Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্বের দরবারে আর্থিক মর্যাদা চায় কেন্দ্র, পিছপা সংস্কারে

রেলভাড়ায় সেই রাজনীতির বেড়ি

সরকার গড়েই এক মাসের মাথায় রেলের ভাড়া বাড়িয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। রোগ সারাতে প্রথম দাওয়াই সময়ে পড়লেও, দ্বিতীয়টি পড়বে না বলে আশঙ্কা খোদ রেল মন্ত্রকেরই। গত জুন মাসে রেলের পণ্যমাশুল ও যাত্রিভাড়া এক ধাক্কায় প্রায় ১৪ শতাংশ বাড়িয়েছিল মোদী সরকার। যুক্তিতে বলা হয়েছিল, বিপুল লোকসানে চলা রেলকে বাঁচাতে ওই কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না। একই সঙ্গে শাসক শিবিরের যুক্তি ছিল, গত এপ্রিলেই ওই ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইউপিএ নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৪
Share: Save:

সরকার গড়েই এক মাসের মাথায় রেলের ভাড়া বাড়িয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। রোগ সারাতে প্রথম দাওয়াই সময়ে পড়লেও, দ্বিতীয়টি পড়বে না বলে আশঙ্কা খোদ রেল মন্ত্রকেরই।

গত জুন মাসে রেলের পণ্যমাশুল ও যাত্রিভাড়া এক ধাক্কায় প্রায় ১৪ শতাংশ বাড়িয়েছিল মোদী সরকার। যুক্তিতে বলা হয়েছিল, বিপুল লোকসানে চলা রেলকে বাঁচাতে ওই কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না। একই সঙ্গে শাসক শিবিরের যুক্তি ছিল, গত এপ্রিলেই ওই ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইউপিএ নেতৃত্ব। কিন্তু লোকসভা ভোটের কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। তাই এখন ক্ষমতায় এসেই রেলকে বাঁচাতে ওই ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার। হিসেব অনুযায়ী, গত এপ্রিলের ছ’মাস পরে ডিজেলের দামের ভিত্তিতে নতুন করে ভাড়ার পুনর্বিন্যাস করার কথা রেল মন্ত্রকের। সেই হিসেবে আগামী মাস থেকে নতুন ভাড়া চালু হওয়ার কথা। কিন্তু সেই সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলেই মনে করছেন রেলের কর্তারা। মূল কারণটা সেই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাই।

বর্তমানে দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিটের দামের ত্রিশ শতাংশ জ্বালানি খরচ হিসাবে ধরা হয়। জ্বালানি খরচ বা ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতি ছ’মাস অন্তর পণ্যমাশুল ও যাত্রিভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেল মন্ত্রক। জ্বালানির দামের সঙ্গে পরিবর্তনের সঙ্গে ভাড়া বা মাশুলের যে অংশ বদলায় তাকে রেলের পরিভাষায় ‘ফুয়েল অ্যাডজাস্টমেন্ট কম্পোনেন্ট’ বলা হয়। দীনেশ ত্রিবেদী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন পেট্রোপণ্যের বাজার দরের সঙ্গেই এফএসি বাড়ানো বা কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই মতো প্রতি এপ্রিল ও অক্টোবর মাস থেকে নতুন ভাড়া প্রযোজ্য হওয়ার কথা। কিন্তু আজ মন্ত্রকের একশো দিনের কাজের খতিয়ান দিতে গিয়ে আপাতত যাত্রিভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেকটাই খারিজ করে দিলেন রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া। নিজের বক্তব্যে আজ তিনি বুঝিয়ে দেন, এ মুহূর্তে ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনা কম। তাঁর কথায়, “খুচরো ডিজেলের দাম বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু রেল যেহেতু এক লপ্তে ডিজেল সংগ্রহ করে তাই কেন্দ্র সেই খাতে বেশ কিছুটা ছাড় দিয়েছে।” কার্যত যা রেলকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়ারই নামান্তর। ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে গৌড়ার বক্তব্য, “এখনই এ নিয়ে রেল মন্ত্রক কিছু ভাবছে না।”

অথচ, ক্ষমতায় এসে সংস্কারমুখী হওয়ার পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তাছাড়া রেলের ভাড়া সংক্রান্ত ক্ষেত্রটি প্রায় এক দশকের বেশি সংস্কারের মুখ দেখেনি। সেই দশা কাটিয়ে এক ধাক্কায় রেলে পণ্য ও যাত্রিভাড়া ১৪ শতাংশ বৃদ্বির সাহসী সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ডিজেলের দাম বাড়লে ছ’মাস পরে ফের ভাড়া বাড়ানো হবে। দামও বেড়েছে ডিজেলের। কিন্তু নতুন সরকারের একশো দিনের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে সংস্কারের সাহসী অভিমুখ থেকে কিছুটা হলেও সরে আসতে বাধ্য হয়েছে রেল মন্ত্রক।

কেন?

কারণ নানাবিধ। বিজেপি সূত্রের মতে, ক্ষমতায় এসেই এক মাসের মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত মোটেই ভাল ভাবে নেননি দেশবাসী। ভাড়া বাড়িয়ে কী ভাবে মানুষের ভাল দিন আসতে পারে সাধারণ মানুষের এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে দলীয় নেতাদের। বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা বলছে, ভাড়া বাড়ার পর জনমানসে দলের জনপ্রিয়তার পারদ এক ধাপে অনেকটা নেমে গিয়েছে। চলতি বছরের শেষে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীরের মতো রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধির মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়তে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছে বিজেপি শিবির। ফলে আপাতত ওই বিষয়ে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে তারা।

তাছাড়া ভাড়া বাড়ার পরে ট্রেনে যাত্রী পরিবহণও ধাক্কা খেয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে রেল। বিশেষ করে যাত্রী কমেছে বাতানুকূল শ্রেণিগুলিতে। গত এক বছরে বাতানুকূল শ্রেণিতে যে ভাবে যাত্রিভাড়া বেড়েছে তার প্রেক্ষিতে কম ভাড়ার বিমানগুলির সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিতে হচ্ছে রেলকে। রেলের এক কর্তার কথায়, “সস্তার বিমান সংস্থাগুলি যে ভাবে উৎসবের মরসুমে ছাড় দেওয়া শুরু করেছে তা আমাদের কাছে যথেষ্ট চিন্তার কারণ।” বর্তমানে দিল্লি-শিয়ালদহ রাজধানী ট্রেনে দ্বিতীয় বাতানূকুল শ্রেণির ভাড়া প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি। আগে কাটলে সস্তার টিকিট-এই শর্তে বিমান সংস্থাগুলি ভাড়ায় ছাড় দেওয়ায় সম দূরত্বের বিমান ভাড়া এসে দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার হাজার টাকার কাছাকাছি।

মন্ত্রকের সমীক্ষা বলছে, পুজো বা দিওয়ালির সময়ে অন্য বার টিকিটের যা চাহিদা থাকে, চলতি বছরের চাহিদা তার বেশ কিছুটা কম। বিশেষ করে বাতানুকূল শ্রেণিতে। উল্টো দিকে ক্রমশ চাপ বাড়ছে স্লিপার ক্লাসে। চালাতে হচ্ছে অতিরিক্ত কোচ। এতে উল্টে বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে রেলকে। অন্য দিকে পণ্য পরিবহণের চিত্রটিও আশানুরূপ নয়। ফের পণ্য ভাড়া বাড়লে ব্যবসা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE