এসসিও-র বিবৃতিতে ভারত সই না করায় গোটা বিষয়টি যেন ‘এসসিও বনাম ভারত’ না হয়ে যায়— সে ব্যাপারে দৌত্য শুরু করেছে সাউথ ব্লক। এসসিও-র অন্যতম সদস্য রাষ্ট্র ইরান। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচির সঙ্গে গত রাতে ফোনে এ কথা বুঝিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, নয়াদিল্লির বক্তব্য, চিন, রাশিয়া, বেলারুস বা ইরানের মতো রাষ্ট্রগুলিও কোনও না কোনও সময়ে সন্ত্রাসবাদের শিকার। বিষয়টি এই নয় যে তাদের বিরুদ্ধে কোনও অবস্থান নেওয়া হয়েছে। একমাত্র পাকিস্তানকেই এই গোষ্ঠীর থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছে নয়াদিল্লি এবং সেটি গত কাল জয়শঙ্কর প্রকাশ্যেই বয়ান দিয়ে করেছেন।
প্রশ্ন উঠছে, এসসিও-র বিবৃতিতে যাতে পহেলগাম প্রসঙ্গ থাকে তার জন্য এই গোষ্ঠীর বাকি সদস্য রাষ্ট্র কেন সক্রিয় হল না? ইরানও কেন আগাগোড়া চুপ করে থাকল? সূত্রের বক্তব্য, এর কিছু দিন আগেই ইজ়রায়েল এবং আমেরিকার যৌথ আক্রমণের মুখে যখন এসসিও-তে ইরান এবং গাজ়ার পাশে থেকে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল তখন সেই ভোটদান থেকে বিরত ছিল ভারত। নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না তেহরান, কিন্তু ভারতের ইজ়রায়েল-বিরোধী প্রস্তাব থেকে সরে আসাকে তারাও ভাল ভাবে নেয়নি। তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে এসসিও-র সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকপর্যায়ের ভোটে।
তবে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, আরাঘচির সঙ্গে জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনালাপের পর মেঘ অনেকটাই কেটেছে। সূত্রের খবর, তাঁরা পশ্চিম এশিয়ার জটিল ভূকৌশলগত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন। কথা হয়েছে ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আমেরিকা যে ভাবে পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাইছে তা নিয়েও। এ কথাও মনে রাখা হচ্ছে, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যখন অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী সংঘাত চলছে ইরানের বিদেশমন্ত্রী নয়াদিল্লি এসেছিলেন। বিদেশ মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, ইরান থেকে প্রায় ৪৪০০জন ভারতীয়কে সরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে যুদ্ধের সময়। ইরানের পূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব হত না।
গত কালই আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফকে ফোন করেন, ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ইসলামাবাদকে বারবার বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ইরান প্রশ্নে তারা পাকিস্তানকে সঙ্গে চাইছে। আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ইরান এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে স্থায়ী শান্তি ফেরানো এবং অঞ্চলকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে দু’টি দেশই একজোট হয়ে কাজ করার গুরুত্ব স্বীকার করেছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানকে সঙ্গে রাখা জরুরি মোদী সরকারের কাছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)