জন্মদিনের পর থেকে বিদেশে উধাও।
সংসদে দলিত বিতর্কে ঘুমোনোর ছবি নিয়ে তোলপাড়।
আর গুজরাতে এমন এক মহিলাকে জড়িয়ে ধরলেন, যাঁর বিরুদ্ধে বিস্তর মামলা। গত ক’দিন বিতর্কেই দিন কেটেছে রাহুল গাঁধীর।
আজ উঠলেন গা ঝাড়া দিয়ে।
আর উঠেই নরেন্দ্র মোদীর এমন এক দুর্বল জায়গায় ঘা দিলেন, যা দিয়ে আগামী কয়েক মাস, এমনকী কয়েক বছরের জন্য নতুন স্লোগানের হাতিয়ার তুলে দিলেন কংগ্রেসের হাতে। এর আগে ‘সুট-বুট’, ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’র সরকার বলে বিঁধেছিলেন মোদী সরকারকে। আজ রাহুলের ঝুলি থেকে বেরোলো নতুন স্লোগান, ‘অড়হর মোদী’। প্রধানমন্ত্রীর স্তাবকরা যে ভাবে ‘হর হর মোদী’ বলেন, ‘অড়হর’ ডালের সঙ্গে তর্জমা টেনে এটি তারই প্যারোডি।
বিষয় ছিল লোকসভায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা। আর সেখানেই ১৩ মিনিটে বাছাই করা নিখুঁত শব্দে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধলেন রাহুল। বললেন, দু’মাস আগেই সরকারের ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ হয়েছে। বলিউড থেকে তারকারা এসে উৎসবে মেতেছেন। জেলায়-জেলায় নেতারা প্রচার করেছেন। কিন্তু, কারও মুখে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে টুঁ শব্দটি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ভোটের আগে বলেছিলেন, চোখের জল খেয়ে যে মা ও বাচ্চা শুয়ে পড়ে, ক্ষমতায় এলে সেই দুর্দিন ঘোচাবেন। কিন্তু এখন টোম্যাটো, আলু, ডালের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি চৌকিদার হবেন। অথচ সেই চৌকিদারের নাকের নীচেই এখন ডালে চুরি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি একটাই। একটি দিন তিনি বলে দিন, যখন মূল্যবৃদ্ধি আর থাকবে না।
আরও পড়ুন: রামধনু বলয়ে মমতা, লক্ষ্য স্থির তৃতীয় ইনিংসে
রাহুল বলবেন, তাই আগেভাগে প্রস্তুত ছিল বিজেপিই। শাসক বেঞ্চের সামনের দিকের সারিতেই বসিয়ে রাখা হয়েছিল দলের তরুণ ব্রিগেডকে। রাহুল বলবার মাঝেই পুনম মহাজন প্রশ্ন ছোঁড়েন, ‘‘কোন ডালের দাম বেড়েছে?’’ বক্তৃতা থামিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘সব ডালের হিসেব দেব। আপনাকে তো আর বাজার যেতে হয় না।’’ বিজেপি শিবির থেকে বিদ্রূপ ভেসে উঠল, ‘‘আপনি বাজারে যান? আপনার মা বাজার যান?’’ সনিয়া তখন উঁকি মেরে দেখছিলেন, কারা বলছেন এ সব কথা। সনিয়া মুখ তুলতেই বিজেপি শিবিরের নেতারা ফের ঘাপটি মেরে যান। রাহুল বক্তৃতা শুরু করতেই ফের ব্যঙ্গ বিজেপি শিবির থেকে। ‘‘আপনার ঘুম ভেঙেছে?’’ ‘‘আপনি ডাল খান, না পাস্তা?’’ ‘‘আচ্ছা, ডাল কোন গাছে ফলে?’’ অরুণ জেটলি, পীযূষ গলায়কেও মুচকি হাসতে দেখা যায়।
কিন্তু, এই ব্যঙ্গ উপেক্ষা করেই নিজের বক্তব্যে অটল থাকেন রাহুল। বক্তৃতার পর সনিয়া রাহুলকে তাঁর পাশে বসতে বলেন। অনেক ক্ষণ তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। রাহুলের বক্তৃতার সময় বিজেপি শিবির থেকে নিরন্তর কটাক্ষ করা হলেও সরকারের মাথারা জানেন, রাহুল যে বিষয়টিই আঘাত করেছেন, সেটি সামাল দিতে কেন্দ্রকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। সে কারণে রাহুলের বক্তৃতা দেখার পর নীতি আয়োগের বৈঠকে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেন। বলেন, ‘‘ডালের যে অভাব হল, কেন এটি আগে ভাবা হয়নি? যখন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হবে, তখন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগে থেকেই ভাবতে হবে উপভোক্তাদের চরিত্র কী ভাবে বদলাতে পারে আগামী দিনে। মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী দিনে তাঁরা কী খেতে পছন্দ করবেন, রেস্তোরাঁয় কীসের চাহিদা বাড়বে, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই যাবতীয় পরিকল্পনা করতে হবে।’’
সংসদে এর জবাব দেওয়ার কথা খাদ্য মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন রাহুলের বক্তব্যের জবাব দিতে হবে অরুণ জেটলিকে। সে কারণে অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘নানা কারণে বাজার দর আর নূন্যতম সহায়ক মূল্যে ফারাক থাকে। তার মানে এই নয়, এতে দুর্নীতি হচ্ছে। ইউপিএ জমানার টানা ১৮ মাস ডবল ডিজিটে থেকেছে মূল্যবৃদ্ধি। এটি স্লোগানের বিষয় নয়, পরিসংখ্যানের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy