Advertisement
E-Paper

সময় নিয়ে গোঁজামিল নয়, জানাল রেল বোর্ড

রেলের এই ‘লোকঠকানো কারবার’ নিয়ে সোশ্যাল সাইটে বিস্তর লেখালেখির পরে এ বার টনক নড়েছে রেল বোর্ডের। তাদের নির্দেশ, ওয়েবসাইটের তথ্যে কোনও গোঁজামিল দেওয়া চলবে না। ট্রেন যেমন যেমন চলবে, সেই তথ্যই প্রকাশ করতে হবে ওয়েবসাইটে।

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৩০

ছেলে ফিরছে লখনউ থেকে। মোবাইলে রেলের ওয়েবসাইট খুলে ট্রেনের গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছিলেন বেলঘরিয়ার তিমির দাস। মাঝরাতে ওয়েবসাইট খুলে তিনি হতবাক। তিনি কোনও ভাবে পোশাক পরে অ্যাপ ক্যাব ডেকে তড়িঘড়ি পৌঁছলেন হাওড়া স্টেশনে। কারণ ওয়েসাইটের তথ্য অনুযায়ী তত ক্ষণে স্টেশনে ট্রেন ঢুকে যাওয়ার কথা।

কিন্তু তাড়াহুড়োই সার। স্টেশনে পৌঁছে তিমিরবাবু জানতে পারলেন, ওই ট্রেনের হাওড়ায় পৌঁছতে আরও অন্তত ছ’ঘণ্টা বাকি!

শুধু তিমিরবাবু নন, রেলের ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য মেনে চলতে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন অনেক যাত্রীই। বাবা-মায়ের পিণ্ড দিয়ে গয়া স্টেশনে ট্রেন ধরতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হন বেহালার শখেরবাজারের কমল বন্দ্যোপাধ্যায়। ওয়েবসাইটের তথ্য দেখে তড়িঘড়ি হোটেল থেকে বেরিয়ে সপরিবার কমলবাবু পৌঁছে গিয়েছিলেন গয়া স্টেশনে। ওয়েবসাইটের তথ্য বোকা বানিয়ে দিয়েছ তাঁকে। শীতের মধ্যে সারা রাত প্ল্যাটফর্মেই কাটাতে হয়েছে তাঁদের।

রেলের এই ‘লোকঠকানো কারবার’ নিয়ে সোশ্যাল সাইটে বিস্তর লেখালেখির পরে এ বার টনক নড়েছে রেল বোর্ডের। তাদের নির্দেশ, ওয়েবসাইটের তথ্যে কোনও গোঁজামিল দেওয়া চলবে না। ট্রেন যেমন যেমন চলবে, সেই তথ্যই প্রকাশ করতে হবে ওয়েবসাইটে।

রেল সূত্রের খবর, বছরভর ট্রেন দেরিতে চললেও রেলের পাঠানো তথ্যে মোটের উপরে সময়ানুবর্তিতার ছবিই ফুটে উঠত এত কাল। সেই অনুযায়ী বার্তা যেত ওয়েবসাইটে। ফলে রেলের ‘পাংচুয়ালিটি রিপোর্ট’-এ সময়ানুবর্তিতার হার ৯০-৯৫ শতাংশে ঘোরাফেরা করত। যদিও স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা বা সফররত যাত্রীদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তথ্যে গরমিল কেন? রেল দফতর সূত্রের খবর, একটি ট্রেন দেরিতে চলেছে বলে গণ্য হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। সেই শর্ত অনুযায়ী একটি ট্রেন ছাড়তে নানা কারণে দেরি হলেও গন্তব্যে পৌঁছতে যদি ১৫ মিনিটের বেশি দেরি না-হয়, সেটা ‘লেট’ বলে বিবেচ্য হবে না। মাঝপথে গতি বাড়িয়ে অনেক ট্রেন পরিস্থিতি সামাল দেয়। কিন্তু রেলের অন্দরের খবর, সময়ানুবর্তিতা ভাল দেখানোর জন্য বিভিন্ন ডিভিশন তথ্যে কারচুপি করত। কোনও ট্রেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরি করলেও তাকে ঘুরেফিরে ওই ১৫ মিনিটের সীমার মধ্যেই দেখানো হত। কিন্তু হাটে হাঁড়ে ভেঙে দিয়েছে ফেসবুক আর টুইটার।

অনেক যাত্রী রেলের ওয়েবসাইটে দেওয়া ট্রেনের সময় এবং অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যের ‘স্ক্রিন-শট’ তুলে এবং বাস্তবের সঙ্গে তার ফারাক জানিয়ে সরাসরি রেলমন্ত্রীকে সেই ছবি টুইট করেছেন। অভিযোগ করা হয়েছে ফেসবুকেও। তার পরেই নতুন নির্দেশ জারি করেছে রেল বোর্ড। রেলের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “এর ফলে বহু ক্ষেত্রেই সময়ানুবর্তিতার সূচক ৫০ শতাংশের নীচে এসে ঠেকতে পারে।” নতুন নির্দেশের পরে অন্যতম ব্যস্ত ডিভিশন ইলাহাবাদ এবং মোগলসরাইয়ে ওই হার ২০.৪২ এব‌ং ২৫.৫২ শতাংশে ঠেকেছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। হাওড়া এবং শিয়ালদহে ওই হার যথাক্রমে ২২.৬ এবং ৩৮.৬২ শতাংশে নেমে এসেছে।

‘‘দেরি নিয়ে সমালোচনা হলেও মিথ্যে বলার দায়ে এ বার অন্তত আমাদের মুখ পুড়বে না,’’ বলছেন অনেক রেলকর্তা।

Railway Website Indian Railway Time Table Railway Board Passengers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy