E-Paper

রাহুলের তিরে বিজেপির ‘দেশপ্রেম’, শপথ আরও আদানি-প্রশ্নের

‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র শেষে শ্রীনগরের লালচকে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন রাহুল। তাঁর যাত্রার সময় কাশ্মীরিরা তেরঙ্গা পতাকা হাতে বেরিয়ে এসেছিলেন।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৭
Picture of Rahul Gandhi.

রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশন থেকে রাহুল গান্ধী যে ফের আদানি-কাণ্ডে নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধবেন, তা প্রত্যাশিতই ছিল। বিঁধলেনও। সংসদে নরেন্দ্র মোদী-গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরে আজ নয়া রায়পুরে রাহুল গান্ধী বললেন, “নরেন্দ্র মোদী ও গৌতম আদানি একই।”

কিন্তু শুধু আদানিতেই আটকে না থেকে আজ রাহুল গান্ধী বিজেপির ‘জাতীয়তাবাদ’ ও ‘দেশপ্রেম’ নিয়েও প্রশ্ন তুললেন। তাঁর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে বিজেপির জাতীয়তাবাদের সঙ্গে কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদের ফারাক তুলে ধরলেন।

‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র শেষে শ্রীনগরের লালচকে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন রাহুল। তাঁর যাত্রার সময় কাশ্মীরিরা তেরঙ্গা পতাকা হাতে বেরিয়ে এসেছিলেন। কংগ্রেস নেতারা বলেছিলেন, ৩৭০ রদের পরে কাশ্মীরে এমন দৃশ্য আর দেখা যায়নি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে বলেছিলেন, তিনি ১৯৯২ সালে লালচকে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন। যখন সন্ত্রাসবাদ তুঙ্গে ছিল। রাহুল আজ মোদীকে নিশানা করে বলেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী বুঝতেই পারেননি, দু’টোর মধ্যে কোথায় ফারাক! বিজেপির ১৫-২০ জনকে নিয়ে তিরঙ্গা ওড়ানো, এক রকম। আর কাশ্মীরের যুবকদের হাতে তিরঙ্গা ওড়ানো অন্য রকম। আমরা কাউকে বলিনি তিরঙ্গা ওড়াতে। তবু কাশ্মীরের যুবকেরা তিরঙ্গা হাতে নিয়ে হেঁটেছেন। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ হিন্দুস্তানের ভাবনা, তিরঙ্গার আবেগ কাশ্মীরি তরুণদের মনে গেঁথে দিয়েছে। মোদী সরকার হিন্দুস্তান, তিরঙ্গা নিয়ে সেই আবেগটাই কাশ্মীরিদের থেকে কেড়ে নিয়েছিল।’’

কিছু দিন আগে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, চিনের অর্থনীতি ভারতের থেকে অনেক বড়। তার সঙ্গে কি বিবাদে যাওয়া সম্ভব? মোদী সরকারের এই নীতিকে নিশানা করে আজ রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলেছেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যখন স্বাধীনতার লড়াই হয়েছিল, তখন কি ব্রিটেনের অর্থনীতি ভারতের থেকে ছোট ছিল? চিনের শক্তি বেশি বলে কি তার সঙ্গে লড়বই না? এ কোন ধরনের জাতীয়তাবাদ? এ কেমন দেশপ্রেম? একে ‘কাপুরুষতা’ আখ্যা দিয়ে রাহুল বলেন, “এ হল সাভরকরের মতাদর্শ। শক্তিমানের সামনে মাথা নত করা।”

আদানি-কাণ্ডে ব্রিটিশ রাজত্বের ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে আজ দাবি করেছেন রাহুল। অভিযোগ তুলেছেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতোই আদানি গোষ্ঠী এ দেশের সম্পদ, পরিকাঠামো দখল করে নিচ্ছে। আদানি নিয়ে মোদীকে নিশানা করে রাহুল বলেন, সংসদে একটাই প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদী ও শিল্পপতি গৌতম আদানির মধ্যে কী সম্পর্ক? সহজ উত্তর ছিল, কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু মোদী তা বলেননি। তার বদলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা দল বেঁধে আদানিকে বাঁচাতে নেমে পড়েছেন! রাহুল বলেন, “সত্যটা বেরিয়ে আসা না পর্যন্ত আদানি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকব।” মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে ‘সত্যাগ্রহী’ কংগ্রেসের নিরিখে বিজেপিকে ‘সত্তাগ্রহী’ বলে নিশানা করে রাহুল বলেন, এরা ‘সত্তা’ বা ক্ষমতার জন্য যা খুশি করতে পারে। যার সঙ্গে খুশি হাত মেলাতে পারে।

‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র শেষে প্লেনারি অধিবেশনই ছিল রাহুল গান্ধীর দলীয় মঞ্চে প্রথম বক্তৃতা। স্বাভাবিক ভাবেই মহাধিবেশনের ১৫ হাজার কংগ্রেসের নেতা-কর্মী তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্যই মুখিয়ে ছিলেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বক্তৃতায় বারবার রাহুলের নামে জয়ধ্বনি উঠেছে। বিজেপির বিদ্বেষ-বিভাজনের নীতি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু হয়েছিল। এই যাত্রা কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদও তুলে ধরেছে বুঝিয়ে রাহুল বলেছেন, যাত্রা নতুন করে ভারতের আসল ভাবনা গোটা দেশে ছড়িয়েছে। সে কাজ রাহুল গান্ধী করেননি। কংগ্রেসের নেতা-কর্মী, দেশের মানুষ করেছেন। সনিয়া গান্ধীও তা শুনে হাততালি দিয়েছেন। বক্তৃতার শেষে রাহুল মা-কে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছেন।

রাহুলের বক্তৃতার আগে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা বলেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি। মানুষের প্রত্যাশা হল, বিজেপির বিরোধী দলগুলিকে এক হতে হবে। রাহুল বিরোধী জোট নিয়ে কথা বলেননি। তার বদলে কংগ্রেসকে চাঙ্গা করার দিকে জোর দিয়েছেন। বলেছেন, একটা ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ই কংগ্রেস কর্মীদের চাঙ্গা করে দিয়েছে। ১৫ হাজার কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠেছে, আবার ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ চাই। এ বার পূর্ব থেকে পশ্চিম। রাহুল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে বলেছেন, “নতুন কর্মসূচি তৈরি করুন। রক্ত-ঘাম ঝরানো কর্মসূচি চাই। আপনার টিমে আমি থাকব। সবাই থাকবেন।” অধিবেশনের মঞ্চ থেকেই আদানি-কাণ্ড নিয়ে মার্চ থেকে কংগ্রেসের বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ঘোষণা করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানান, অরুণাচলের পাসিঘাট থেকে গুজরাতের পোরবন্দর পর্যন্ত একটি ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু করা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। যদিও তা নিয়ে চূড়ান্ত রূপরেখা এখনও তৈরি হয়নি।

কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ এবং প্লেনারি অধিবেশন রাহুলের নতুন লড়াকু রাজনীতিকের ভাবমূর্তি তৈরি করে দিয়েছে। এ বার আন্তর্জাতিক স্তরে, অনাবাসী ভারতীয়দের সামনেও মোদীর বিপরীতে ‘ব্র্যান্ড রাহুল’ তুলে ধরা জরুরি। সেই লক্ষ্যেই রাহুল কেমব্রিজে বক্তৃতা করতে সোমবার লন্ডন রওনা হচ্ছেন। অধিবেশনের শেষে জনসভায় যোগ না দিয়ে তাই রবিবার বিকেলেই রাহুল সনিয়াকে নিয়ে রায়পুর থেকে দিল্লি ফিরেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rahul Gandhi Congress Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy