অপারেশন সিঁদুর শুরুর তিরিশ মিনিট পরে বিষয়টি ইসলামাবাদকে জানিয়েছিল ভারত। সোমবার সংসদীয় কমিটিতে এ কথা জানালেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কার্যত কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধীকে জবাব দিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘অপারেশন সিঁদুর নিয়ে অসৎ ভাবে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।’
সম্প্রতি কংগ্রেসের তরফে বিদেশমন্ত্রীর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে দাবি করা হয় যে, বিদেশমন্ত্রী বলেছেন ‘অপারেশন সিঁদুর শুরু করার আগে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল।’ কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন, ‘অভিযানের আগে পাকিস্তানকে জানিয়ে দেওয়াটা অপরাধ। ভারত সরকার যে এটা করেছে, তা বিদেশমন্ত্রী খোদ স্বীকার করেছেন।’ সরকারের তরফে তখন বলা হয়েছিল, শুরুর আগে নয় অপারেশন শুরুর কিছু পরে পাকিস্তানকে জানানো হয়। এ দিন বিদেশমন্ত্রীও সে কথাই বললেন।
সূত্রের খবর, এ দিন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেছেন, অপারেশন সিঁদুর শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা পর পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল যে কেবল সন্ত্রাসবাদীদের আস্তানাগুলিকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি এ কথাও তিনি বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, পাকিস্তানই সংঘর্ষবিরতির জন্য অনুরোধ করেছিল। জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘ইসলামাবাদের অনুরোধেই ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমও-র মধ্যে সরাসরি কথা হয়। এর পরই দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি কার্যকর হয়েছিল।”
সূত্রের খবর, সংঘর্ষবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। জয়শঙ্কর কমিটির সদস্যদের জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের উপর কোনও পাল্টা বক্তব্য নেই ভারতের। এই মুহূর্তে বিদেশে ভারতের যে সব সংসদীয় প্রতিনিধিরা গিয়েছেন, তাঁদের কাছে সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে কী তথ্য রয়েছে— এই প্রশ্নও করা হয় বিদেশমন্ত্রীকে। বিদেশমন্ত্রী অপারেশন সিঁদুরের খুঁটিনাটি বিষয়ে এবং দেশের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করেন কমিটির সদস্যদের। পাশাপাশি ভারতের আগামী দিনের কূটনৈতিক কৌশল, বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কেও অবহিত করেন। এ কথাও তিনি বলেছেন যে, সন্ত্রাসবাদের অন্যতম ভরকেন্দ্র, তিনটি বড় জঙ্গিশিবির বাঁচাতে পারেনি ইসলামাবাদ। এর থেকেই তাদের দুর্বলতা স্পষ্ট। পাক সেনার মনোবলে আঘাত করতে পেরেছে ভারতীয় সেনা।
সদ্য ইউরোপের তিন দেশ সফর করে ফিরেছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর শেষ গন্তব্য ছিল জার্মানি। সে দেশের সংবাদপত্রে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার আজ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে পাকিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদকে আক্রমণ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে আমেরিকার মধ্যস্থতার দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন। সংঘর্ষবিরতির জন্য আমেরিকাকে ধন্যবাদ দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করায় বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা যে দিন পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিই, তাদের যুদ্ধবিমান সরঞ্জাম অকেজো করে দিই, তার পরের দিন সংঘর্ষবিরতি হয়। ফলে এই বিরতির জন্য কাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত? ভারতীয় সেনাকে। কারণ ভারতীয় সেনার পরাক্রমেই পাকিস্তান বলতে বাধ্য হয়, আমরা সংঘর্ষ বন্ধ করতে রাজি।” তাঁর কথায়, “আমরা জঙ্গিদের স্পষ্ট বার্তা দিতে পেরেছি যে, এপ্রিল মাসে কাশ্মীরে তারা যে ধরনের হামলা করেছে তার দাম দিতে হবে। সেই সময় পাক সামরিক বাহিনী গুলি চালানো শুরু করেছিল। আমরা আত্মরক্ষার কারণে পাল্টা গুলি চালিয়েছি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)