পাকিস্তানের গোলাগুলিতে রাজৌরির অতিরিক্ত জেলা উন্নয়ন কমিশনার রাজকুমার থাপার মৃত্যুকে ঘিরে শোকের ছায়া কাশ্মীরে। নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি বসবাসকারীদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার কাজই করছিলেন তিনি। গত শনিবার ভোরে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনিক পরিষেবার ২০০১ ব্যাচের অফিসার থাপা তাঁর সরকারি বাসভবনের কাছে একটি মর্টার শেল বিস্ফোরণে আহত হয়ে মারা যান।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শনিবার ভোর পাঁচটার সামান্য পরে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাপার খোঁজ নিতে ফোন করেন। তখনই গোলাগুলি শুরু হয়। থাপা জানান যে, তিনি সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তার কিছুক্ষণ পরে একটি শেল তাঁর বাসভবনের জানলায় আঘাত করে। থাপা তখন কাজে বেরনোর জন্য করিডর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। শেলের স্প্লিন্টারগুলি তাঁর মাথায় এবং পিঠে মারাত্মক ভাবে বিঁধে যায়।
গত শুক্রবার থাপা সারাদিন কাজ করেন উপমুখ্যমন্ত্রী সুরিন্দর চৌধুরির সঙ্গে। থান্ডিকাসিতে গ্রামবাসীদের জন্য অস্থায়ী শিবির এবং জিএমসি হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার কাজের দেখভাল করছিলেন। জেলা প্রশাসন এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গে জননিরাপত্তা এবং পুনর্বাসন নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজনও করেছিলেন। তার পর ফের সন্ধ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্ত জেলাগুলিতে ত্রাণ এবং লোকজনকে সরানোর কাজের পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগ দেন। রাত দশটায় তিনি রাজৌরির সরকারি হাসপাতালে আহতদের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট জরুরি ওয়ার্ডের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেন। রাজৌরির জেলা তথ্য কর্তা আশিক রফিক থাপার প্রতিবেশী। তিনিও বলেছেন, ‘‘শুক্রবার রাত ১০টা ০৫ নাগাদ থাপা হাসপাতালের বিছানার ব্যবস্থা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহের একটি টুইট ফরওয়ার্ড করেছিলেন। আমাকেও সেটি ছড়িয়ে দিতে বলেন।’’
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জম্মুর রূপনগরে থাপার সন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে জম্মুর সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন থাপা। তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছেন। স্ত্রীও ডাক্তার। রবিবার ওমর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘আমরা জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনিক পরিষেবার একজন নিবেদিতপ্রাণ আধিকারিককে হারিয়েছি। এই ভয়াবহ ক্ষতিতে শোক ও দুঃখপ্রকাশ করার মতো শব্দ আমার নেই। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’’
থাপার সহকর্মীরাও মুহ্যমান। সকলেই থাপাকে মনে রাখছেন এক জন বিনয়ী, পরোপকারী অফিসার হিসাবে। অতিরিক্ত জেলা উন্নয়ন কমিশনারকে সাধারণ ভাবে জনসাধারণের সঙ্গে খুব বেশি যোগাযোগ রাখতে হয় না। কিন্তু থাপা রাজৌরির জনগণের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। জরুরি পরিস্থিতি হলে তাঁরই প্রথম সাড়া পাওয়া যেত। সম্প্রতি বাধাল গ্রামে রহস্যজনক ভাবে ১৭ জনের মৃত্যুতে সবার আগে ছুটে যান থাপা। সরকারি বৈঠকে তিনি অধস্তনদের সঙ্গে বসতেন। উপমুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও তাই করেন। উপমুখ্যমন্ত্রী নিজে তার পর থাপা ও তাঁর টিমের জন্য আসন খালি করানোর ব্যবস্থা করেন।
থাপার মৃত্যু যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কর্মরতদের জীবনের ঝুঁকির দিকটি তুলে ধরল। সহকর্মীরা বলছেন, এক জন অক্লান্ত, সাহসী, নিঃস্বার্থ জনসেবক হিসাবে থাকবেন থাপা, যিনি অন্যদের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)