Advertisement
E-Paper

গঢ়বালে প্রবল দুর্যোগ, বন্ধ চার ধাম যাত্রা

পাহাড়ের গা বেয়ে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস খুব দ্রুত গতিতে উপরে ওঠার সময় বিশাল উচ্চতার উল্লম্ব বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়। সেই মেঘপুঞ্জ এক সময় জলীয় বাষ্পের ভার সইতে না পেরে ফেটে যায়। যে এলাকার উপরে সেই মেঘপুঞ্জ ভাঙে, সেখানে ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়। পাহাড়ি এলাকা হলে হঠাৎ ধস নামে। নদীতে হড়পা বান আসে। প্লাবিত হয় এলাকা। ভাল নেই হিমালয়। পুড়ছিল আগুনে। এ বার বিপর্যয় নেমে এল আকাশ ভেঙে!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৪:০১
উত্তরাখণ্ডের টিহরির ঘনশালিতে পাথরে চাপা পড়েছে বাড়ি। ছবি: পিটিআই।

উত্তরাখণ্ডের টিহরির ঘনশালিতে পাথরে চাপা পড়েছে বাড়ি। ছবি: পিটিআই।

ভাল নেই হিমালয়। পুড়ছিল আগুনে। এ বার বিপর্যয় নেমে এল আকাশ ভেঙে!

গত ক’মাসে দাবানলে খাক হয়েছে হিমালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। শুধু উত্তরাখণ্ডেই কুমায়ুন-গঢ়বাল মিলিয়ে ধ্বংস হয়েছে চার হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকার সবুজ। তখন জল ঢালেনি আকাশ। বাড়িয়ে গিয়েছে জলীয় বাষ্পের সঞ্চয়। পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে গত কাল সকাল থেকেই জলভরা ঝোড়ো মেঘে ছেয়ে গিয়েছিল হরিয়ানা-পঞ্জাব-উত্তরপ্রদেশের বড় অংশ। কিন্তু বিপর্যয়ের প্রস্তুতিটা চলছিল আরও উত্তরে। মেঘের ঘাড়ে মেঘ জমছিল উত্তরাখণ্ডের গঢ়বালে। জলভরা মেঘের সেই থামগুলিই একে একে ভেঙে পড়তে শুরু করে কাল দুপুর তিনটে থেকে।

গত কয়েক বছরে হিমালয় বার বার দেখেছে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি কারও শাসন মানে না। এ বারেও আচমকা বিপুল বৃষ্টির জল নীচে নামার পথ করে নিয়েছে টিহরি ও উত্তরকাশী জেলার জায়গায় জায়গায় ধস নামিয়ে। বিপর্যস্ত করেছে জনজীবন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, স্কুল-দফতর। বন্ধ রাস্তা। বন্যায় ভাসছে গ্রাম। বন্ধ হিমালয়েরয় চার ধাম যাত্রা। জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটকে পর্যটকেরা।

তবে স্বস্তি এটুকুই, দিনের বেলা শুরু হওয়ায় এ বারের দুর্যোগ ২০১৩ সালের মতো বড় আকার নেয়নি। নিজেদের বাঁচানোর কিছুটা সময় পেয়েছেন মানুষজন। সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে।

তিন বছর আগে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান ও ধসে অন্তত ৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৪ সালের সুনামির পর সেটিই ছিল ভারতের সব চেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে কপালের ভাঁজ মুছছে না প্রশাসনের। ২৪ ঘণ্টাতেও বৃষ্টি না থামায় এ বারের দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধার ও রাস্তা খোলার কাজ শুরু হলেও ভারী বৃষ্টি ও ধস বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খারাপ আবহাওয়া ও বৃষ্টির জেরে বন্ধ রয়েছে উত্তরকাশী থেকে কেদারনাথ যাওয়ার পথে যমুনোত্রীর কাছের রাস্তাটি। আটকে পড়া কেদারনাথ তীর্থযাত্রীরা আপাতত আশ্রয় নিয়েছেন লাম্বগাঁও, কোটালগাঁও এবং চামিয়ালায়। কর্নাটকের দেড়শো জন এই সব এলাকায় আটতে পড়েছেন। কলকাতার এক ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার নিতাই সেনগুপ্ত জানান, কাল রাতভর ও আজও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের কোনও পর্যটক আটকে পড়েননি। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা খোলার কাজে ইতিমধ্যেই লেগে পড়েছে আর্থ-মুভার। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে জাতীয় সড়ক-সহ অন্যান্য বন্ধ রাস্তাও। আগামী কাল ফের জাতীয় সড়ক চালু হতে পারে।

বন্যা-ধসের জেরে সব থেকে ক্ষতি হয়েছে দরগা, জুঙ্গা, ঘনশালী, মুরোগী, উত্তরকাশী-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে কেমরা ও সিলিয়াড়া এলাকাতেও। গির নামে এক গ্রামে হড়পা বানে ভেঙে গিয়েছে স্কুলবাড়ি। বিস্তীর্ণ এলাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎসংযোগ।

গত কাল থেকে নিখোঁজ দু’ই কিশোরের দেহ মিলেছে আজ। দু’জনের এক জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে— কিরেথ গ্রামের বাসিন্দা চোদ্দো বছরের ভারতী। পনেরো বছরের অন্য কিশোরটি ঘনশালী এলাকার বাসিন্দা। রবিবার মৃত্যু হয়েছে আরও চার জনের।
পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা ঘনশালীর বাসিন্দা শার্তনা দেবী (৪৫), সুনয়না (১৯), গোদাম্বরী দেবী (৫৫)। উত্তরকাশীতে মুনসী লাল নামে
বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির দেহ
উদ্ধার হয়েছে।

পাহাড়ে মেঘ ভেঙে এই দুর্যোগ ঘটালেও মেঘেরই কারণে কিন্তু কিছুটা স্বস্তি এসেছে হিমালেয়র কোলে। কাল রাত থেকে বৃষ্টি হয়েছে হরিয়ানা-পঞ্জাব-উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশে। তাপমাত্রা নেমেছে তাতে। অল্পবিস্তর বৃষ্টিতে গরমের জ্বলুনি খানিকটা কমেছে দিল্লিতেও।

himalaya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy