E-Paper

নতুন সংসদ ভবনে রামায়ণ এবং মহাভারতকে ‘ইতিহাস’ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, কটাক্ষ বিরোধীদের

নতুন সংসদ ভবনের সংবিধান গ্যালারিতে ভারত কেন ‘গণতন্ত্রের জননী’, তার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গেই এসেছে রামায়ণ-মহাভারতের কথা।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৮
মহাকাব্যের ঘটনার ক্ষুদ্র প্রতিকৃতি (বাঁ দিকে) ও ‘ইতিহাস’ ফলক (ডান দিকে)।

মহাকাব্যের ঘটনার ক্ষুদ্র প্রতিকৃতি (বাঁ দিকে) ও ‘ইতিহাস’ ফলক (ডান দিকে)।

‘তুমি পুরাণকে বলো ইতিহাস, ইতিহাসকে বলো পুরনো’। পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে অভিনেতা-গায়ক-শিল্পীরা মিলে এমনই গান বেঁধেছিলেন। মঙ্গলবার নতুন সংসদ ভবনের ‘সংবিধান হল’-এর সংবিধান গ্যালারিতে পা দিয়ে সাংসদেরা দেখলেন, সেখানে রামায়ণ-মহাভারতকেই ‘ইতিহাস’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘রামায়ণ ও মহাভারত হল মহাকাব্য, যা আমাদের ইতিহাস বা হিস্ট্রি বলে।’

রামমন্দির নিয়ে বিতর্কের সময়ে অভিযোগ উঠেছিল, মানুষের ধর্মীয় আবেগকে হাতিয়ার করে রামায়ণকে ইতিহাস হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছে বিজেপি। নতুন সংসদ ভবনের সংবিধান গ্যালারিতে ভারত কেন ‘গণতন্ত্রের জননী’, তার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গেই এসেছে রামায়ণ-মহাভারতের কথা। বলা হয়েছে, দুই মহাকাব্যেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণের বিবিধ উদাহরণ রয়েছে। রামায়ণে রামের রাজ্যাভিষেক, মহাভারতে কুরু ও পুরুর রাজ্যাভিষেকের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সম্মতি জড়িত ছিল। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন,‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলছি এরা পুরাণকে ইতিহাস এবং দর্শনকে ধর্মতত্ত্ব বলে চালাচ্ছে। ভারতের নতুন সংসদ ভবনের স্থপতিদের ভারতের সংস্কৃতি সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। যে ভারতীয় পরিচিতি সত্তা স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে তার বদলে এরা হিন্দুত্ববাদী পরিচিতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।’’

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার বলেন, ‘‘রামায়ণ-মহাভারত থেকে কেউ মূল্যবোধ অর্জন করলে তাতে সমস্যা নেই। তা থেকে হিংসা তৈরি হলে সেটা ঠিক নয়। তবে মোড়লতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সভা-সমিতি থাকলেও সেটাকে গণতন্ত্র বলতে গেলে অনেক তথ্যপ্রমাণ লাগবে।”

সংবিধান গ্যালারিতে রামায়ণ, মহাভারতের সঙ্গেই একই সারিতে জায়গা পেয়েছে কৌটিল্য ও তাঁর শাসনের নীতি, সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর জনপদের শাসন ব্যবস্থা, বৌদ্ধ ও জনসঙ্ঘ, অশোকের শাসনরীতি। কিন্তু মোগল শাসনের ছিঁটেফোটা উল্লেখও মেলেনি। বলা হয়েছে, ভারতীয় ঐতিহ্যে শাসকরা কর ব্যবস্থার মতো ক্ষেত্রে জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতেন। সাধারণ মানুষের নিজের আস্থা অনুযায়ী চলার স্বাধীনতা ছিল। শাসকের আস্থা মতো চলার বাধ্যবাধকতা ছিল না।

বিরোধী সাংসদরা দেখে প্রশ্ন তুলেছেন, মোদী নিজে কি ভারতীয় ঐতিহ্য মেনে শাসন করেন? তা হলে তাঁর জমানায় সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের অভিযোগ ওঠে কেন?

পুরনো সংসদ ভবনের মতো নতুন সংসদ ভবনে সেন্ট্রাল হল নেই। তার বদলে ভবনের মাঝখানে রয়েছে সংবিধান হল বা কনস্টিটিউশন হল। সেখানে অবশ্য অধিবেশনের জায়গা নেই। তার বদলে ভবনের সুউচ্চ ছাদ থেকে ঝুলছে বিরাট মাপের ফুকোর পেন্ডুলাম। কলকাতার ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়ামের তৈরি এই যন্ত্রে ফরাসি পদার্থবিদ ফুকোর দেখানো পথে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ফুটে উঠছে।

কেন সংবিধান হলে ফুকোর পেন্ডুলাম? সংসদের কর্মীরা বলছেন, সংবিধানের ৫১এ অনুচ্ছেদে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার মৌলিক দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, মোদী যে গণেশের মাথা প্লাস্টিক সার্জারি করে বসানো হয়েছিল, জেনেটিক গবেষণার ফলে কর্ণের জন্ম হয়েছিল বলে দাবি করেন, তাতে কি বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি হয়?

মোদী সরকারের মন্ত্রীরা বারবারই সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতার কথা বলেন। তাঁদের দাবি, পুরাণ-বর্ণিত সরস্বতী নদীর বাস্তবে অস্তিত্ব ছিল। নতুন সংসদ ভবনের স্থাপত্য গ্যালারিতেও গুজরাতের ধোলাবিরাকে সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতার নিদর্শন বলে তুলে ধরা হয়েছে। জহর বলেন, ‘‘সরস্বতীর অস্তিত্ব প্রমাণে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু তার এখনও প্রমাণ মেলেনি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Histroy Ramayana Mahabharata BJP Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy