Advertisement
E-Paper

পলকে ফুরোবে না টিকিট, লক্ষ্মণরেখা রেলের

গতি বাড়িয়ে নয়। বরং গতি বেঁধে দিয়ে টিকিট কাটা নিয়ে মানুষের সমস্যা মেটাতে তৎপর হল সুরেশ প্রভুর রেল! আগে ছিল লম্বা লাইনের বাধা। আগের রাত থেকে লাইন দিয়েও, কাউন্টারে পৌঁছনোর আগেই টিকিট শেষ হয়ে যেত। এখন ইন্টারনেটের যুগে নির্ধারিত সময়ে লিঙ্ক চালু হতেই নিমেষে ফুরোচ্ছে টিকিট!

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৩

গতি বাড়িয়ে নয়। বরং গতি বেঁধে দিয়ে টিকিট কাটা নিয়ে মানুষের সমস্যা মেটাতে তৎপর হল সুরেশ প্রভুর রেল!

আগে ছিল লম্বা লাইনের বাধা। আগের রাত থেকে লাইন দিয়েও, কাউন্টারে পৌঁছনোর আগেই টিকিট শেষ হয়ে যেত। এখন ইন্টারনেটের যুগে নির্ধারিত সময়ে লিঙ্ক চালু হতেই নিমেষে ফুরোচ্ছে টিকিট! আগে থেকে ওত পেতে থেকেও লাভ হচ্ছে না। কম্পিউটার ও নেট ব্যবহারে যাঁরা বেশ দড়, তাঁদের কাছেও মরীচিকা হয়ে থেকে যাচ্ছে সংরক্ষিত টিকিট। নাম আসছে ‘ওয়েটিং’ তালিকায়।

এই সমস্যা কাটাতেই প্রতিটি টিকিট কাটার জন্য সময়ের একটি লক্ষ্মণরেখা টানল রেল। ন্যূনতম ৩৫ সেকেন্ড। অর্থাৎ, একটি টিকিট কাটতে ওই সময়টুকু দিতেই হবে কম্পিউটারকে। তা সে রেল কাউন্টারের কর্মীই কাটুন কিংবা সাধারণ মানুষ অথবা দালাল। রেল বলছে, টিকিট কাটার ক্ষেত্রে দালালরাজের রমরমা ঠেকাতেই এই নিয়ম চালু হয়েছে। এতে আদতে উপকৃত হবেন আমজনতাই।

কী কারণে এই পদক্ষেপ?

এক রেলকর্তা বলছেন, ‘‘কাউন্টার খোলার পরপরই কম্পিউটারে গোটা ফর্ম পূরণ করার পরে সাধারণ মানুষ যখন তা রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজিম কর্পোরেশনের (আইআরসিটিসি) সাইটে তা জমা (সাবমিট) করছেন, তত ক্ষণে দেখা যাচ্ছে সব আসন বুকিং হয়ে গিয়েছে। ফলে ‘ওয়েটিং’ তালিকায় চলে যাচ্ছেন শ’‌য়ে শ’‌য়ে মানুষ।’’ যেমন বিধানগরের বাসিন্দা অমরেন্দ্র পাল, দিল্লির সোমা মিত্র বা গুয়াহাটির মৃগাঙ্ক ফুকন। তাঁরা কাউন্টার খোলার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারে আসন সংরক্ষণের আবেদন জানিয়েও নিশ্চিত টিকিট পাননি। ওয়েবসাইটে গিয়ে ট্রেনের আসন সংরক্ষণের ফর্মে সব কিছু লিখে তাঁরা যখন মাউসে শেষ ক্লিক করেছেন তত ক্ষণে ট্রেনের আসন সব শেষ। ‘ওয়েটিং’ তালিকায় নাম উঠে গিয়েছে তাঁদের।

শুধু এই তিন জন নন, গত ক’বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ একই অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন রেলকে। তার ভিত্তিতে টিকিট কাটার পদ্ধতি-সহ গোটা প্রক্রিয়াটি নিয়ে তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেন রেলমন্ত্রী প্রভু। সেই তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে রেলকর্তাদের। তদন্তে দেখা গিয়েছে, দেশ জুড়ে একাধিক দালাল-চক্র মিলিত ভাবে কাজ করছে এর পিছনে। এই চক্র এমন একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে যার মাধ্যমে কাউন্টার খোলার দু-তিন সেকেন্ডের মধ্যে কাজ হাসিল করে ফেলা যাচ্ছে।

কী ভাবে কাজ করছে দালাল চক্র?

রেলকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ইন্টারনেটে আসন সংরক্ষণের সময় ফর্ম ভর্তি করার জন্য যাত্রীদের যে সময় প্রয়োজন হয়, সেটা ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আগে থেকে লিখে রেখে দিচ্ছে দালালরা। এর পরে লিঙ্ক চালু হওয়া মাত্রই সেটি সাঁটিয়ে (পেস্ট) দিচ্ছেন আইআরসিটিসি-র আসন সংরক্ষণের ‘পেজ’-এ। ফলে দেশ জুড়ে সকাল ৮টায় সংরক্ষণের লিঙ্ক খোলামাত্রই দালাল-চক্রের লোকজন কম্পিউটারের মাধ্যমে ট্রেনের বেশির ভাগ আসন সংরক্ষিত করে নিচ্ছে। সেখানে সাধারণ মানুষ কম্পিউটারে আইআরসিটিসি ‘সাইট’ খুলে সংরক্ষণের ফর্ম ভর্তি করতে করতেই কাটিয়ে ফেলছেন এক মিনিট বা তার বেশি। তত ক্ষণে দালালদের হাতে ট্রেনের অধিকাংশ টিকিট।

রেল সূত্রের খবর, কম্পিউটার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আইআরসিটিসি-র মতো ‘সাইট’-এ আসন সংরক্ষণের যে ফর্ম ও অন্য বিষয়গুলি রয়েছে, সেগুলি যাত্রীদের লিখে ভর্তি করতে কমপক্ষে ৩৫ সেকেন্ড সময় লাগে। ইন্টারনেট ব্যবস্থা যেখানে নেই সেখানেও সমীক্ষা চালিয়ে রেল দেখেছে, হাতে লেখা সংরক্ষণের ফর্ম কাউন্টারে জমা দিয়ে টিকিট পেতেও প্রায় একই সময় লাগে। এক রেলকর্তা বলেন, ‘‘সে জন্যই একটি টিকিট কাটার জন্য ন্যূনতম ৩৫ সেকেন্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে কাউন্টার খোলার আগে সংরক্ষণের ফর্ম ভরে রাখলেও কেউ নাগাড়ে একাধিক টিকিট কাটতে পারবেন না। দ্বিতীয় টিকিটের জন্য ৩৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করতেই হবে।’’

আইআরসিটিসির সাইটে টিকিট কাটতে প্রতি বার ‘লগ-ইন’ করার সময়ে পেরোতে হয় একটি ধাপ (ক্যাপচা)। ওই ব্যবস্থাই ধরতে পারে, কোনও ব্যক্তি আবেদন করছেন, নাকি যান্ত্রিক ভাবে তৈরি হচ্ছে টিকিট কাটার আবেদন। এই ধাপ পেরিয়ে ৩৫ সেকেন্ডের আগে দ্বিতীয় টিকিট কাটা যাবে না।

শুধু এই নতুন ব্যবস্থা চালু করাই নয়, আইআরসিটিসি-র সাইটে কোনও হ্যাকার ঢুকছে কি না বা ভাইরাস ছাড়া হচ্ছে কি না, তার হদিস পেতেও নজরদারি ও নিয়মিত অডিট-এর ব্যবস্থা করছে রেল। রেলকর্তারা বলছেন, ইন্টারনেটের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী দিনে কম্পিউটারেই মানুষ টিকিট কাটবেন বেশি। আইআরসিটিসি এই ব্যবস্থা চালু করেছিল ২০০২-এ। প্রথম দিনে অনলাইনে টিকিট বিক্রি হয়েছিল ২৯টি। এখন সেটাই বেড়ে হয়েছে
১৩ লক্ষ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy