Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine Crisis: ‘সুপার মার্কেট বন্ধ, খাবার সংগ্রহ করে রাখছি, সন্তোষপুরে বাড়ির কথা মনে পড়ছে’

আজ সকালে বাইরে বেরিয়েছিলাম। শহরের চেনা ছবিটাই বদলে গিয়েছে। সুপার মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় লোক প্রায় নেই বললেই চলে। কালই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সবাই যেন নিজেদের রসদ মজুত রাখে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যেন রাস্তায় না পা দেয়।

পূর্ব ইউক্রেনে বিমান আকাশ হানার ছবি ।

পূর্ব ইউক্রেনে বিমান আকাশ হানার ছবি । ছবি: পিটিআই।

শ্রেয়শ্রী শীল
টার্নোপিল (ইউক্রেন) শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:১৫
Share: Save:

কিছু দিন ধরে নানা রকম খবর কানে আসছিল ঠিকই, কিন্তু আমাদের শহরের জীবনযাত্রায় আলাদা করে কোনও বদল তো দেখতে পাইনি। কিন্তু গত চব্বিশ ঘণ্টায় সব বদলে গিয়েছে। ইউক্রেনের পশ্চিমে এই টার্নোপিল শহরে এখন সর্বক্ষণ কী হয়, কী হয় আতঙ্ক!

‘টার্নোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’-তে পড়তে এসে আমরা একটি হস্টেলে (কলেজের নয়) পাঁচ জন ভারতীয় মাস আড়াই হল এক সঙ্গে থাকছি। বাংলা থেকে একা আমিই, বাকিরা অসম এবং তামিলনাড়ুর। রাশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরেই ভাবছিলাম, এ বারে কি হবে! একদিন আগে আমাদের বলে দেওয়া হল, কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, দেশে ‘স্ট্যাটাস এমার্জেন্সি’ ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরে সব ক্লাসই অনলাইন হবে। আমাদের আজ থেকে ফার্স্ট সেমেস্টার-এর পরীক্ষা ছিল। সব পিছিয়ে গেল অনির্দিষ্টকালের জন্য।

ক্লাস অনলাইন হয়ে যাবে শুনেই আমরা দেশে ফেরার টিকিট কাটি। ২৬ ফেব্রুয়ারির জন্য। এখানে তো কোনও বিমানবন্দর নেই। ছ’ঘণ্টার ট্রেন সফর করে পৌঁছতে হয় কিভ-এ। কিন্তু খবর পাওয়া গেল, যদিও বা কিভে পৌঁছতে পারি, বিমান ধরার কোনও সুযোগ নেই। বোমা বিস্ফোরণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দর। কবে কী চালু হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না। আপাতত আমাদের দূতাবাস বিভিন্ন মাধ্যমে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাদের হটলাইনও মেল করে দিয়ে রেখেছে। কিন্তু ফেরার সুযোগ এলেও একা এই পরিস্থিতিতে অত দূর সফর করার মতো মানসিকতা এখন আমাদের নেই। কোনও বিপদ হলে সামলাতে পারব না। তার চেয়ে যখনই ফিরব, পাঁচ জন এক সঙ্গে ফিরব— এ রকমই ভেবে রেখেছি। এখন অপেক্ষা করছি, কবে বিমানবন্দর খোলে এবং আমাদের ফেরার ব্যবস্থা হয়।

আজ সকালে বাইরে বেরিয়েছিলাম। শহরের চেনা ছবিটাই বদলে গিয়েছে। সুপার মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় লোক প্রায় নেই বললেই চলে। কালই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সবাই যেন নিজেদের রসদ মজুত রাখে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যেন রাস্তায় না পা দেয়। আজ ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখলাম, আমরা একা নই। গোটা শহর যেন ব্যাঙ্ক, এটিএমগুলোর সামনে লাইন দিয়েছে। ঠিক যেমনটা দেখেছিলাম আমাদের দেশে নোটবাতিলের পর। কবে কী বন্ধ হয়ে যাবে, কিভের পরে আমাদের এই শহরটাও আক্রান্ত হবে কিনা, সে কথা কেউ বলতে পারে না। তাই খাবার মজুত করার সঙ্গে সঙ্গে টাকাও বাড়িতে রেখে দিতে চাইছেন মানুষ। আমরাও ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে চাল, ডাল, ডিম কিনলাম। কিছু দোকান এখনও খোলা। তারা শেষ মুহূর্তের ব্যবসাটুকু করে নিতে চাইছে। কত দিন এর পর দোকান বন্ধ রাখতে হয়, তার তো ঠিক নেই।

সন্তোষপুরে আমার বাড়ির কথা, বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে। তবুও মন শক্ত করে আছি। ভারত সরকারের কাছে আবেদন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War Indian Student Kyiv
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE