বিহারের রাজনীতিতে বিপুল শোরগোল তুলে পটনার সার্কুলার রোডের নিরালা এলাকা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে দু’টি গাড়ি। একটায় দিদি গিয়েছেন বিমানবন্দরে, অন্যটায় ভাই গিয়েছেন পোলো রোডের সরকারি আবাসের দিকে। বাড়িতে আপাতত দিশাহারা দুই প্রবীণ-প্রবীণা। সংসার ভেঙে যাচ্ছে দেখে প্রবীণাই আবার তোড়জোড় শুরু করেছেন সুতো জোড়ার!
রাজনীতি এবং পরিবারের সঙ্গে আর সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করে দিয়ে শনিবার বাপের বাড়ি (আসলে মায়ের) ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রোহিণী আচার্য। কেমন অসম্মানের মুখে তাঁকে পড়তে হয়েছে, বহির্জগতের সামনে হাট করে দিয়েছেন লালুপ্রসাদ যাদব ও রাবড়ী দেবীর কন্যা। সূত্রের খবর, ওই পরিবারে ‘বাইরের লোক’ কে, চরমে উঠেছে সেই বিবাদ। বিয়ের পরে মেয়েরা বাপের বাড়িতে ‘বাইরের লোক’ হয়ে যান কি না, খুঁচিয়ে উঠেছে সেই প্রশ্নও। সূত্রের খবর, রোহিণীর বিদ্রোহের পরে রাবড়ী দ্বারস্থ হয়েছেন দুই ‘ভাইয়া’র। এক জন রাবড়ীর ভাই সাধু যাদব, অন্য জন রোহিণীর ‘তেজু ভাইয়া’ অর্থাৎ তেজপ্রতাপ যাদব। সাধু মামা ও তেজু ভাইয়ার ফোন পাওয়ার পরে মুম্বইয়ে রবিবার বয়ান বদলেছেন রোহিণী। রাবড়ী-কন্যা বলেছেন, ‘‘আমার বাবা-মা, বোনেরা, শ্বশুরবাড়ির লোকজন সবাই আমার পাশে আছেন। বিবাদ শুধু ভাইয়ের সঙ্গে!’’
অর্থাৎ এই মুহূর্তে বিহারের ভোটে বিপর্যস্ত তেজস্বী যাদব ঘরের মাঠেও কোণঠাসা! তেজস্বীর দুই সহচর সঞ্জয় যাদব ও রামিজ় নিমত খানের মোড়ক ছাড়িয়ে রোহিণী সরাসরি ভাইয়ের দিকেই আঙুল ঘুরিয়ে দিয়েছেন। রোহিণীদের সাধু মামা ও ‘ত্যাজ্য’ হয়ে যাওয়া দাদা তেজু বাড়ির মেয়ের অসম্মানের প্রতিবাদে অবস্থান নিয়েছেন। লালু-রাবড়ীর আরও তিন কন্যা রাগিণী, চন্দা ও রাজলক্ষ্মীও পটনা ছেড়ে দিল্লি চলে গিয়েছেন।
কী ভাবে এমন নাটকীয় মোড় নিল লালু-পরিবারের দ্বন্দ্ব? আরজেডি-র একটি সূত্রের খবর, গোলমালের সূত্রপাত রোহিণীর একটি মন্তব্যকে ঘিরে। তেজস্বীর প্রচারে থাকার জন্য আগেই পটনায় ছিলেন রোহিণী। ফলপ্রকাশের সময়ে অন্য বোনেরাও চলে এসেছিলেন। ভোটে আরজেডি ধরাশায়ী হওয়ার পরে রাবড়ীর বাড়িতে হাতে-গোনা কিছু লোকজনকে নিয়ে প্রাথমিক পর্যালোচনা বসেছিল। কথার সূত্রে রোহিণী বলেছিলেন, ‘বাইরের লোক যদি ঘরের দখল নেয়, তা হলে এমনই হবে’! তাঁর ইঙ্গিত ছিল সঞ্জয়ের দিকে। ওই সূত্রের দাবি, তেজস্বী তখন প্রশ্ন তোলেন, রোহিণীও কি এই বাড়িতে বাইরের লোক নন? বাবার (লালু) জন্য কিডনি দিয়ে এবং এখনও প্রচারে পরিশ্রম করেও তাঁকে এমন কথা শুনতে হবে কেন, পাল্টা প্রশ্ন তোলেন রোহিণী। তাঁকে বলা হয়, নিজের ‘খারাপ কিডনি’ বাবাকে দিয়ে টাকা তুলেছেন, লোকসভার টিকিট নিয়েছেন। বাদানুবাদে তেজস্বী বলে দেন, বাবা-ছেলের জেল (দিল্লির আদালতে চার্জ গঠন হয়ে আছে) হলে কর্তৃত্ব হাতে নিতে চান রোহিণী! ওই সূত্রের দাবি, বিতণ্ডার মধ্যেই রোহিণীকে দেখানো হয় চপ্পল।
তুলকালামে কোনও পক্ষ নেননি রাবড়ী। তবে সাধু বলছেন, ‘‘দিদির কোনও ব্যাপারে কিছু বলি না। কিন্তু এটা কী হচ্ছে! ওটা রোহিণীরও বাবা-মায়ের বাড়ি, ও কেন বাইরের লোক হবে?’’ আর তেজপ্রতাপের মন্তব্য, ‘‘তেজস্বীর বুদ্ধি গিলে নিয়েছে ওরা! বাবা একটা ইশারা করলে বিহারের জনতা এই জয়চাঁদদের পুঁতে ফেলবে!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)