Advertisement
E-Paper

গেরুয়া ঝড়েও অবিচল দীনেশ তনয় রাজদীপ

পিতার শূন্য স্থানে উপনির্বাচনে জিতে প্রথম বিধায়ক হয়েছিলেন রাজদীপ গোয়ালা। বিধানসভার ব্যাপারটা ঠিক মতো বুঝে ওঠার আগেই ফের নির্বাচন।

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৭

পিতার শূন্য স্থানে উপনির্বাচনে জিতে প্রথম বিধায়ক হয়েছিলেন রাজদীপ গোয়ালা। বিধানসভার ব্যাপারটা ঠিক মতো বুঝে ওঠার আগেই ফের নির্বাচন। আবার লড়াই। তখন চতুর্দিকে পরিবর্তনের হাতছানি। যে বাগান-ভোটের অটুট সমর্থনে পিতা দীনেশপ্রসাদ গোয়ালা সাত বার বিধায়ক হয়েছিলেন, সেখানেও গেরুয়া বাহিনীর শক্ত থাবা বসানোর গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল।

রাজদীপবাবুর দাবি, কিন্তু তিনি মোটেও আতঙ্কে ভোগেননি। জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন। এ বার অজিত সিংহের উধারবন্দে কংগ্রেসের বাগান-ভোট তছনছ হয়ে গিয়েছে। হেরে গিয়েছেন গৌতম রায়, সিদ্দেক আহমদের মত পিতৃস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সেখানে ব্যতিক্রম রাজদীপের লক্ষ্মীপুর বা লক্ষ্মীপুরের রাজদীপ। ভোটের ব্যবধান আগের চেয়ে সামান্য হলেও বাড়াতে পেরেছেন তিনি।

আসলে লক্ষ্মীপুর আসনে গোয়ালা পরিবার এতটাই নিরাপদ যে দলের ভিতরে-বাইরে কোনও শক্তি দীনেশবাবুকে কখনও পরাস্ত করতে পারেনি। ফলে তিনি উপত্যকার বাকি ছয় আসনেও ছড়ি ঘুরিয়েছেন। আসলে বিরোধী দল নয়, তাঁর মূল লড়াই ছিল দলেরই নেতা সন্তোষমোহন দেবের সঙ্গে। দেব পরিবার যেমন দীনেশবাবুকে কখনও জেলার নেতা হয়ে উঠতে দেয়নি, তেমনই তিনিও সর্বভারতীয় নেতা রানাদাকে ঘরের মাঠে অবিরাম নাকানিচোবানি খাইয়েছেন। রাস্তাঘাট নিয়ে চরম বদনাম থেকে বীথিকা দেবীকে উদ্ধার করতে কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে ৬৩ কোটি টাকা মঞ্জুর করিয়েছিলেন সন্তোষবাবু। কিন্তু দীনেশ গোয়ালার বাগড়ায় সে টাকার কাজ সুষ্ঠুভাবে হতে পারেনি। কেন্দ্রে মন্ত্রিত্বের সুবাদে শিলচরের জন্য ‘মাস্টার ড্রেনেজ প্রকল্প’ এনেছিলেন সন্তোষ দেব। দীনেশবাবু সে কাজও হতে দেননি।

কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম সেই বিবাদ ভুলে একে অপরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। তাই রাজদীপবাবু তাঁর দু’বারের জয়ের পিছনে প্রয়াত পিতার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সাংসদ সুস্মিতা দেবের নাম বারবার উল্লেখ করেন।

কোন রসায়নে পারিবারিক শত্রুতা ভুলে দু’জন এত কাছাকাছি? রাজদীপ গোয়ালার জবাব, ‘‘জেঠুর (রানা দেব) জায়গায় দিদি (সুস্মিতা) প্রার্থী হতেই বাবা তাঁকে জেতানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেই থেকেই দুই পরিবার কাছাকাছি। আমি মনে করি, উপত্যকার রাজনীতিতে দিদির নেতৃত্বের বড় প্রয়োজন। তিনিও আমাকে তুলে ধরতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না।’’ সুস্মিতা দেবীর চেষ্টার যে ত্রুটি নেই, তা রাজদীপবাবুর পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান নিযুক্তি থেকেই স্পষ্ট। দল তিনজনের নাম দিয়েছিল এই পদের জন্য। সুস্মিতা দেবের পরামর্শে সে তালিকায় রাজদীপ গোয়ালাও স্থান পেয়েছিলেন। এর পরই অধ্যক্ষ রঞ্জিত দাস ইকনমিকস ও ফিনান্সের ছাত্র, লক্ষ্মীপুরের তরুণ বিধায়ককেই এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের জন্য বেছে নেন।

রাজদীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পদ। দায়িত্বও বিরাট। তবে সে জন্য লক্ষ্মীপুরের প্রতি বিন্দুমাত্র গাফিলতি হবে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নিজের মহকুমার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নিয়মিত মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলছি। পরিমল শুক্লবৈদ্য, হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে দেখা করেছি।’’ তিনি বলেন, গ্রামে রাস্তার সমস্যা তীব্র। সেগুলি ঠিকঠাক করার জন্য প্রস্তাব পত্র তৈরি করা হচ্ছে। জাতীয় সড়কও বেহাল। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ রোজগার যোজনায় বহু গরিব মানুষ উপভোক্তা তালিকার বাইরে রয়ে গিয়েছেন। খাদ্য সুরক্ষার কার্ড নিয়েও নানা অভিযোগ। দ্বিতীয়বার বিধায়ক হয়ে এই বিষয়গুলিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন রাজদীপ। সিঙ্গেরবন্দে নদীভাঙনের দরুন ৫০ থেকে ৬০ হাজার পরিবার ক্ষতির মুখে। ২০১৪ সালে ‘ডিটেলড প্রজেক্ট রিপোর্ট’ (ডিপিআর) তৈরি করা হয়েছে। এখনও তার মঞ্জুরি মেলেনি। তা নিয়েও ছোটাছুটি করছেন রাজদীপ।

রাজদীপের অসংখ্য অভিযোগ কেন্দ্র-রাজ্যের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে, কেন্দ্রকে তিনি সতর্ক করে দেন, তাঁদের অর্ধেক মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। আড়াই বছর পর ফের তাঁদের মানুষের কাছে যেতে হবে। ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানতে চান, কংগ্রেস আমলে এ নিয়ে প্রতিনিয়ত দোষারোপ করা হতো। মোদী শাসনে কতটা কাজ এগোল? এয়ার ইন্ডিয়া আগে শিলচর-গুয়াহাটি বিমান চালাতো। রাজদীপের প্রশ্ন, এখন সেই পরিষেবা বন্ধ কেন? তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় এসেই গেরুয়া বাহিনী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বানন্দ সোনোয়াল মুখ্যমন্ত্রীর স্পেশাল প্যাকেজের কাজগুলিও বন্ধ করে দিয়েছেন।

পাল্টা অভিযোগ গোয়ালা পরিবারের বিরুদ্ধেও রয়েছে। লাগাতার সাতবার এই আসনে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন দীনেশবাবু। রাজদীপবাবুও দু’বার জিতলেন। কতটা উন্নতি হয়েছে লক্ষ্মীপুরের? মহকুমা ঘোষণা হল, পরিকাঠামোর বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হল না! আদালত হোক আর ট্রেজারি, মানুষকে আগের মতো শিলচরেই ছুটে যেতে হয়। এ-ই কি উন্নয়ন? রাজদীপ গোয়ালা জানান, সাব-ট্রেজারির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। আগে জায়গা মিলছিল না। এখন এরও সুরাহা হয়েছে। আগামী মাস থেকেই লক্ষ্মীপুরে শুরু হচ্ছে মহকুমা আদালতের কাজ।

তাঁর দাবি, তাঁর এলাকায় কাজ হওয়ার ভাগটাই বেশি। স্টর্ম ওয়াটার ড্রেনেজ প্রজেক্টের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর পরই আরবান ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে। বললেন, ‘‘এই কাজে কেন্দ্রীয় সরকারের দেয় অর্থের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।’’

Rajdeep Goala MLA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy