Advertisement
E-Paper

হাপুর-অলওয়ারের ধর্ষণে জোর তরজা

গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণী যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশের ডিজিপিকে আজ নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০২:০৯

বাবা বিক্রি করে দিয়েছিলেন ১০ হাজার টাকায়। তার পরে জোর করে পরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য করা। আর সেখানেই গণধর্ষণের শিকার হওয়া। উত্তরপ্রদেশ পুলিশে সব জানালেও কেউ কিছু করেনি বলে অভিযোগ। শেষটায় আর সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে আগুন দিয়েছিলেন হাপুরের ২৩-এর তরুণী। ৮০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় এখন গাজ়িয়াবাদের হাসপাতালে লড়ছেন তিনি। একটি দৈনিকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘মরে গেলেই ভাল হত। কে এই রকম যন্ত্রণা সহ্য করতে চায়? তবে এখন এমন পুড়ে গিয়েছি, তাতে অন্তত কেউ আর ধর্ষণ করার চেষ্টা করবে না।’’

তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে আলোড়ন তৈরি হয়েছে নানা স্তরে। গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণী যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশের ডিজিপিকে আজ নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা বলেছেন, ‘‘ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পুলিশকে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও কমিশনকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

নির্যাতিতার সারা শরীর এখন ব্যান্ডেজে মোড়া। মুখটুকু শুধু বাদ। গত ২৮ এপ্রিল এক বন্ধুর বাড়িতে গায়ে আগুন দেন তিনি। হাসপাতাল থেকে তিনি ওই দৈনিককে বলেছেন, ‘‘১৪ বছর বয়স হতে না হতেই বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দেন। বয়স্ক স্বামী কয়েক মাস পরেই ছেড়ে চলে যায়।’’ তরুণীর দাবি, তার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাবা তাঁকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন এক বন্ধুর কাছে। সেই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হলেও তরুণী বলেছেন, ‘‘আমার দ্বিতীয় স্বামী আরও ভয়ঙ্কর ছিল। তার বন্ধুরা দিনের পর দিন আমাকে ধর্ষণ করেছে। অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ২০ জনেরও বেশি লোক আমার সঙ্গে এমনটা করে গিয়েছে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে তরুণীর আক্ষেপ, ‘‘কেউ এতটুকু সাহায্য করেনি। না বাবা, না পুলিশ। এক বছর ধরে শুধু পুলিশ বলেছে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। একটা এফআইআরও নেয়নি। দ্বিতীয় স্বামী নির্যাতন চালাত। ধর্ষণ করত। বন্ধুদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেও বাধ্য করেছিল। ধর্ষণ আর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম।’’

হাপুরের এই তরুণীর পাশাপাশি আলোচনায় এসেছে রাজস্থানের অলওয়ারের দলিত মহিলার গণধর্ষণের কথাও। ২৬ এপ্রিল স্বামীর সামনেই ওই মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। বস্তুত এই দুই ঘটনা নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় শুরু হয়েছে রাজনীতি। একটি ঘটেছে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে আর অন্যটি ঘটেছে কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে। গত দু’দিন ধরে অলওয়ারের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিএসপি নেত্রী মায়াবতী সুর চড়িয়েছেন। অলওয়ারে ধর্ষিতার জন্য সুবিচারের দাবিতে আজ বিক্ষোভ হয় দৌসায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়লে আগত হন অন্তত পাঁচ পুলিশকর্মী।

আজ হাপুরের ঘটনা নিয়ে গলা তুলেছে কংগ্রেসও। হাপুরের তরুণী পুলিশের কাছে গিয়েও সুরাহা পাননি— এই তথ্য উল্লেখ করে কংগ্রেস আক্রমণ করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে। স্লোগান নিয়ে বিজেপিকে বিঁধে তারা বলেছে, ‘‘উত্তরপ্রদেশের পুলিশ পাশে না দাঁড়ানোয় হাপুরের মহিলা গায়ে আগুন দিতে বাধ্য হলেন। মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়!’’ কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়বীর শেরগিল বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রচারে ব্যস্ত। মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় নেই। হাপুরের নির্যাতিতা তাই বিচার পাননি।’’

অলওয়ারের ঘটনা নিয়ে আজ আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের ইস্তফা দাবি করেছেন। জাভড়েকর বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী রাজস্থান সফরে আসবেন। গহলৌতকে ইস্তফা দিতে বলা উচিত তাঁর। গহলৌত রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। তিনি এত বড় ঘটনার কথা জানতেন না, এটা হতে পারে না। ভোটে রাজনৈতিক লাভের জন্য ঘটনাটা ছ’দিন চেপে রাখা হয়েছিল।’’

Rape Hapur Uttar Pradesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy