Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Assam

বিশ্বকাপ নয়, এলিন, মিখাইলদের মন পড়ে গুয়াহাটিতে

শুধু আমি নই, নীলোৎপলদের হত্যার ভিডিও গোটা বিশ্বে অনেকে দেখেছে। শিউরে উঠেছে ভারতবর্ষ নিয়ে। ভারতীয়দের অনুরোধ, নিজের দেশের ভাবমূর্তি ফেরানোর দায়িত্ব নিন।

ভারতীয় বন্ধুকে স্মরণ । নিজস্ব চিত্র।

ভারতীয় বন্ধুকে স্মরণ । নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৮ ১৭:১২
Share: Save:

রাশিয়া জুড়ে বিশ্বকাপের উন্মাদনা। কিন্তু মস্কোর এলিন লেমোনাদ, মিখাইল ফেদোসিভদের মন পড়ে চার হাজার কিলোমিটার দূরে এক অচেনা শহরে। মোমের আলো আর ফুলের মালায় ঢাকা ছবিগুলোতে।

প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে তাঁদের। তাই, নীলোৎপল দাস আর অভিজিৎ নাথের মৃত্যুর ন্যায়বিচার চেয়ে রাশিয়াতেও প্ল্যাকার্ড হাতে তুলে নিয়েছেন তাঁরা। ঘটনার ছ’দিন পরেও প্রাণোচ্ছল নীলোৎপলের না থাকাটা মানতে পারছেন না কেউ।

বন্ধু আদিত্য দীক্ষিতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মঞ্চসজ্জা সংস্থা গড়ার পরে প্রতিভাবান নীলোৎপল দ্রুত বড়-বড় সংস্থার হয়ে অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব পেয়েছিল। সেই সূত্রেই তার কাজের পরিধি বাড়তে থাকে দেশে বিদেশে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য তো বটেই, তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়াতেও। ঘনিষ্ঠতা হয় মস্কোর মেয়ে এলিনের সঙ্গে। যাঁর মনে হয়েছে, ‘নীল-এর সঙ্গে কাটানো সময় হৃদয়ে থেকে যাবে চিরদিন’।

এলিন অসমে নীলোৎপল-অভিজিতের মৃত্যুর বিচার চেয়ে গড়া অনলাইন গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন। অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মেও এ নিয়ে জনমত সংগ্রহ করছেন তিনি।

এলিন লেখেন, ‘নীল আশপাশের সকলকে খুশিতে ভরিয়ে রাখত। লাখে একটা অমন ছেলের দেখা মেলে। আঁকা আর গান ছিল ওর প্রাণ। সেই সঙ্গে ভালবাসত বন্ধুদের ভাল ভাল খাবার খাওয়াতে। আমি ও আমার বন্ধুরা কতবার ভারতে গিয়েছি। ভারতীয় অহিংসা ও মানবতার দর্শন আমাদের মুগ্ধ করত। ‘ওঁ’ মন্ত্রে আস্থা ছিল আমার নিজের। আমার বন্ধুরা অন্যদেরও সব সময় ভারত ভ্রমণে উৎসাহ দিত। কিন্তু স্বদেশে, নিজের রাজ্যের মানুষের হাতে নীলোৎপল খুন হয়ে গেল! শুধু আমি নই, নীলোৎপলদের হত্যার ভিডিও গোটা বিশ্বে অনেকে দেখেছে। শিউরে উঠেছে ভারতবর্ষ নিয়ে। ভারতীয়দের অনুরোধ, নিজের দেশের ভাবমূর্তি ফেরানোর দায়িত্ব নিন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে একজোট হয়ে অমানবিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

ছবি: প্রতিবাদে সামিল নীলোৎপলের রুশ বন্ধুরা। নিজস্ব চিত্র।

নীলের অপর রুশ বন্ধু মিখাইল লেখেন, ‘নীল আমার ভাইয়ের মতো ছিল। এত নরম আর উদার মনের মানুষ দেখিনি। গত গ্রীষ্মে ও রাশিয়ায় এসে উৎসব-মঞ্চ সাজাল। একটা ভারতীয় রেস্তোঁরা তৈরির কাজেও হাত লাগিয়েছিল। ও ছিল ভারত-রাশিয়া মৈত্রীর দূত। পরের বছর আমাদের অসম ঘোরাবে বলেছিল। কিন্তু তার আগেই এমন ঘটনা! কোনও সভ্য সমাজে ওভাবে কাউকে মারা হতে পারে, বিশ্বাস হয় না! এখানে অনেকে ওই ভিডিও দেখে বলছেন, আর কোনওদিন ভারতে, অন্তত উত্তর-পূর্ব ভারতে পা দেবেন না। কিন্তু আমি সহমত নই। সেখানকার অনেক মানুষ নীলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে একজোট হয়েছেন। সকলে রাস্তায় নেমেছেন। জানি এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। কিন্তু রাশিয়া থেকে আমরাও আপানাদের সঙ্গে থাকছি’।

আরও খবর: রাজনৈতিক আশ্রয়ের গুঞ্জন ছড়াতেই ব্রিটেন ছেড়ে বেলজিয়ামে নীরব মোদী?

ভয় পাই না, ফের নিজস্বী দুই সুন্দরীর

অভিজিৎ ও নীলোৎপলের বিচার চেয়ে ফেসবুকে যে কমিউনিটি তৈরি হয়েছে, তার সদস্যসংখ্যা এক লক্ষ ৭০ হাজার ছুঁয়েছে। বিদেশের প্রচুর মানুষ সেখানে যোগ দিয়েছেন। চলছে স্বাক্ষর সংগ্রহ। অসমের বিভিন্ন জেলায় স্বতস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ ও প্রার্থনাসভাও চলছে। তেমনই তাইল্যান্ড, আমেরিকাতেও দু’জনের ছবি নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE