Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ডি ভোটার গ্রেফতারের প্রতিবাদে মশাল মিছিল জনতা যুব মোর্চার

এনআরসি প্রক্রিয়া চলাকালীন ডি ভোটারদের (সন্দেহজনক ভোটার) ধরপাকড় বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়ে শিলচর শহরে মশাল মিছিল করল ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

এনআরসি প্রক্রিয়া চলাকালীন ডি ভোটারদের (সন্দেহজনক ভোটার) ধরপাকড় বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়ে শিলচর শহরে মশাল মিছিল করল ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা।

আজ ইটখলার দলীয় কার্যালয় থেকে মশাল হাতে মিছিল যায় প্রেমতলায়। সেখানে বক্তব্য রাখেন বিজেপির কাছাড় জেলা সভাপতি কৌশিক রাই, প্রদেশ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায়, যুব মোর্চার সভাপতি রাজেশ দাস সহ দলীয় নেতারা। সবাই ধরপাকড়ের জন্য পুলিশকে দোষারোপ করেন। আঙুল ওঠে রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের দিকেও।

একই দাবিতে আগামী কাল অবস্থান ধর্মঘটে বসবে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। হিন্দু নাগরিক সুরক্ষা সমিতিও বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে সভা করে অনশনের সিদ্ধান্ত নেয়। ক্ষুদিরামের মূর্তির পাদদেশে ১৭ অগস্ট সকাল ৮টা থেকে সন্ধে ৫টা পর্যন্ত অনশন পালন করবেন তাঁরা।

অন্য দিকে, হিন্দু লিগ্যাল সেলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও অসমের রাজ্যপাল পদ্মনাথ বালকৃষ্ণ আচার্যের কাছে স্মারকপত্র দিয়ে প্রকৃত ভারতীয়দের বিদেশি বলে ধরে নেওয়ার ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য আর্জি জানানো হয়েছে। আহ্বায়ক ধর্মানন্দ দেব ও যুগ্ম আহ্বায়ক মৃগাঙ্ক বর্মন স্মারকপত্রে লিখেছেন— নতুন সরকার যখন বাংলাদেশে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার আশ্রিতদের নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে চলেছে, তখনই এ ভাবে ডি ভোটারদের জেলে ঢোকানো দুরভিসন্ধিমূলক।

কাছাড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গায়ত্রী কোঁয়র জানান, ডি ভোটার অর্থাৎ সন্দেহভাজনদের কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সন্দেহভাজনদের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল যাদের বিদেশি বলে রায় দিয়েছে তাঁদেরই জেলে পাঠানো হচ্ছে। পুরো বিষয়টি আদালতের নির্দেশে হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে এর মধ্যে বহু মামলা যে একতরফা রায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং গ্রেফতারের পর ভারতীয় বলে প্রমাণ হচ্ছে, তা তিনি স্বীকার করে নেন। সে সব ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি, পুলিশ বা ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নোটিস পাননি বলে যে কথা বলা হয়, তা ঠিক নয়। পুলিশ অনেককে খুঁজে পায়নি, তাঁদের নামে মামলা ‘ড্রপড’ রয়েছে। কিন্তু যাঁদের একতরফা রায় হয়েছে, তাঁরা নোটিস ঠিকই পেয়েছেন। অনেকে গুরুত্ব দেননি, অনেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভয়ে অন্য ঠিকানায় চলে গিয়েছেন। দু’পক্ষের কেউ এখন রেহাই পাচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘‘একতরফা রায়ে যাঁদের বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করতেই পারেন।’’ গ্রেফতারের পরই কেন সবাই আদালতে ছোটেন, সেই প্রশ্ন তুলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পরামর্শ— আদালতের রায়ে যাঁদের বিদেশি বলে পুলিশ খুঁজছে, তাঁদের নাম-ধাম উল্লেখ করে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। সেখানে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা গ্রেফতারের আগেই ভারতীয় নাগরিকত্বের নথিপত্র দিয়ে রেহাই পেতে পারেন।

শিলচর সেন্ট্রাল জেলে বর্তমানে মোট ৭০ জন ‘বিদেশি’ বন্দি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৩ জন পুরুষ, ১৫ জন মহিলা এবং ২টি শিশু রয়েছে। কয়েক দিনে যে ধরপাকড় বেড়ে গিয়েছে, তা জেলের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। জুন মাসে বিদেশি বন্দির সংখ্যা ছিল ৩৩। ১৭ জুলাই তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জন। জেল সুপার হরেনচন্দ্র কলিতা জানান, বিদেশি বলে চিহ্নিত বন্দিরা যেমন আসছেন, তেমনি আবার আদালতে ভারতীয় বলে প্রমাণ দিয়ে ছাড়ও পাচ্ছেন। প্রতিদিন ৪-৫ জন আসছেন, ৩-৪ জন ছাড়া পাচ্ছেন। শিলচর সেন্ট্রাল জেল দক্ষিণ অসমের একমাত্র ডিটেনশন সেন্টার হওয়ায় এখানে কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও ডিমা হাসাও জেলার ধৃতরা রয়েছেন। চার জেলার সংখ্যাটি ক্রমে ১৮, ৪২, ৫ ও ৩। বিভিন্ন জায়গা থেকে লাগাতার বিদেশি বলে শনাক্তদের পাঠানোর ঘটনায় জেল কর্তৃপক্ষও চিন্তিত। কারণ আগে থেকেই জেলে ক্ষমতার অধিক বন্দিরা রয়েছেন। বিদেশি বাড়তে থাকায় ব্যবধানও বাড়ছে। জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলে ৪৩৫ জন বন্দি রাখার পরিকাঠামো রয়েছে। বর্তমানে সেখানে আটক রয়েছেন ৫৬৭ জন।

গ্রেফতারের পর ভারতীয় প্রমাণ করতে পারলে তাঁরা নোটিস পেলে কেন চুপ করে বসে থাকবেন, পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Silchar Rally youth BJP d voter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE