Advertisement
E-Paper

ঘুষ না পেলে আইটেম সং ছাঁটার হুমকি দিতেন রাকেশ

দুষ্কৃতী দমনে বাজিরাও সিংঘমের বিশেষ সাহায্য প্রয়োজন হয় না। দারুণ সব কাণ্ড করে উত্তেজনা বা ‘কিক’ পেতেই চান দেবীলাল সিংহ। কিন্তু অজয় দেবগণ-সলমন খানের এ সব চরিত্রকে একেবারেই ছাড় দিতেন না রাকেশ কুমার। তাঁর দরবারে সলমন খান, বিদ্যা বালন, অজয় দেবগণসকলেরই ছিল এক দর। ঠিক সময়ে ছাড়পত্র পেতে হলে সেন্সর বোর্ডের এই সিইওকে ঘুষ দিতেই হত বলে অভিযোগ। টাকা না পেলে ‘আইটেম সং’ ছেঁটে দেওয়ার হুমকিও নাকি দিতেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৬
রাকেশ কুমার। ছবি: পিটিআই

রাকেশ কুমার। ছবি: পিটিআই

দুষ্কৃতী দমনে বাজিরাও সিংঘমের বিশেষ সাহায্য প্রয়োজন হয় না। দারুণ সব কাণ্ড করে উত্তেজনা বা ‘কিক’ পেতেই চান দেবীলাল সিংহ। কিন্তু অজয় দেবগণ-সলমন খানের এ সব চরিত্রকে একেবারেই ছাড় দিতেন না রাকেশ কুমার। তাঁর দরবারে সলমন খান, বিদ্যা বালন, অজয় দেবগণসকলেরই ছিল এক দর। ঠিক সময়ে ছাড়পত্র পেতে হলে সেন্সর বোর্ডের এই সিইওকে ঘুষ দিতেই হত বলে অভিযোগ। টাকা না পেলে ‘আইটেম সং’ ছেঁটে দেওয়ার হুমকিও নাকি দিতেন তিনি।

সিবিআই জানিয়েছে, গত সাত মাস এই কারবার চালানোর পরে ধরা পড়েছেন রাকেশ। তাঁকে জেরা করে সিবিআই জানতে পেরেছে, সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেতে বলিউডের প্রথম সারির প্রযোজকরাও রাকেশকে ঘুষ দিয়েছেন। জেরায় সিবিআইকে রাকেশ জানিয়েছেন,সলমন খানের ‘কিক’, বিদ্যা বালনের ‘ববি জাসুস’, অজয় দেবগণের ‘সিংহম রিটার্নস’— ছবির জন্য ঘুষ নিয়েছিলেন। রাকেশ কতটা সত্যি বলছেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানুয়ারি মাসে সেন্সর বোর্ডের সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেন রাকেশ। তারপর থেকে যে সব ছবিকে সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিয়েছে, তার তালিকা তৈরি করে এখন সিবিআই তদন্তে নামছে। কোন কোন ছবির জন্য রাকেশের আমলে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেই সব ছবির পরিচালক ও প্রযোজক কারা ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, বলিউডের প্রায় সকলেই এই দুর্নীতির কথা জানতেন। কিন্তু সব জেনেশুনেও সকলে চুপ করে ছিলেন। অবশেষে ছত্তীসগঢ়ের একটি আঞ্চলিক ছবির প্রযোজক সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই প্রযোজকের কাছে ৭০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন রাকেশ। গ্রেফতারের পর আজই রাকেশকে মুম্বইয়ের আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে তিন দিনের জন্য ফের সিবিআইয়ের হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। রাকেশ ছাড়াও সেন্সর বোর্ডের উপদেষ্টা সদস্য সর্বেশ জায়সবাল ও প্রযোজকদের হয়ে ছাড়পত্র আদায়ের এজেন্ট শ্রীপতি মিশ্রকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

রাকেশ কুমার আদতে রেলওয়ে পার্সোনেল সার্ভিস-এর অফিসার। জানুয়ারি মাসে তাঁকে তিন বছরের জন্য সেন্সর বোর্ডের সিইও-র দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভিজিল্যান্স দফতর থেকে সতর্কবার্তা পেয়ে রাকেশের উপরে নজরদারি শুরু করে সিবিআই। গত সপ্তাহেই মুম্বইতে রাকেশের কোলাবার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দশ লক্ষেরও বেশি নগদ টাকা, গয়না, ৩৩টি বিদেশি ব্র্যান্ডের ঘড়ি উদ্ধার হয়। জমিজমা, সম্পত্তি সংক্রান্ত নথিও উদ্ধার হয়েছে। কী ভাবে তিনি এই সম্পত্তির মালিক হলেন, তার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি। রাকেশের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির অভিযোগেও মামলা করা হবে। রাকেশকে সাসপেন্ড করেছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি ইন্ডিয়ার সিইও শ্রবণ কুমারকে সেন্সর বোর্ডের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তদন্তকারীরা বলছেন, সিনেমাকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সেটি বোর্ডের সদস্যরা দেখেন। কোন ছবি আগে বা পরে দেখানো হবে, তা ঠিক করতেন রাকেশ। কোনও ছবি তিন-চার দিনের মধ্যে দেখানোর ব্যবস্থা করে দিলে দেড় লক্ষ টাকা চাইতেন তিনি। সাত-আট দিনের জন্য ২৫ হাজার টাকা। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির জন্য ১৫ হাজার টাকা। প্রযোজকদের এজেন্টদের মাধ্যমেই টাকা চাওয়া হত।

বড় বাজেটের ছবির প্রযোজকরা সাধারণত ঈদ, দীপাবলির মতো সময়ে ছবি রিলিজ করাতে চান। রাকেশ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেন্সরের ছাড়পত্র আটকে রাখতেন। ক্ষতি এড়াতে বাধ্য হয়েই টাকা দিতেন প্রযোজকরা। ছত্তীসগঢ়ের ওই প্রযোজকের কাছে রাকেশের হয়ে টাকা নেন শ্রীপতি মিশ্র। আগে থেকে অভিযোগ পেয়ে ফাঁদ পেতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শ্রীপতি সিবিআইকে জানিয়েছেন, পাঁচ-ছ’বার তিনিই রাকেশকে ঘুষের টাকা মিটিয়ে এসেছেন। কখনও ৩৫ হাজার, কখনও ১ লক্ষ ২০ হাজার, এ ভাবে মোট ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। সর্বেশ জায়সবাল রাকেশের হয়ে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আদায় করেন। বাড়িতে, অফিসে বা বাইরে কোথাও রাকেশের নির্দেশ মেনে টাকা পৌঁছে দিতে হত।

rakesh kumar sensor board ceo bribe national news online national news latest news threatening item song cbi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy