E-Paper

শরণার্থী শিবিরে ফিরল সাফ কাপ জয়ী অধিনায়ক

মাতের পৈতৃক বাড়ি মণিপুরের টেংনাওপাল জেলায়। তবে বাবা-মায়ের সঙ্গে সে থাকত ইম্ফলের খোংসাই ভেং এলাকায়। কুকি সম্প্রদায়েক ছেলে মাতে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:২১
Manipur Violence.

গামগৌহৌ মাতে-ভারত লাইরেনজাম। —ফাইল চিত্র।

বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ মুখেরা নেই। নেই সরকারি সংবর্ধনা। নেই দেশকে জিতিয়ে আসা ছেলেদের জন্য কোনও উচ্ছ্বাস! অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ ফুটবলে ভারতকে সদ্য চ্যাম্পিয়ন করে ফেরা দলের অধিনায়ক নিজের রাজ্যে পা রেখেও নিজের ঘরে ফিরতে পারে না। কারণ, পা রাখার ঘরটাই তো আর নেই!

ভুটানের থিম্পুতে সাফ ফুটবলের ফাইনালে বাংলাদেশকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল ভারত। ৮ মিনিটে প্রথম গোল করেছিল বিষ্ণুপুরের নামবোলের মেইতেই কিশোর ভারত লাইরেনজাম। চূড়াচাঁদপুরের কুকি পরিবারের ছেলে লেভিস জাংমিনলাম ৭৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে। দলের ২৩ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ১৬ জনই মণিপুরের— ১১ জন মেইতেই। ৪ জন কুকি। নিজেদের রাজ্য যখন কুকি আর মেইতেইদের সংঘর্ষে অশান্ত, তখন জাতীয় শিবিরে একসঙ্গেই এতদিন থেকেছে ওরা। লড়েছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কিন্তু এ বার নিজেদের রাজ্যে ফিরতেই অধিনায়ক গামগৌহৌ মাতে, ভারত, লেভিস, আব্বাস সিংজামায়ুমরা দেখছে, তাদের অনুপস্থিতিতে কী ভাবে ছারখার হয়ে গিয়েছে সাধের জন্মভূমি।

মণিপুরের সদর হিলে কুকি ছাত্র সংগঠনের দফতরে জাতীয় দলের তিন কুকি খেলোয়াড় গামগৌহৌ মাতে, ভি হাংসিং এবং জে হাওকিপকে সংবর্ধনা জানানো হল।

মণিপুরের সদর হিলে কুকি ছাত্র সংগঠনের দফতরে জাতীয় দলের তিন কুকি খেলোয়াড় গামগৌহৌ মাতে, ভি হাংসিং এবং জে হাওকিপকে সংবর্ধনা জানানো হল। —ফাইল চিত্র।

মাতের পৈতৃক বাড়ি মণিপুরের টেংনাওপাল জেলায়। তবে বাবা-মায়ের সঙ্গে সে থাকত ইম্ফলের খোংসাই ভেং এলাকায়। কুকি সম্প্রদায়েক ছেলে মাতে। টুর্নামেন্ট খেলতে রওনা হওয়ার সময়ে সচ্ছল পরিবার হাসিমুখে বিদায় দিয়েছিল তাকে। আর চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরে সে দেখল, চার দিদি, ভাই ও বোনকে নিয়ে বাবা-মা কোনও মতে কাংপোকপি জেলার শরণার্থী শিবিরে মাথা গুঁজেছেন।

৩ মে রাজ্যে হিংসা ছড়ানোর পরে অন্য কুকি পরিবারের মতো মাতে পরিবারের বাড়িতেও হামলা হয়েছিল। সেই পুরনো ঠিকানায় আর ফেরা হয়নি মাতের। গর্বিত বাবা-মা কাংপোকপির শরণার্থী শিবিরেই স্বাগত জানিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন ছেলেকে। বিধ্বস্ত অধিনায়কের কথায়, “দেশকে জিতিয়ে ফিরে দেখি, আমার রাজ্য আজ মানবিক ও সামাজিক পরাজয়ের গ্লানিতে ডুবে গিয়েছে। যে করে হোক, রাজ্যে দ্রুত শান্তি ফিরে আসুক। আমাদের জাতীয় দলের বন্ধন যেন রাজ্যের মানুষকে সম্প্রীতি ফেরাতে
অনুপ্রাণিত করে।” জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার নেপথ্যে কলকাতার ময়দান কাঁপানো প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার রেনেডি সিংহের অবদানের কথাও বলেছে মাতে।

সরকারি সংবর্ধনা না মিললেও গত কাল বিকেলে সদর হিলে কুকি ছাত্র সংগঠনের দফতরে জাতীয় দলের তিন কুকি খেলোয়াড় মাতে, ভি হাংসিং এবং জে হাওকিপকে সংবর্ধনা জানানো হয়। আসতে পারেনি লেভিস। কুকিদের শীর্ষ সংগঠন কুকি ইনপি মণিপুরের সভাপতি আজাং খোংসাই খেলোয়াড়দের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে তাদের হিংসা, দ্বেষ, মাদকের নেশা থেকে দূরে থেকে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের পরামর্শ দেন। হাংসিং জানায়, রাজ্যে যখন ‘দুঃস্বপ্নের মতো’ সময় চলছে, তখনই দলের প্রশিক্ষক ও বাকিরা তাদের সব দুশ্চিন্তা সরিয়ে রেখে খেলায় মন দিতে সাহায্য করেছেন। রাজ্যের সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের কোনও আঁচ দলের মধ্যে পড়েনি। ওরা একসঙ্গে খেলেছে, ট্রফিটাও নিয়েছে হাতে হাত মিলিয়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Manipur Violence India football

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy