নয়াদিল্লির রঘুবীর নগর এলাকায় হকারদের মাঝে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
সন্ধ্যায় ইফতার। সকালে মন্দির। মাঝখানে গুজরাতি সম্প্রদায়ের হকারদের পাশে দাঁড়ানো। তাঁদের সমস্যা নিয়ে সরব হয়ে নরেন্দ্র মোদী ও অরবিন্দ কেজরীবালকে অস্বস্তিতে ফেলার কৌশল। সোমবার এক ঢিলে অনেক পাখি মারার চেষ্টা করলেন রাহুল গাঁধী।
বিজেপি-বিরোধী দলগুলির নেতাদের সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারে নিমন্ত্রণ করেছিলেন সনিয়া গাঁধী। সেই ইফতারে যোগ দেওয়ার আগে সাতসকালে দিল্লির রঘুবীর নগর মন্দিরে পুজো দিয়েছেন রাহুল।
ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি যদি রঘুবীর নগরের মন্দিরে যাওয়ার গৌণ উদ্দেশ্য হয়, তা হলে মন্দিরের সামনে পুরনো জামাকাপড়ের হকারদের পাশে দাঁড়ানো অবশ্যই মুখ্য উদ্দেশ্য। এই হকাররা মূলত গুজরাতি বাঘরি সম্প্রদায়ের। বহু দিন ধরেই তাঁরা নিজেদের সমস্যা, অধিকারের দাবিতে সরব। উচ্ছেদের ভয়ও রয়েছে। এক দিকে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী, অন্য দিকে দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল—দুই সরকারের বিরুদ্ধেই হকারদের ক্ষোভ উস্কে দিয়েছেন রাহুল। তাঁদের সমস্যা সমাধানের দাবি শুনে বলেছেন, ‘‘আপনারা যখন বলেছেন, তখন এটা আমার কাছে নির্দেশ।’’
নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের মানুষ। সেই কারণেই কি বেছে বেছে গুজরাতি সম্প্রদায়ের সমস্যায় পাশে দাঁড়াতে গেলেন রাহুল? পুজোর পরে কপালে টিকা পরে রাহুল এই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি। শুধু মুচকি হেসেছেন। তার পরে বলেছেন, ‘‘হকাররা আমাকে ডেকেছিলেন। পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁরা। শহরের মধ্যে এঁদের কোনও জায়গা দেওয়া হয়নি। দমিয়ে রাখা হচ্ছে। তাই এখানে এসেছি।’’
রঘুবীর নগরের হকাররা স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত। রাহুলের সঙ্গে কথা বলার পর বিমলা বাঘরি বলেন, ‘‘আমাদের মান্ডির ছাদ ভেঙে পড়ছে। কোনও দিন কেউ আসেনি। রাহুলজিই প্রথম এলেন।’’ রাহুল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ‘কিছু করা’-র চেষ্টা করবেন। প্রশাসনকে জানাবেন। সংসদেও বিষয়টি তুলবেন। তাতেই খুশি বিমলারা।
রাহুলের তৎপরতা দেখে বিজেপি নেতারাও পাল্টা আক্রমণে নেমে পড়েছেন। সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, ‘‘এ সব হল এক জন পার্ট-টাইম রাজনীতিকের পার্ট-টাইম নাটক। এনডিএ সরকার হকারদের উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধানের জন্য আইন তৈরি করেছে। রাহুল এ সবের কিছুই জানেন না। উনি নাটকে ব্যস্ত।’’ বিজেপির দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় মাকেন। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তার হকারদের জীবিকা সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ বিল ইউপিএ আমলে পাশ হয়েছিল। রাহুল গাঁধী বিল তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।’’
কংগ্রেস সূত্রের খবর, সব দিক দেখেই আজ রঘুবীর নগর এলাকাকে বেছে নিয়েছিলেন রাহুল। কারণ ১৯৬৪ সাল থেকেই এখানে গুজরাতি বাঘরি সম্প্রদায়ের বসবাস। এখানে তারা পুরনো জামাকাপড়ের ব্যবসা করেন। তাদের বাজার খোলে মধ্য রাতে। দিল্লি তো বটেই, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকেও গরিব মানুষেরা এখানে বেচাকেনা করতে আসেন। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাহুল শুধু যে বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা করেছেন, তা-ই নয়, তাঁর নিশানায় রয়েছেন অরবিন্দ কেজরীবালও। কংগ্রেসের থেকে দিল্লির ভোট নিজের পকেটে পুরে ফেলেছিলেন আপ নেতা। রাহুল এখন সেই ‘আম আদমি’-র সমর্থন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। রাহুলকে সামনে রেখে কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, হকারদের জন্য কেন্দ্রীয় আইন পাশ হলেও কেজরীবাল-সরকার তা রূপায়ণ করছে না।
অজয় মাকেনের যুক্তি, আইন অনুযায়ী, কোনও শহরের জনসংখ্যার ২.৫ শতাংশ মানুষ হকারের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য। দিল্লিতে কাউকে সেই লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। হকার, পুরসভা, ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হওয়ার কথা। যে কমিটি ঠিক করবে, কোথায় হকাররা বসবেন। এ বিষয়েও কোনও কাজ হয়নি। অথচ ওই মান্ডিতে বসতে গেলে গরিব মানুষদের থেকে রোজ তোলা আদায় করা হচ্ছে। গুজরাতি সম্প্রদায়ের কারণেই রঘুবীর নগরকে বেছে নেওয়ার অভিযোগ মাকেন মানতে চাননি। প্রশ্ন উঠেছে, সন্ধ্যায় ইফতারের দিনেই সকালে রাহুল মন্দিরে কেন? মাকেনের জবাব, ‘‘তিন দিন টানা বৃষ্টির পরে আজ রোদ উঠেছিল। তাই আজকে যাওয়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy