শুভেচ্ছা বিনিময়। জি-২০ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। শনিবার ব্রিসবেনে। ছবি: পিটিআই।
আর্থিক সংস্কারের যে কোনও উদ্যোগে শুরু থেকেই আসে রাজনৈতিক বাধা। দিল্লিতে ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন, প্রতিপক্ষের থেকে চাপ তাকে সইতেই হয়। কখনও বিজেপি আবার কখনও কংগ্রেস। সংস্কারের উদ্যোগে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর বামেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তো লেগেই আছে। দফায় দফায় সংসদ অচল, রাস্তায় নেমে জঙ্গি আন্দোলন, জনগণের স্বার্থের নামে রাজনীতির সলতে জ্বালানোর উদ্যোগে অভ্যস্ত এই দেশ। তবে শুধু এ দেশই বা কেন, সংঘাতের ছবিটা তো বিশ্ব জুড়ে।
এই প্রেক্ষাপটেই আজ ব্রিসবেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা, “আর্থিক ক্ষেত্রে নতুন কিছু করার জন্য দরজা খুললে বাধা আসবেই। তবে সংস্কারকে রাজনৈতিক চাপ থেকে দূরে রাখতে হবে।” জি-২০ সম্মেলন শুরুর আগে রাষ্ট্রনেতাদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের দেওয়া ভোজসভায় আর্থিক উদারীকরণের পক্ষে মোদী জোরালো সওয়াল করেছেন। একই সঙ্গে শক্তিশালী দেশগুলির কাছে তাঁর আর্জি, “আর্থিক সংস্কারের মূলকেন্দ্রে রাখতে হবে মানুষকে। জোর করে সংস্কারের পথে হাঁটা ঠিক নয়।” ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, “বিশ্ব জুড়ে সংস্কার নিয়ে যে ভাবে এগোনো হয়, তা মানুষের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এই রাস্তা বদলাতে হবে।” মোদীর প্রস্তাব, “সংস্কারের পথ সহজ করা দরকার। আর এর সঙ্গে যেখানে যেখানে সরকারি কাজ জড়িয়ে, দরকার সে সবেরও সরলীকরণ।” সংস্কারে প্রযুক্তিনির্ভ রতা বাড়ানো উপরেও জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, কালো টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। এ জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতার আর্জি জানিয়েছেন।
বিদেশের মাটিতে বসে সংস্কার নিয়ে মোদীর বক্তব্যকে নানা ভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগানকে যে ভাবে প্রচারে নিয়ে আসছেন মোদী, সেই প্রেক্ষাপটেই বিশ্বের সামনে সংস্কার নিয়ে তিনি বার্তা দিলেন। জি-২০ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মঞ্চ। আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, চিন, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিলের মতো দেশগুলি এর সদস্য। বিশ্বের ৮০ শতাংশ বাণিজ্য ও ৮৫ শতাংশ উৎপাদিত পণ্য রয়েছে এই দেশগুলির হাতেই। ফলে এখানে মোদীর বার্তা উন্নত দেশগুলির শিল্পমহলে পৌঁছে গিয়েছে।
জাতীয় স্তর থেকেও মোদীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু। এখানে বিমায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সীমা বাড়ানো, জমি বিল, পণ্য ও পরিষেবা বিল, শ্রম সংস্কার বিল আনতে চাইছে সরকার। এতে রাজনৈতিক বাধা যে আসবে, তা বুঝছে মোদী সরকার। কংগ্রেস নেতৃত্ব ক্ষমতায় থাকার সময়ে সংস্কারের পথে নিজেরা দ্রুত ছুটতে চাইলেও মোদী জমানার বিলগুলি নিয়ে সতর্ক পদক্ষেপ করতে চাইছে। বিমা ক্ষেত্র বা শ্রম সংস্কারে স্বাভাবিক ভাবেই আপত্তি জানাবে বামেরা। একই বিষয়ে নীতিগত বিরোধিতার কথা শুনিয়ে এলেও চাপের মধ্যে থাকা তৃণমূলের মতো দল শেষ পর্যন্ত সরকারি বিলগুলিকে সমর্থন করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এনডিএ সরকারের বিরোধীদের জন্যও ইঙ্গিতবাহী।
যদিও ‘সাধারণ মানুষের জন্য সংস্কার’ বা তাতে ‘রাজনীতির বাধা কাটানো’-র আহ্বানকে এ দেশের মাটিতে কতটা গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারবেন মোদী, সে প্রশ্নের জবাব ভবিষ্যতেই মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy