তীরে এসে তরী সেই ডুবলই। ব্রিটিশ রাজদম্পতি রাত কাটাচ্ছেন কাজিরাঙায়। আর সেই সময়ই চোরাশিকারি ও জঙ্গিদের গুলিতে গন্ডার মরল সেখানে। গন্ডার মারতে আর বনরক্ষীদের মোকাবিলায় শিকারিরা এ কে সিরিজের রাইফেল থেকে একশোরও বেশি রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। কাজিরাঙার ইতিহাসে এত রাউন্ড গুলি চালানোর ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন। রাজদম্পতির রিসর্ট থেকে অনেক দূরে, অন্য রেঞ্জে ঘটনাটি ঘটলেও এই শিকারি-জঙ্গি মিলিত হামলার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, কেট-উইলিয়াম কতটা নিরাপদ ছিলেন কাজিরাঙায়?
উইলিয়াম এবং তাঁর স্ত্রী কেট, দুজনেই পশুপ্রেমী। উইলিয়াম একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সভাপতিও। তাঁরা কাজিরাঙায় আসার দু’দিন আগেই শিকারিরা পানবাড়িতে একটি গন্ডারকে গুলি করে জখম করে তার খড়্গ কেটে নিয়ে পালিয়েছিল। এর পরেই আলফা-স্বাধীনের তরফে রাজদম্পতিকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, তাঁদের মাধ্যমেই গোটা বিশ্ব কাজিরাঙায় গন্ডার-নিধন সমস্যার কথা জানতে পারবে।
রাজ্য সরকারের তরফে কাজিরাঙা কর্তৃপক্ষকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, রাজদম্পতি থাকাকালীন অভয়ারণ্যে যেন কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা না ঘটে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। পূর্ব বোকাখাতের ডিএফও শুভাশিস দাস জানান, গত কাল রাতে বুড়াপাহাড় রেঞ্জের বড়ঘোপ বন শিবিরের কাছে, বতাহি বিলের পাশে একটি গন্ডারকে নিশানা করে শিকারিরা। তারা সংখ্যায় ছিল কমপক্ষে পাঁচ জন। গুলির শব্দ পেতেই বনরক্ষীরা ঘটনাস্থলের দিকে এগোতে থাকেন। কিন্তু এক শিকারি যখন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ গন্ডারটির খড়্গ কাটছিল, তখন অন্যরা স্বয়ংক্রিয় এ কে সিরিজের রাইফেল থেকে নাগাড়ে বনরক্ষীদের নিশানা করে গুলি চালাতে থাকে। .৩১৫ ও .৩০৩ রাইফেলধারী রক্ষীরা সেই গুলিবর্ষণের মুখে আর এগোতেই পারেননি। শিকারিদের মোকাবিলা করা তো দূরের কথা। আজ সকালে ঘটনাস্থল থেকে এ কে সিরিজের রাইফেলের কার্তুজের ১০৫টি খোল মিলেছে।
শিকারি ও জঙ্গি আঁতাত ক্রমশই প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে চলতি বছরে শিকারিরা কাজিরাঙায় সাতটি গন্ডার মেরে ফেলেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্বি আংলং থেকে শিকারি ও তার সঙ্গে কালাশনিকভধারী জঙ্গির দল বুড়াপাহাড়ে ঢুকে গন্ডার মারছে। ডিএফও জানান, গত রাতের গন্ডার হত্যার ঘটনা কেট ও উইলিয়ামের কাছে চাপা থাকেনি। তাঁরা সবটাই জেনেছেন।
গত কাল সকালেই কেট ও উইলিয়াম বাগরি রেঞ্জে জিপ সাফারি করেন। সেই সময়ে গন্ডার হত্যার ঘটনা, শিকার আটকানো আর সংরক্ষণের বহু খুঁটিনাটি নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেঞ্জার ও বনকর্মীদের সঙ্গে আলোচনাও করেন। পরে নামঘর ঘোরা, বিহু দেখা, চা-বাগানে পায়চারি, পশু উদ্ধার কেন্দ্র ঘুরে হাতি ও গন্ডারশাবককে দুধ খাইয়ে দিনটা তাঁদের দিব্য কেটেছিল।
শেষ পর্যন্ত নৈশাহারের শুরুতেই প্রচণ্ড ভূমিকম্প আর রাতে গন্ডার শিকারের ঘটনার জেরে জোড়া ‘শক’ নিয়ে অসম ছাড়তে হল রাজদম্পতিকে। এত চেষ্টার পরেও মুখ বাঁচল না অসমের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy