Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নোটবন্দি নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ রঘুরাম রাজনের

নোট বাতিলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতি কতটা লাভবান হবে, তা বলবে সময়। কিন্তু অন্তত স্বল্প মেয়াদে তাতে ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি। বৃদ্ধির শামুক গতি, শিল্পের তথৈবচ দশা আর কাজের সুযোগ তৈরি না-হওয়া তার সাক্ষী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১৭
Share: Save:

শিক্ষক দিবসেই শোরগোল ফেলে দিলেন অর্থনীতির মাস্টারমশাই!

নিজের সদ্য প্রকাশিত বইয়ের (আই ডু হোয়াট আই ডু) প্রচারে দেশে এসে রঘুরাম রাজন সটান বলে দিলেন, ‘‘সরকারের প্রস্তাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর সব সময় ‘হ্যাঁ’ মেলাতে পারেন না। মতের ফারাক হলে, স্পষ্ট ভাবে ‘না’ বলাটাও জরুরি। তার সুযোগ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনে আছে।’’

একই ফুলকি তাঁর বইয়ের পাতাতেও। সেখানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর এবং বর্তমানে শিকাগো বুথ স্কুল অব বিজনেসের ফিনান্সের শিক্ষক রাজন লিখেছেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর সরকারের চিয়ার লিডার হতে পারেন না।’’ অনেকেরই প্রশ্ন, তা হতে চাননি বলেই কি তবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের মাথায় আরও দু’বছর থাকলেন না তিনি? সরে গিয়েছিলেন কি নোটবন্দিতে সায় দেবেন না বলে?

নোট বাতিলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতি কতটা লাভবান হবে, তা বলবে সময়। কিন্তু অন্তত স্বল্প মেয়াদে তাতে ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি। বৃদ্ধির শামুক গতি, শিল্পের তথৈবচ দশা আর কাজের সুযোগ তৈরি না-হওয়া তার সাক্ষী। ফলে তার পর থেকে বারবার প্রশ্ন উঠেছে, নোট নাকচের সিদ্ধান্তে কি সায় ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের? না কি মোদী সরকারের ফরমানে না করতে পারেননি বর্তমান গভর্নর উর্জিত পটেল? রাজন থাকলে এমনটা হতে দিতেন কি?

এক বছর মুখে কুলুপ এঁটে থাকার পরে অবশেষে রাজন জানান, কালো টাকা বা জাল নোট নিকেশের জন্য নোট বাতিলের থেকে ভাল উপায় যে রয়েছে, কেন্দ্রকে তা বলেছিলেন তিনি। বইয়ে তাঁর দাবি, ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোরও বিকল্প রাস্তা আছে। তা সরকারকে জানানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন:বাড়িতেই খুন প্রবীণ সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ

তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকাকালীন রিজার্ভ ব্যাঙ্কে নোট বাতিল নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং তিনি বলেছিলেন, সে ক্ষেত্রে কালো টাকার মালিকরা তা সরানোর বিকল্প রাস্তার সন্ধান ঠিক করে ফেলবেন। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেবই বলছে, বাতিল নোটের ৯৯ শতাংশই ফিরে এসেছে ব্যাঙ্কে।

কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, ‘‘রাজন সরকারকে বলেছিলেন নোট বাতিলে লাভ হবে না। বড় লোকসান হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ‘মন কি বাত’ বলতে পছন্দ করেন, শুনতে নয়।’’

রাজনের দাবি, নোট বাতিল নিয়ে তিনি এমনিতে মুখ খুলতেন না। কিন্তু সংসদীয় কমিটিতে হওয়া আলোচনা বাইরে আসার পরে তবেই এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন তিনি। অনেকের ধারণা, এই মৌন ভাঙা অস্বস্তিতে ফেলবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে তাঁর উত্তরসূরি পটেলকেও। অনেক সময় প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রের বিরোধিতা করতে না-পেরে তিনি শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়েছেন কি না। রাজন বলেছেন, ‘‘গভর্নর নিছক আমলা নন। জাতীয় স্বার্থে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা বজায় থাকা জরুরি।’’

রাজনের বই নিয়ে এক মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘উনি যা বলার বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী যা করার করছেন।’’ কিন্তু আর এক প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালান বলছেন, নোট বাতিলের প্রয়োজন ছিল না। তিনিও নোট বাতিল হতে দিতেন না। প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুর মতে, ‘‘রাজনের (অকাল) বিদায় দেশের বড় ক্ষতিগুলোর একটা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE