ঘন কুয়াশায় এক লাইনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পরপর দূরপাল্লার ট্রেন। কখন আবার ট্রেনের চাকা গড়াতে শুরু করবে, কেউ জানেন না!
এ ছবি দেখতে দেখতে অধৈর্য হয়ে উঠছেন যাত্রীরা। বেলা যত বাড়ছে, সাধারণ মেল-এক্সপ্রেসের কামরার আলো আর শীতাতপ যন্ত্রগুলি হয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অথবা কাজ করছে অতি ধীর গতিতে। চোখের সামনে বেসিনে মুখ ধোওয়ার জল, বাথরুমের জল ফোঁটা ফোঁটা হতে হতে মিলিয়ে যাচ্ছে। অথবা, দুর্গন্ধ আর নোংরার দাপটে সেখানে ঢোকা যাচ্ছে না।
পরিস্থিতিটা আর মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ যাত্রীরা। প্যান্ট্রি কার-এ খাবার নেই। মিলছে না পানীয় জল। এমনকী খাবার বিক্রির জন্য কোনও হকার পর্যন্ত নেই। টিটি-র তো দেখা মেলাই ভার! বাচ্চারা খিদেয় চেঁচাচ্ছে...।
এখন উপায়!
প্রতি বছর শীতের চেনা ছবি এটা। কুয়াশায় মাঝপথে কোথাও ট্রেনের চাকা আটকে গেলে পরিষেবা উধাও হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি এড়াতে গত দু’বছর এই সময়ে প্রচুর ট্রেন বাতিল করেছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতে রেলের আয় কমে গিয়েছে। এ বছর তাই খুব কম সংখ্যক ট্রেনই বাতিল হয়েছে। আর তাতে বিপত্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। একই লাইনে পর পর ট্রেন দাঁড়িয়ে। এ এক নতুন রেলজটের ছবি!
প্রশ্ন উঠেছে, এ সব দেখেও কি রেলকর্তাদের ঘুম ভাঙে না?
দুর্নাম ঘোচাতে এ বার কুয়াশায় যাতে কিছুটা গতি বাড়িয়ে ট্রেন চালানো যায়, তার জন্য তার ইঞ্জিনে বসানে হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি। তবে সেটা এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। পাশাপাশি পরিষেবার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গড়েছে রেলবোর্ড।
দূরপাল্লার ট্রেন আটকে পড়লে যাত্রীরা কেন পরিষেবা পাচ্ছেন না— সেটাই খতিয়ে দেখার কথা ওই কমিটির। রেলবোর্ড সূত্রের খবর, কিছু দিনের মধ্যেই তারা রিপোর্ট দেবে। আগামী বছর থেকে কুয়াশার সময় এই ধরনের সমস্যা মেটাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়— তার সুপারিশও থাকবে রিপোর্টে।
রেলের আবার একটি কমিটি তৈরির কথা শুনে যাত্রীদের কটাক্ষ, ‘‘গত কয়েক বছরে কত কমিটিই তো গড়া হল! সুপারিশও হল গুচ্ছ গুচ্ছ। কিন্তু কোথায় কী! অবস্থা সেই ‘ন যযৌ, ন তস্থৌ’। আরও একটা কমিটি গড়ে যাত্রী-পরিষেবার হাল কতটা ফিরবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’’
রেল কর্তাদের একাংশও মনে করেন, কমিটি রিপোর্ট দিলেই যাত্রী পরিষেবার উন্নতি হবে, এমন ভাবার কারণ নেই। তাঁরা বলছেন, ‘‘মুঘলসরাই থেকে নয়াদিল্লি পর্যন্ত পরিকাঠামো যত দিন ঠিক করা হবে না, তত দিন কুয়াশার সময় ট্রেনের এই রোগ থাকবেই।’’ রেল কর্তাদের বক্তব্য, পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজ চলছে। তাই এখনই ট্রেন বাতিল করা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই।
রেলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, নতুন কমিটি কিছু দিন বাদে রিপোর্ট দিলে কী হবে? তার কোনও উত্তর নেই রেল কর্তাদের কাছে। সব সেই আবহাওয়া ভরসা! কুয়াশা কম থাকলে ট্রেনের দেরি কমবে। তখন পরিষেবারও ঘাটতি কিছুটা কমে যাবে। কিন্তু গত আট-দশ বছর ধরে শীতের সময় লাগাতার দু’মাস ধরে গোলমাল দেখেও কেন কোনও ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে রেলের অন্দরে তো বটেই যাত্রীদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যাত্রীদের বক্তব্য, ‘‘এর পরেও রেল ‘ফ্লেক্সি ফেয়ারের’ নাম করে বেশি টাকা পকেটে পুরবে! যাত্রীদের পাওনার ভাঁড়ার তো সেই শূন্যই থাকে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy