E-Paper

রুপি ও রুবলের সমস্যা বাড়ছে প্রতিরক্ষা বাণিজ্যে

ইউক্রেন যুদ্ধের পরে আমেরিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন কার্যত একঘরে করে দিতে চেয়েছে পুতিন সরকারকে, তখন ভারত রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য-ঘনিষ্ঠতা ক্রমশ বাড়িয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০৩
Rupee and ruble.

বাণিজ্য পণ্যের দাম মেটানো নিয়ে সমস্যা বাড়ছে। প্রতীকী ছবি।

গত সোমবার দিল্লির মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মন্তুরভ জানিয়েছিলেন, যেহেতু ভারতের দিক থেকে জোগানের অভাব রয়েছে, তাই রুপি-রুবল ব্যবস্থা থাকাটাই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য যথেষ্ট নয়। তাঁরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে চান ও তারপর বিষয়টিতে ভারসাম্য আনতে চান। তাঁর কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, বাণিজ্য পণ্যের দাম মেটানো নিয়ে সমস্যা বাড়ছে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর ভারতের তরফে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের দাম মেটানো নিয়ে সঙ্কট বাড়ছে। সদ্যসমাপ্ত সফরে এই নিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হয়েছে মন্তুরভের। ঘটনা এমন নয় যে, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা বন্ধ রয়েছে। বরং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে রাজনৈতিক ভাবে তৎপর দু’টি দেশই। কিন্তু ডলার-নিষেধাজ্ঞাকে এড়িয়ে কী ভাবে তা এগোনো যায়, সেই পথ খোঁজা হচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের পরে আমেরিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন কার্যত একঘরে করে দিতে চেয়েছে পুতিন সরকারকে, তখন ভারত রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য-ঘনিষ্ঠতা ক্রমশ বাড়িয়েছে। মস্কোও হাত উপুড় করে নয়াদিল্লিকে রেকর্ড পরিমাণ অশোধিত তেল রফতানি করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার রক্তচক্ষুকে এড়িয়ে গিয়েছে ভারত, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে শক্তিক্ষেত্রে নিজের দেশের বিপুল চাহিদা প্রসঙ্গে সওয়াল করে। কিন্তু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে লেনদেন করা যে সমস্যার তা টের পাচ্ছে দুই দেশই। সূত্রের খবর, এক বছরে রাশিয়ার থেকে আনা সরঞ্জামের দাম হিসাবে ২০০ কোটি ডলার আটকে রয়েছে। রাশিয়াকে বরাত দেওয়া রয়েছে দু’টি এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি-সহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ যার মূল্য ১০০০ কোটি ডলার। এই যথেষ্ট বড় পরিমাণ অঙ্ক ডলারে না দিয়ে কী ভাবে মেটানো হবে তার খোঁজ চলছে। রাশিয়া ভারতীয় টাকায় দাম নিতে চায় না। কারণ, তার বিনিময় মূল্যের ওঠাপড়া প্রবল। ভারতও রুবল-এ বাণিজ্য করতে ইচ্ছুক নয়। ভারত অস্ত্রের বিনিময়ে পাওয়া টাকা এখানকার বাজারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে সাউথ ব্লকের বক্তব্য, এই সমস্যা সাময়িক। দু’দেশের কূটনৈতিক সদিচ্ছা প্রবল। বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য সংলাপ মঞ্চে দাঁড়িয়ে গত সোমবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, “এটা ঠিক যে ভারত-রাশিয়া বাণিজ্যক্ষেত্রে ঘাটতির বিষয় নিয়ে ন্যায্য উদ্বেগ রয়েছে। তা কমানোর জন্য রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।”

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী তাঁর সদ্যসমাপ্ত নয়াদিল্লি সফরে ভারতীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, ভারত থেকে সিরিয়া— এই ৭২০০ কিলোমিটার মাল্টিমোডাল করিডরটিকে (আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডর) আরও শক্তিশালী করে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোয় তাঁরা উদ্যোগী। ইরানের বন্দর ও রেলপথকে কাজে লাগানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ নেওয়ার চিন্তাও করছে রাশিয়া। বিনিময়ে এই করিডরের নতুন বাণিজ্য সুবিধা তাদের কাছেও পৌঁছবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Russia India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy