এনিমি হ্যাজ নো কালার— লিখেছেন আফগানিস্তানের কবি সোমাইয়া। সার্ক লিট ফেস্টে এই কবিতা খুবই প্রাসঙ্গিক। ব্যাগপত্তর সমস্ত গোছান হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষা ছিল শুধু ভিসার। কিন্তু ভিসা অনুমোদন না হওয়ায়, শেষ মুহূর্তে দিল্লিতে এসে পৌঁছতে পারেননি শাহজাদ কাসির, ফাহিন চৌধুরী, আহমেদ সালিন, ফাকির জামান, ইকবাল মহম্মদ চাওলা-সহ মোট ২২ জন পাক সাহিত্যিক। সম্প্রতি দিল্লিতে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সার্ক সাহিত্য সম্মেলনে এ বার যোগ দিতে পারেনি পড়শি দেশ পাকিস্তান। ভারত-পাক রাজনৈতিক চাপানউতোর যেমন ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে দুই দেশের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া বিছিয়ে দিয়েছে, সে ভাবেই সাহিত্যের অঙ্গনেও বেঁধে দিল নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল।
শান্তিকামী ও বিচ্ছিন্নতাবাদে অবিশ্বাসী সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক থেকে শুরু করে গবেষক, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ, এমনকী সার্ক সাহিত্য সম্মেলনের সংগঠক মহল পর্যন্ত বিচলিত। রাজনৈতিক তিক্ততার ঊর্ধ্বে গিয়ে দেশকালের বেড়াজাল টপকে সাহিত্য মানুষকে মানুষের সঙ্গে আরও বেশি জুড়ে দেবে এই অস্থির, নিজস্বীময় সময়ে। এটাই ছিল সার্ক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্দেশ্য। পরবর্তীকালে এই সমস্যার সমাধান হবে। উভয় দেশই সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের আঙিনায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারবে, এই আশাই করেছেন সমস্ত সাহিত্যিক মহল। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘পোয়েট্রি ফাইটিং এগেনস্ট টেররিজম’, ভিসার ক্ষেত্রে শিল্পের জায়গা সীমান্তহীন হওয়া উচিত। লেখক, গায়ক ও শিল্পীদের জন্য সার্ক ভিসা হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই সম্মেলনের চেয়ারম্যান ও লেখিকা অজিত কৌর।
এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিল ফাউন্ডেশন অফ সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড ফেস্টিভ্যাল (ফসওয়াল)। দিল্লির অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ চার দিন ধরে অনুষ্ঠিত হল এই সাহিত্য উৎসব। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা থেকে এসেছিলেন সাহিত্য জগতের বিশিষ্ট মানুষজন।
আরও পড়ুন: গঙ্গাপারে অবতীর্ণ হবেন দ্বিতীয় ‘গঙ্গাপুত্র’, বারাণসী জুড়ে তাই সাজ সাজ রব!
ভাষার জন্য শহিদ হয়েছে শত শত প্রাণ— এই উদাহরণের জন্য বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ সারা বিশ্বে শুধু বাংলা সাহিত্যপ্রেমীই নয়, সকল সাহিত্যপ্রেমী মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৫২-র ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি বাংলাদেশের যে মহান প্রাণদের রক্তে রেঙে উঠেছিল ঢাকার রাজপথ ও ১৯৬১-র ১৯ মে শিলচর স্টেশনে বাংলা ভাষা সরকারি ক্ষেত্র থেকে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে সামিল যে ১১ জন মানুষ পুলিশের গুলির সামনেও অসহায়তা প্রদর্শন না করে মাতৃভাষার জন্য নিজেদের প্রাণ বলিদান দিয়েছিলেন তাঁদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় অধিবেশনের শুরুতে। ভাষা শহিদের স্মরণে এই নীরবতা পালনের প্রস্তাব দেন বাংলাদেশের তরুণ কবি আশরফ জুয়েল।
কথাসাহিত্যিক ও উপন্যাসিক সেলিনা হোসেন আয়োজক কমিটির কাছে অনুরোধ রাখেন উপস্থিত সাহিত্যকগণ শুধুই কবিতা বা তাঁদের গবেষণার পেপার না পড়ে যদি গল্প বা নভেলের সিনপসিস পড়তেন, তা হলে সাহিত্যের মেলবন্ধন আরও দৃঢ়তর হত। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত লেখকেরা যদি তাঁদের বই (ইংরেজি অনুবাদ-সহ) প্রদর্শন বা বিক্রি করার সুযোগ পেতেন তা হলে একে অন্যকে জানার সুযোগও পাওয়া যেত।
পাকিস্তান অংশগ্রহণ না করতে পারলেও এ বছর সার্ক সাহিত্য সম্মেলনে সংখ্যাধিক্য লক্ষ করার মতো। ঢাকা, শ্রীহট্ট, চট্টগ্রাম সমেত বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন তরুণ ও প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকরা। তাঁদের মধ্যে যেমন আছেন ষাটের দশকের কবি-সাহিত্যিক তেমনই আছেন ২০০০-এর প্রথম দিকের নবীন কবি ও লেখকেরা। বাংলাদেশ থেকে কবি নরুল হুদা, আশরফ জুয়েল, জাব্বার আল নিয়াম-সহ মোট ২৬ জন আসেন। আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল থেকে এক ঝাঁক নতুন কবিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এই উৎসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy