জল-পথ। করিমগঞ্জের পাথারকান্দি রোডে। ছবি: শীর্ষেন্দু সী।
হাইলাকান্দির পাঁচগ্রামে জাতীয় সড়কে বরাক নদীর জল উঠে আসায় দুর্ভোগে পড়েছেন উপত্যকার মানুষ। ১০ দিন ধরে এমনই পরিস্থিতি রয়েছে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের পাঁচগ্রামের কালীবাড়ি এলাকা।
হাইলাকান্দি প্রশাসন বাঁশের বেড়া দিয়ে ওই সড়কের দু’দিক বন্ধ করে দিয়েছে। বরাক উপত্যকার অন্যতম ‘জীবনরেখা’ এই জাতীয় সড়ক বন্ধ হওয়ায় হাইলাকান্দি-করিমগঞ্জ এবং শিলচর-বদরপুরের মধ্যে যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুই জেলার বাসিন্দাদের নৌকায় জাতীয় সড়কের জলমগ্ন অংশ পারাপার করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহেই একটি লরি জলে ডোবা অংশ পেরতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়। জেলাশাসক বরুণ ভুঁইঞা ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি ওই রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধের নির্দেশ জারি করেন। রাস্তা মেরামত না হওয়া পর্যন্ত পাঁচগ্রাম কাগজকলের মধ্যে দিয়ে বিকল্প রাস্তায় হালকা যানবাহন চালানোর ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন।
কিন্তু ১০ দিন ধরে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় উপত্যকা জুড়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, প্রতি বছর পাঁচগ্রামের ভাঙন মেরামতির নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ হয় না। পাঁচগ্রামের আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য এবং হাইলাকান্দি বিজেপি যুব মোর্চার জেলা সভাপতি সরোজ সেন অভিযোগ করেন, ‘‘ওই রাস্তা ঠিকাদারদের কাছে সোনার ডিম পাড়া হাঁস হয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর ভাঙন মেরামতির জন্য প্রচুর টাকা বরাদ্দ করা হয়। তা কোথায় উধাও হয়ে যায়?’’ বিজেপি যুব মোর্চা ভাঙন মেরামতির দাবিতে জেলাশাসকের কাছে চরমপত্র পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দ্রুত ওই সড়কে মেরামতি না করা হলে মোর্চা আন্দোলনে জনজীবন স্তব্ধ করে দেবে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই রাস্তায় পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। যাতে কোনও বড় গাড়ি জলমগ্ন রাস্তা পারাপারের চেষ্টা না করে।
হাইলাকান্দির জলসম্পদ বিভাগের বাস্তুকার প্রজ্ঞানন্দ দাস বলেছেন, ‘‘বিভাগের অধিকাংশ কর্তা এখন এনআরসি-র কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তা-ও নদীবাঁধের দিকে সতর্ক নজর রাখা হয়েছে।’’
পাঁচ গ্রামের নদী ভাঙন মেরামতির নামে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য হাইলাকান্দি প্রশাসন এবং শাসক দলের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। প্রতিবাদে ৩০ জুলাই জাতীয় সড়ক অবরোধ করবে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি এবং ছাত্র মুক্তি সংগ্রাম সমিতি।
কেএমএমএস–র কেন্দ্রীয় সম্পাদক জহিরউদ্দিন লস্কর বলেন, ‘‘পাঁচগ্রামের নদী ভাঙন মেরামতির নামে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল, জলসম্পদ বিভাগ এবং ব্রহ্মপুত্র বোর্ড থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু ওই টাকা ঠিক ভাবে খরচ করা হয়নি। তাতেই দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।’’
হাইলাকান্দির অতিরিক্ত জেলাশাসক অমলেন্দু রায় জানিয়েছেন, প্রশাসন ওই রাস্তা আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
এ দিকে টানা বর্ষণে হাইলাকান্দির আলগাপুর সার্কেলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাটাখালে জলস্ফীতি হওয়ায় বক্রিহাওর এলাকায় জল ঢুকছে। হালি চারা রোপনের মরসুমে এই ঘটনায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy