জ্ঞানভাণ্ডার: চেন্নাইয়ের সংগ্রহালয়ে প্রাচীন পুথি। —ফাইল চিত্র ।
নারায়ণ, নারায়ণ, নারায়ণ— তিন বার এই শব্দ উচ্চারণ করেই নাকি ব্রহ্মাণ্ডের এ-মাথা ও-মাথা করে বেড়াতেন নারদ মুনি! আর আজ তিন বার ‘ডব্লিউ’ (www) লিখেই খুলে যায় যোগাযোগের সব দুনিয়া। আরএসএসের দাবি, নারদ মুনির দেখানো পথেই আজকের এই যোগাযোগ বিপ্লব। সঙ্ঘ তাই দেশের সংস্কৃতির শেকড় থেকেই ফের খুঁজে নিতে চাইছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির নতুন আলো।
যেমন, সংস্কৃত ভাষাকে আজ অনেকে বলেন ‘মৃত’। কিন্তু সঙ্ঘ বলছে, আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত নিহিত সংস্কৃতেই। পুরাণ, সাহিত্য, শিল্প, গণিত, বিজ্ঞানের জনক হল সংস্কৃত। অথচ ঠিক ভাবে তা মেলে না ধরাতেই ধুঁকছে এই ভাষার চল। মোদী-যোগী ‘যুগে’ প্রাচীন এই ভাষাকেই পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে সঙ্ঘ।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপির এক ডজনেরও বেশি বিধায়ক এ বারে সংস্কৃতে শপথ নিয়েছেন। সঙ্ঘ নেতা দত্তাত্রেয় হোসবোলে সম্প্রতি লখনউয়ে যোগ-উৎসবে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে রাজ্যে নতুন করে সংস্কৃত বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দেন। যোগকেও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে বলেন তিনি। পাশাপাশি তৎপরতা বাড়িয়েছে ‘সংস্কৃতভারতী’-ও। সঙ্ঘের এই সংগঠনের লক্ষ্য সংস্কৃতের প্রসার ঘটানো। যোগী সরকারের কাছে একুশ দফা প্রস্তাব পাঠাচ্ছে তারা। যোগী সরকারের শিক্ষামন্ত্রী দীনেশ শর্মা হোসবোলের প্রস্তাব সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘সংস্কৃতপঠন-পাঠনকে আরও জনপ্রিয় করতে আগেই উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। সরকার ওই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখছে।’’ উত্তরপ্রদেশে একটি সংস্কৃত বোর্ড তৈরি হয়েছিল এক দশক আগেই। কিন্তু অখিলেশ যাদবের জমানায় অনুদানের অভাবে শিক্ষকেরা ঠিক মতো মাইনে পর্যন্ত পেতেন না। শিক্ষকের অভাবে বিদ্যালয়গুলিও ধুঁকছে বলে অভিযোগ সঙ্ঘের।
কোনও রাজ্য আলাদা বোর্ড গড়ে সংস্কৃত পড়াতে চাইলে তেমন আপত্তি নেই বিরোধী দল কংগ্রেসের। রাজস্থানেও সংস্কৃত বিষয়ক পৃথক দফতর আছে। কিন্তু সঙঘ নেতাদের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেও ছাড়ছে না কংগ্রেস। ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার বদলের জন্য হোসবোলে গত শনিবার উত্তরপ্রদেশের কয়েক জন অধ্যাপকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামী ২১ এপ্রিল ফের বৈঠক হবে। কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির অভিযোগ, আরএসএস যে ভাবে অধ্যাপকদের ডেকে শিক্ষাব্যবস্থায় নাক গলানোর চেষ্টা করছে, কংগ্রেস তার বিরোধী।
দেশের অনেক রাজ্যেই বিভিন্ন বোর্ডের অধীনে সংস্কৃত পড়ানো হয়। সঙ্ঘ চাইছে সংস্কৃত-চর্চার পরিধিটাই ছড়িয়ে দিতে। তারা মনে করে, সংস্কৃত পড়ানোটা শুধু ব্যাকরণ-দর্শন বা সাহিত্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞানও পড়ানো দরকার সংস্কৃতে। সংস্কৃতভারতীর বারাণসী শাখার প্রধান সঞ্জীব রায়ের মতে, ‘‘এখন বিষয় পড়ানো হয়, ভাষা নয়। যখন সব বিষয় সংস্কৃতে পড়ানো হবে, তখনই তার উপরে দখল বাড়বে। প্রাচীনতম এই ভাষার মাধ্যমে ভারত গোটা বিশ্বে টক্কর দিতে পারবে।’’ সংস্কৃতভারতীর অবধের প্রধান ওমকারের বক্তব্য, সংস্কৃতের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও বিরোধ নেই। একে অপরের পরিপূরক।
কিন্তু আজকের এই তীব্র প্রতিযোগিতার যুগে সংস্কৃতে সব পড়লে তার ভবিষ্যৎ কী? গবেষণা, শিক্ষকতা বা ধার্মিক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বা প্রয়োজন থাকতেই পারে। কিন্তু সংস্কৃতে বিজ্ঞান অর্থনীতি পড়ে আজকের দিনে কি কেউ চাকরি-বাকরি জোটাতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তরে সঙ্ঘের এক নেতা বললেন, ‘‘কে বলেছে, সংস্কৃতে পড়ে কেউ ভালো পেশাদার, ব্যবসায়ী কিংবা কৃষক হতে পারবেন না? আসলে আমরা সংস্কৃতকে ভালো করে ব্র্যান্ড করে তুলতে পারিনি।’’ সঙ্ঘ
নেতাটি মনে করিয়ে দেন, সংস্কৃতে ১ কোটি ৩২ লক্ষ পাণ্ডুলিপির ৬০ শতাংশই বিজ্ঞানের। যুবকদের কাছে তা আরও জনপ্রিয় করে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy