পুঞ্চের সিংহ সভা গুরুদ্বার থেকে বেরিয়ে আসছিলেন রাহুল গান্ধী। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়ে পাকিস্তানের গোলা এসে পড়েছিল এই গুরুদ্বারকে লক্ষ্য করে। এক স্থানীয় বাসিন্দা দৌড়ে এলেন রাহুলের কাছে। অনুযোগ করলেন, “আমাদের পুঞ্চের ১৭ জন মানুষ শহিদ হয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁর জাতির উদ্দেশে ২২ মিনিটের বক্তৃতায় এক বারও পুঞ্চের নাম নিলেন না!”
গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার তিন দিন পরেই রাহুল গান্ধী কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদী হামলায় হতাহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শনিবার সকালে লোকসভার বিরোধী দলনেতা পুঞ্চে পাকিস্তানের গোলায় হতাহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। পাকিস্তানের গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত গীতা ভবন মন্দির, জামিয়া জ়িয়া উল-উলুম মাদ্রাসা, সিংহ সভা গুরুদ্বারেও যান। পহেলগামের হামলা, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মধ্যে রাহুল গান্ধীর দু’বার কাশ্মীর সফরকে সামনে রেখে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলল, নরেন্দ্র মোদী বিহার, রাজস্থান, কেরলে জনসভা করার সময় পেলে এক বারও কাশ্মীর যাওয়ার সময় পেলেন না কেন? কংগ্রেসের কটাক্ষ, এটাই নেতা ও অভিনেতার মধ্যে ফারাক। বিজেপি পাল্টা জবাবে বলেছে, রাহুল গান্ধী যে ভাবে ভারতের ক’টা যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়েছে বলে প্রশ্ন তুলছেন, তাতে তিনি গোটা কংগ্রেসেরই বিপদ ডেকে আনছেন।
রাহুল আজ পুঞ্চে পাকিস্তানের গোলায় নিহত ১২ বছর বয়সি যমজ ভাই-বোন, জ়ায়ান আলি ও উরওয়া উর্বা ফতিমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে পাকিস্তানের গোলায় পুঞ্চের নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকা দু’ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছিল। ১৩ বছরের বিহান ভার্গবের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। পাকিস্তানের থেকে গোলা বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরে বিহানের পরিবার সুরক্ষিত এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ঠিক সেই সময়ে পাকিস্তানের দিক থেকে গোলা এসে বিহানদের গাড়িতে পড়ে। বিহানের মৃত্যু হয়। পুঞ্চের ক্রাইস্ট স্কুলেও পাকিস্তানের গোলা পড়েছিল। সেখানেও রাহুল গান্ধী গিয়ে ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের সাহসের প্রশংসা করেন। জামিয়া জ়িয়া-উল-উলুম মাদ্রাসায় গত ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করা মৌলানা মহম্মদ ইকবালের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন।
পরে রাহুল বলেন, “এখানে সব ধর্মের লোক একসঙ্গে থাকেন। সবাই একসঙ্গে দুঃখ সহ্য করেন। এটাই পুঞ্চ, এটাই ভারত। যেখানে সৌহার্দ্য, ঐক্য ও দেশপ্রেম রয়েছে। আমাদের মধ্যে বিভাজন, ভাঙন তৈরির যাঁরা চেষ্টা করছেন, তাঁরা সফল হবেন না।” সমাজমাধ্যমে রাহুল লিখেছেন, “ভাঙা বাড়ি, ছড়িয়ে থাকা জিনিসপত্র, কান্নায় ভেজা চোখ, আপন মানুষকে হারানোর কাহিনি, এই সব দেশভক্ত পরিবার প্রতিবার যুদ্ধের সময়ে সব থেকে বড় বোঝা কাঁধে তুলে নেয়। এই মনোবলকে সেলাম জানাই। পরিবারগুলির কিছু সমস্যা জাতীয় স্তরে তুলে ধরব।”
কাশ্মীরে গিয়েছিল তৃণমূলের প্রতিনিধিদলও। সে প্রসঙ্গে আজ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজমাধ্যম এক্স-এ লেখেন, ‘সীমান্ত এলাকার পুঞ্চ ও রাজৌরিতে আমাদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল গিয়েছিল। দুর্গতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। যান রাজৌরির সরকারি হাসপাতালেও।’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)