিক প্রশ্ন তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরে আজ কমিশনের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন বিহারে ‘নির্বাচন চুরি’ করার জন্য ‘নতুন ষড়যন্ত্র’ শুরু করেছে। রাহুলের দাবি, নির্বাচন কমিশন নিজের কাজ না করে ‘বিজেপির শাখা’ হিসেবে কাজ করছে।
বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দশটি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও একাধিক সংগঠন যে মামলা করেছিল, তাতে শীর্ষ আদালত বলেছে, এই মামলার সঙ্গে দেশের মানুষের ‘ভোটের অধিকার’-এর প্রশ্ন জড়িত। এই প্রশ্ন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র চালু থাকার একেবারে শিকড়ে চলে যায়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে বাধা দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। বরং ভোটার তালিকা সংশোধন করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে বিচারপতিরা মন্তব্য করেছিলেন।
আজ বিজেপির মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি তোলেন, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদবকে সমুচিত জবাব। তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের শুনানির আগের দিন, বুধবার পটনায় রাস্তায় নেমে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরোধিতা করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় সংশোধনের কাজে স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হয়নি। এখন রাহুল-তেজস্বীর জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের লিখিত রায় প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার মামলাকারীরা নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে কোনও স্থগিতাদেশ চায়নি। নির্বাচন কমিশন এবং শাসক দল এ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সুপ্রিম কোর্ট বরং নির্বাচন কমিশনকে ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, রেশন কার্ড বিবেচনা করতে বলেছে, যাতে কেউ ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যান।
রাহুল গান্ধীর বক্তব্য, ‘‘মহারাষ্ট্রে নির্বাচন চুরি করা হয়েছিল। ঠিক একই ভাবে বিহারে নির্বাচন চুরি করার চেষ্টা হচ্ছে। তার জন্য নির্বাচন কমিশন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কমিশন বিজেপির শাখা হিসেবে কাজ করেছে। নিজের কাজ করছে না।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে এক কোটি নতুন ভোটার যোগহয়েছিল। আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি, এই সব ভোটার কারা ছিল ও কোথা থেকে এসেছিল।’’
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, ‘‘আমরা কমিশনকে একবার নয়, অনেক বার বলেছি, আমাদের ভোটার তালিকা দিন। ভোটগ্রহণের ভিডিয়ো দিন। কমিশন তা দেয়নি। উল্টে বিহারে নির্বাচন চুরি করতে চাইছে। আমি বিহারে গিয়ে ইন্ডিয়া মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বলেছি, বিহারে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন চুরি করতে দেব না। বিজেপিকে নির্বাচন চুরি করতে দেব না।’’
নির্বাচন কমিশন আজ ফের দাবি করেছে, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ ভাল ভাবেই এগোচ্ছে। জানুয়ারি মাসে তৈরি ভোটার তালিকায় বিহারে যে ৭.৯ কোটি মতো ভোটার ছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫.৮৭ কোটি ভোটারের ফর্ম ইতিমধ্যেই জমা পড়ে গিয়েছে। যদিও ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৫ জুলাই।
নির্বাচন কমিশন রোজই ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ কত খানি এগিয়েছে, তা ‘এক্স’ হ্যান্ডলে জানিয়ে দিচ্ছে। তার সঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের ছবিও থাকছে। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলের কটাক্ষ, ‘নির্বাচন কমিশনেও নরেন্দ্র মোদীর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। কমিশনের সাধারণ তথ্যেও মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরাট ছবি দেওয়া হচ্ছে। আইন অনুযায়ী তিন জন নির্বাচন কমিশনেরই সমান ক্ষমতা। তা হলে এই মোদী-ঘরানায় একজনের প্রচার কেন!’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)