Advertisement
E-Paper

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা-ই বলুন, পুলিশে ভরসা নেই

মুস্তফাবাদের ত্রাণ শিবিরে রেহানা বেগম বলছিলেন, ‘‘সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পরে অজস্র বার পুলিশে ফোন করেছি। মিনতি করেছি এসে বাঁচানোর। লাভ হয়নি।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০২:৩৩
ব্রিজপুরীতে বসছে নতুন গেট। নিজস্ব চিত্র

ব্রিজপুরীতে বসছে নতুন গেট। নিজস্ব চিত্র

কোথাও গলির মুখে রাতারাতি ‘গজিয়ে উঠছে’ লোহার গেট। কোথাও দু’হাত দূরে কার্বাইনধারী আধা সেনা দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও রাতে ত্রাণ শিবিরের দরজা আগলাচ্ছেন স্থানীয় যুবকেরা। গোকুল পুরী থেকে মুস্তফাবাদ, শিব বিহার থেকে ব্রিজপুরী— পুলিশে আস্থা তলানিতে ঠেকেছে দিল্লির সংঘর্ষে বিধ্বস্ত এলাকায়। তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে দিল্লি পুলিশের যত প্রশংসাই করুন না কেন!

মুস্তফাবাদের ত্রাণ শিবিরে রেহানা বেগম বলছিলেন, ‘‘সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পরে অজস্র বার পুলিশে ফোন করেছি। মিনতি করেছি এসে বাঁচানোর। লাভ হয়নি।’’ ইদগাহের ওই ত্রাণ শিবির থেকে এক কিলোমিটার দূরে শিব বিহারে দাঁড়িয়ে সুমিত শর্মারও অভিযোগ, ‘‘চোখের সামনে কাকার দোকান পুড়তে দেখেছি। রাস্তায় তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উন্মত্ত সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। বহু বার পুলিশকে ডেকেছি। ফোন করেছি দমকলকে। কেউ আসেনি।’’

সংঘর্ষের প্রথম ৪৮ ঘণ্টা পুলিশের দেখা না-পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দু’পক্ষেরই। কিন্তু সাধারণ ভাবে আস্থা বেশি চিড় খেয়েছে সম্ভবত মুসলিমদের। কারণ, সংঘর্ষে পুলিশের সাহায্য পাওয়া তো দূর, বহু ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও উল্টে বহু মুসলিমকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। গোকুল পুরীর মহম্মদ দানিশই যেমন বলছিলেন, ‘‘আমার দোকান পুড়ে ছাই। অনেকের বাড়িও। কেউ মারাত্মক ভাবে আহত। কিন্তু পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে, অনেক সময়ে তারা তা নিতে চাইছে না। কিছু ক্ষেত্রে উল্টে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে।’’

পারস্পরিক আস্থায় চিড় ধরেছে বলেই বোধহয় ভবিষ্যতে শান্তি থাকার বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নন কেউই। আর ঝামেলা হলে, পুলিশের দেখা কত তাড়াতাড়ি মিলবে, সে বিষয়েও তাঁরা সন্দিহান। সম্ভবত সেই কারণে এখন তড়িঘড়ি গলির মুখে লোহার গেট বসাচ্ছেন অনেকে।

ব্রিজ পুরী, শিব বিহারের অনেক গলিতে চোখ পড়বে এমন নতুন গেট। অনেক জায়গায় কাজ চলছে গেট বসানোর। ব্রিজ পুরীতেই যেমন সচিন অরোরা বলছেন, ‘‘গাড়ি, বাইক চুরি যাওয়া রুখতে দিল্লির বহু জায়গায় এমন গেট বসানোর রেওয়াজ আছে। এখন সংঘর্ষের পরে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেরাই চাঁদা তুলে গেট বসাচ্ছেন তাঁরা।’’ এলাকার জনা দু’য়েক গেট নির্মাতাও মানলেন, সংঘর্ষের পর থেকে বরাতের খাতা উপচে পড়ছে তাঁদের। ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতিতে সম্ভবত অন্যতম, বিরল চাঙ্গা হওয়া ব্যবসা!

কিন্তু উন্মত্ত, ভিড়ের পক্ষে কি খুব কঠিন হবে ওই গেট টপকানো? উত্তরে ব্রিজ পুরীর বাসিন্দা সুফিয়ান বলছেন, ‘‘শুধু গেটে আক্রমণ আটকাবে না। তবে গেট থাকলে অন্তত হঠাৎ ঢুকে পড়তে পারবে না দুষ্কৃতীর দল। সামান্য হলেও সময় পাওয়া যাবে একজোট হওয়ার।’’ উপস্থিত অনেকেই বলছেন, ‘‘পুলিশ যে বাঁচাবে না, সে টুকু বুঝেছি। তাই যা করার, নিজেদেরই করতে হবে।’’ আর শিব বিহারের মহম্মদ সাবিরের কথায়, ‘‘পুলিশের উপরে আস্থা টাল খেলে, এলাকায় মস্তানদের প্রভাব বাড়ে। তাতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরই বিপত্তি।’’

Violence Delhi Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy