E-Paper

শুধু গোল করে নয়, সমাজসেবাতেও ছাপ রাখতে চান ফাজ়িলা

সদ্য সমাপ্ত মেয়েদের সাফ ক্লাব চ‌্যাম্পিয়নশিপে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে বিধ্বংসী ছন্দে ছিলেন ফাজ়িলা। দল যেখানে করেছে ১৬ গোল, সেখানে তিনি একাই নয় বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছেন।

সুতীর্থ দাস

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:০০
ফাজ়িলা ইকওয়াপুট।

ফাজ়িলা ইকওয়াপুট। — ফাইল চিত্র।

ছোট থেকেই ফুটবল খেলতে ভালাবসত মেয়েটি। সেই সঙ্গে তাঁর মনে কাজ করত সমাজচেতনার ভাবনাও। সমাজের জন‌্য কিছু করতে হবে। কঠিন শৈশবের মধ‌্যেও উপলব্ধি করেছিলেন আমি নয়, আমরায় বিশ্বাস রাখতে হবে। তাই বোধ হয়, উগান্ডার মতো আফ্রিকার পিছিয়ে পড়া দেশ থেকে উঠে এসে বিশ্ব ফুটবলে ছাপ রাখার সাহস দেখিয়েছেন ফাজ়িলা ইকওয়াপুট। শুধু ফুটবলার হয়ে জীবন কাটানো নয়, ফাজ়িলার দু’চোখে রয়েছে সমাজ গড়ার স্বপ্নও।

বাইরে থেকে শান্ত, ভদ্র, নম্র স্বভাবের। কিন্তু পায়ে বল গেলে তাঁর থেকে বিপজ্জনক বোধ হয় আর কেউ নেই। শেষ দু’টি আইডব্লিউএলে (২০২৩-’২৪ ও ২০২৪-’২৫) গোকুলম কেরলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করে সোনার বুট জিতেছেন। উগান্ডার প্রথম ফুটবলার হিসেবে খেলেছেন মেয়েদের উয়েফা চ‌্যাম্পিয়ন্স লিগে। শুধু অংশগ্রহণ করাই নয়, কাজাখস্তানের ক্লাব বিক কাজ়ুগিরটের হয়ে চারটি গোল রয়েছে। তার মধ‌্যে একটি আবার বার্সেলোনার বিরুদ্ধে। যে ক্লাবেই খেলেছেন কোচের অন‌্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন। উগান্ডার জাতীয় দলের জার্সিতেও জিতেছেন একাধিক পুরস্কার। তাঁর পরিসংখ‌্যানের খতিয়ান দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ‌্য।

সদ‌্য সমাপ্ত মেয়েদের সাফ ক্লাব চ‌্যাম্পিয়নশিপে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে বিধ্বংসী ছন্দে ছিলেন ফাজ়িলা। দল যেখানে করেছে ১৬ গোল, সেখানে তিনি একাই নয় বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নাসরিন স্পোর্টস অ‌্যাকাডেমির বিরুদ্ধে হ‌্যাটট্রিক সহ পাঁচ গোল করেছেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে হ‌্যাটট্রিকের কীর্তিও তাঁর নামের পাশে স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা। সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে পেয়েছেন সোনার বুট। সবচেয়ে দামি ফুটবলার হয়ে সোনার বলও রয়েছে তাঁর দখলে।

চোখের সামনে খাতা ধরে এত রেকর্ডের কথা বলতেই উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ে ফাজ়িলার কণ্ঠে। উগান্ডার স্ট্রইকার সুদূর নেপাল থেকে আনন্দবাজারকে বলেছেন, “একজন স্ট্রাইকারের প্রধান কাজ তো গোল করা। আমি সেটাই করছি। যত গোল করি, তত আনন্দ হয়। আরও গোল করতে চাই।” অবসর সময়ে গান শুনে ও ভলিবল খেলে কাটে ফাজ়িলার।

না, কথায় তেমন মশলা নেই। কিন্তু কাজে রয়েছে এবং সেটা নীরবেই জানান দেয়। শৈশব থেকেই সংগ্রামের সঙ্গে প্রত‌্যেক মুহূর্তে তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে। ফুটবল যখন খেলতে শুরু করেন, কোনও কোচের সাহচর্য পাননি। মেয়েরা খেলায় তেমন আগ্রহ দেখাত না। তাই ছেলেদের সঙ্গেই চামড়ার গোলক নিয়ে মহড়া চলত। সেই ছেলেরাই এক দিন তাঁর বাবাকে জানায় মেয়ের প্রতিভার কথা। বাবার উৎসাহেই ফুটবলকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবেন ফাজ়িলা।

সেই কষ্টের দিনগুলি কিন্তু ভোলেননি ফাজ়িলা। ভবিষ‌্যতের আরও তারকা যাতে উগান্ডা থেকে উঠে আসে, তার জন‌্য একটি এনজিও চালান— নাম ‘দ‌্য ফাজ়িলা ইনিশিয়েটিভ’। পিছিয়ে পড়া ছেলে ও মেয়েদের সাধ‌্যমতো সাহায‌্য করেন। ফুটবলার হয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরেই তিনি এই উদ‌্যোগ নেন। এমনকি সাফের পুরস্কার মূল‌্য থেকে প্রাপ্ত অর্থের পুরোটাই তাঁর এনজিওতে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। অগণিত লাল-হলুদ সমর্থকদের পাশাপাশি তাঁর নিজের করা গোলও উৎসর্গ করেছেন এনজিও-র মেয়েদের। সেই প্রসঙ্গে বলছিলেন, “ফুটবলার না হলে হয়তো সমাজসেবিকাই হতাম। ছোট থেকেই আমার মনে এনজিও চালানোর স্বপ্ন ছিল। ওদের সাহায‌্য করে আমি হয়তো আর্থিক ভাবে লাভবান হব না, কিন্তু মানসিক ভাবে নিজেকে অনেকটা সমৃদ্ধ করতে পারব।”

দু’মরসুম গোকুলম কেরলের জার্সিতে খেলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পরেও কেন ইস্টবেঙ্গলে এলেন? এ ক্ষেত্রে কোচ অ‌্যান্টনি অ‌্যান্ড্রুজ়েকেই কৃতিত্ব দিলেন ফাজ়িলা। তাঁর কথায়, “ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ঐতিহ‌্য, ক্লাব-অন্ত প্রাণ সমর্থকদের কথা আমি শুনেছি। অ‌্যান্টনি ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়ে আসার পরে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এক মুহূর্তও অন‌্য কিছু চিন্তা করিনি। গোকুলমেও ওর প্রশিক্ষণে আমরা আইডব্লিউএল জিতেছিলাম। ওর সঙ্গে আমার বোঝাপড়া যথেষ্ট ভাল। তাই ইস্টবেঙ্গলে সই করলাম।” এর পরে বালিকার ভঙ্গিতে হেসে বলে দিলেন, “এএফসিতে যোগ‌্যতা অর্জন না করতে পারায় খুব খারাপ লেগেছিল। সাফে কিন্তু সমর্থকদের ক্ষোভ মিটিয়ে দিয়েছি। বুধবার থেকে আইডব্লিউএল শুরু হচ্ছে। ক্লাবকে সেই খেতাব দেওয়াই এ বার আমার লক্ষ‌্য।”

নম্র, ভদ্র স্বভাবের মেয়ের কণ্ঠে ফের মশালের আগুন!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

East Bengal Women Football Team India Women Football

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy