Advertisement
E-Paper

রাহুলের বাড়ি গিয়ে ঘরে ফিরলেন সচিন

১৪ অগস্ট থেকে রাজস্থানে বিধানসভার অধিবেশন। সেখানেই কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে আস্থা ভোট হওয়ার কথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০৫:৩৩
প্রিয়ঙ্কাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে গাড়িতে সচিন পাইলট। ছবি: পিটিআই।

প্রিয়ঙ্কাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে গাড়িতে সচিন পাইলট। ছবি: পিটিআই।

ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল। বিদ্রোহে ইতি টেনে কংগ্রেসের ঘাঁটিতেই ফিরে এল সচিন পাইলটের বিমান। সেই ‘ঘর ওয়াপসি’ হল রাহুল গাঁধীর হাত ধরেই।

১৪ অগস্ট থেকে রাজস্থানে বিধানসভার অধিবেশন। সেখানেই কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে আস্থা ভোট হওয়ার কথা। তার আগে আজ সচিন দিল্লিতে রাহুলের সঙ্গে তাঁর তুঘলক লেনের বাড়িতে বৈঠক করেন। হাজির ছিলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও। যিনি আগেই আলাদা ভাবে সচিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বলে সূত্রের খবর। ওই বৈঠকেই সচিনের ‘ঘর ওয়াপসি’-র সমাধানসূত্র তৈরি হয়।

গত ক’দিন ধরেই সচিনের শিবির থেকে কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের কাছে শান্তির বার্তা আসছিল। সচিন বুঝতে পারছিলেন, মাত্র ১৮ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ককে নিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার ফেলা সম্ভব নয়। তাঁর শিবিরের সবাই বিজেপিতে যোগ দিতে রাজি ছিলেন না বলেও খবর। তবে কংগ্রেস হাইকমান্ড সচিনকে ফেরাতে রাজি হলেও আপত্তি ছিল গহলৌতের শিবিরের। রবিবারই বিধায়কদের বৈঠকে দাবি ওঠে, ‘বিশ্বাসঘাতকদের’ যেন ফেরানো না হয়।

আরও পড়ুন: প্রণবের অস্ত্রোপচার, ধরা পড়ল করোনাও

আরও পড়ুন: ১৬ মাসের মধ্যেই রাজনীতিতে ইতি টানলেন শাহ ফয়সল

প্রবীণ-নবীন শিবিরের মধ্যে এই ভারসাম্য রক্ষা করতে আজ রাহুলের সঙ্গে সনিয়া গাঁধীকেও সক্রিয় হতে হয়েছে। সচিনের সঙ্গে ঘণ্টা তিনেকের বৈঠক সেরে রাহুল মুখে মাস্ক লাগিয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়ে দশ নম্বর জনপথে সনিয়ার কাছে যান। তাঁর পিছনের গাড়িতেই হাজির হন প্রিয়ঙ্কা। পুত্র-কন্যার থেকে সব কিছু বুঝে নিয়ে সনিয়া ফোন করেন গহলৌতকে। সূত্রের খবর, সনিয়া তাঁকে জানান, সচিন তাঁর ক্ষোভের কথা রাহুলকে জানিয়েছেন। তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি তৈরি করা হবে। কংগ্রেস সভানেত্রীর কথায় গহলৌত রাজি হয়েছেন বলেই কংগ্রেস সূত্রের দাবি।

পরে কংগ্রেসে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল জানান, সচিন কংগ্রেস ও রাজস্থানের সরকারের স্বার্থে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর তোলা সমস্যার সমাধানে কংগ্রেস সভানেত্রী তিন সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সচিনের মূল দাবি ছিল, গহলৌতকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানো হোক। কিন্তু রবিবার রাতেই কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা সচিনকে জানিয়ে দেন, তার সম্ভাবনা নেই। এর পরেও সচিন জানান, তিনি গাঁধীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি।

