‘লিখে নিন, হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে অবশ্যই জেলে যেতে হবে।’ আজ গুয়াহাটিতে অসম প্রদেশ কংগ্রেসের রাজনৈতিক কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এই মন্তব্য করেছিলেন। সেই বৈঠকের কিছু ক্ষণের মধ্যে খোদ হিমন্তই তা এক্স-হ্যান্ডলে জানিয়ে দিলেন।
কংগ্রেসের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের খবর কী ভাবে হিমন্তের কাছে পৌঁছে গেল, তা নিয়ে কংগ্রেস প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছিল। হিমন্ত কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে গেলেও যে তাঁর কিছু আস্থাভাজন কংগ্রেসে থেকে তাঁর হয়ে কাজ করছেন, তা-ও স্পষ্ট হচ্ছিল। এর মধ্যে রাহুল প্রকাশ্য জনসভাতেই হুঁশিয়ারি দিলেন, কংগ্রেস হিমন্তকে জেলে পাঠাবে। হিমন্ত পাল্টা বলেছেন, রাহুল নিজেই দেশের নানা প্রান্তে একাধিক ফৌজদারি মামলায় জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে হিমন্ত অভিযোগ তুলেছিলেন, তিনি রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে দেখেছিলেন, রাহুল তাঁর কথায় কান না-দিয়ে পোষা কুকুরকে বিস্কুট খাওয়াতে ব্যস্ত। আগামী বছর অসমের বিধানসভা নির্বাচনে হিমন্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গৌরব গগৈকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করেছে কংগ্রেস। আজ রাহুল ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির জন্য গুয়াহাটিতে গিয়ে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে কংগ্রেসে থেকে যাঁরা বিজেপির জন্য কাজ করছেন, তাঁদেরও বার্তা দেন রাহুল। সবাইকে হিমন্তের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে কাজ করতে বলেন। একই সঙ্গে হিমন্তকে ভবিষ্যতে জেলে যেতে হবে বলেও মন্তব্য করেন।
হিমন্ত তা ফাঁস করে দিয়ে লেখেন, ‘তিনি এত দূর এসেছেন শুধুমাত্র আমাকে জেলে পাঠানোর কথা বলতে। শুভেচ্ছা রইল, রাহুলজি। বাকি দিনটা অসমের আতিথেয়তা উপভোগ করুন।’ এর পরে বিকেলে রাহুল প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী। তিনি মুখে বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু টিভিতে দেখবেন, তাঁর চেহারার আড়ালে, তাঁর কণ্ঠস্বরে ভয় রয়েছে। কারণ তিনি জানেন, কোনও না কোনও দিন কংগ্রেসের সিংহেরা তাঁকে জেলে পাঠাবে। এটা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। এ বার তাঁকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। এমনকি নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহও বাঁচাতে পারবেন না।’’ রাহুলের কটাক্ষ, নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী নয়, অসমের রাজা ভাবেন হিমন্ত। তিনি ২৪ ঘণ্টা ধরে রাজ্যবাসীর জমি ও সম্পদ কখনও আদানি, কখনও অম্বানীদের বিলিয়ে দেন। হিমন্তের বিরুদ্ধে অসমের জমি করায়ত্ত করার অভিযোগ তুলে রাহুল বলেন, ‘‘তিনি ও তাঁর পরিবার যে দুর্নীতি করেছেন, তার হিসাব অসমের জনতাকে দিতে হবে। আমি বুঝেশুনে কথা বলি এবং সচরাসর যা যা বলি, তা ঘটে। আপনারা দেখবেন, কিছু দিনের মধ্যে এই সংবাদমাধ্যমই দেখাবে যে, আপনাদের মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র সময়ে হিমন্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, অসমে রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট করা পথ দিয়ে যাত্রা না গেলে, গুয়াহাটি শহরের মধ্যে ঢুকলে রাহুলের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে। ভোটের পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। আজ হিমন্ত রাহুলকে পাল্টা জবাবে বলেন, ‘‘আমি শুনলাম ৫০০০ কোটি টাকারও বেশি অঙ্কের ন্যাশনাল হেরাল্ড দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হিসেবে আপনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন। আপনি কংগ্রেসের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান হিসেবে মনে থেকে যাবেন। আপনার কথায় আমার কিছু আসে-যায় না। কারণ আমি জানি, দেশ জানে, আপনি ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের অন্যতম।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)