সচিনের ‘ঘর ওয়াপসি’-র পরে আপাতত গহলৌত সরকারের গদি নিশ্চিন্ত। কিন্তু গত এক মাসে গহলৌত ও সচিনের মধ্যে তৈরি হওয়া তিক্ততা কী ভাবে মিটবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। গহলৌত ইতিমধ্যেই সচিনকে ‘নিকম্মা’, ‘অপদার্থ’, ‘সুন্দর মুখ, মাথায় কুবুদ্ধি’— এমন বহু কথাই বলে ফেলেছেন। এ দিন অবশ্য তিনি বলেন, পার্টি নেতৃত্ব বিদ্রোহীদের ক্ষমা করলে তিনিও তাঁদের বুকে টেনে নেবেন।

কিন্তু গহলৌতের কথাগুলো যে এখনও তাঁর মনে বিঁধে রয়েছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন সচিন। আজ রাতে কংগ্রেসের ওয়ার রুমে গিয়ে প্রিয়ঙ্কা, বেণুগোপাল এবং আহমেদ পটেলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাজস্থানে সরকার চালনা নিয়ে কিছু নীতিগত প্রশ্ন আমরা তুলেছিলাম। কিন্তু গত কয়েক দিনে আমাদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত স্তরে যে সব মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে আমি বিস্মিত। আমি কিন্তু কোনও অবস্থাতেই শিষ্টাচার লঙ্ঘন করিনি। আমাদের সকলেরই উচিত সংযম বজায় রাখা।’’

তিনি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজস্থানে সরকার ফেলার চেষ্টা করেছেন, এই অভিযোগ সম্পর্কে সচিনের মন্তব্য, ‘‘আমি তো প্রথম থেকেই বলেছিলাম, আমি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি না। আমরা পাঁচ বছর লড়াই করে রাজ্যে বিজেপি-কে ক্ষমতাচ্যুত করেছি। আমাদের কিছু অভিযোগ ছিল। আমি খুশি যে সনিয়াজি, রাহুলজি এবং প্রিয়ঙ্কাজি আমাদের কথা শুনেছেন এবং তিন সদস্যের কমিটি গড়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।’’

তবে কংগ্রেস সূত্রের খবর, সমাধান যা-ই হোক, উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ সভাপতির পদ ফেরত পাচ্ছেন না সচিন। তাঁকে এআইসিসি-তে সাধারণ সম্পাদক করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনা হতে পারে। ওয়ার্কিং কমিটিতেও জায়গা পেতে পারেন। তবে আগামী বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ভোটে যাবে, এমন বার্তাও দেওয়া হয়েছে। তাঁর অনুগামী দুই বিক্ষুব্ধ বিধায়ককে অবশ্য মন্ত্রিসভায় ফেরানোর দাবি তুলেছেন সচিন।

এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, “জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিজেপিতে যোগদান ঠেকাতে কংগ্রেসের হাইকমান্ডের তরফে এই সক্রিয়তারই অভাব দেখা গিয়েছিল। রাহুল নিজে উদ্যোগী হয়ে আবার প্রমাণ করলেন, সভাপতির পদে না-থাকলেও তিনিই দলের চালকের আসনে।” কিন্তু আর এক কংগ্রেস নেতার ব্যাখ্যা, সচিনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজস্থানে সরকার ফেলতে চাইছিল। কিন্তু সচিনের বিজেপিতে আসার ব্যাপারে বসুন্ধরা রাজের সায় ছিল না। সচিনও ১৮ জনের বেশি বিক্ষুব্ধ বিধায়ক জোগাড় করতে না-পেরে বুঝে যান, তাঁর ঘরে ফেরা ছাড়া উপায় নেই।

সচিন হাল ছেড়ে দেওয়ায় হতাশ বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, “ঘোড়া না-দৌড়লে আমরা কী করব!” আর কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “অমিত শাহ হাসপাতাল থেকে ফিরে দেখবেন, ঘোড়া নিজের আস্তাবলে ফিরে গিয়েছে।”

Sachin Pilot Rahul Gandhi Rajasthan Ashok Gehlot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy