Advertisement
E-Paper

যাঁদের অনেক কিছু লুকোনোর আছে, তাঁরাই সিবিআইকে রাজ্যে ঢুকতে বাধা দেবেন: জেটলি

সিবিআই তদন্তের ‘সাধারণ সম্মতি’ প্রত্যাহার করে সারদা-নারদ তদন্ত আটকানো যাবে না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন অরুণ জেটলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৬
অরুণ জেটলি। ফাইল চিত্র।

অরুণ জেটলি। ফাইল চিত্র।

সিবিআই তদন্তের ‘সাধারণ সম্মতি’ প্রত্যাহার করে সারদা-নারদ তদন্ত আটকানো যাবে না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন অরুণ জেটলি। আজ ভোপালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘যাঁদের অনেক কিছু লুকোনোর রয়েছে, একমাত্র তাঁরাই সিবিআই-কে তাঁদের রাজ্যে ঢুকতে বাধা দেবেন। দুর্নীতির প্রশ্নে কোনও রাজ্যের সার্বভৌম অধিকার থাকতে পারে না।’’

জেটলির এই মন্তব্যের জবাবে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘সিবিআই তো এখন আর সিবিআই নেই। বিজেপির নির্দেশমাফিক চলছে। রাজ্য সরকারকে হেনস্থা করতে, চরিত্র হনন করতে সিবিআই-কে ব্যবহার করা হলে কিছু ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। রাজ্য সরকার সে জন্য যথার্থ পদক্ষেপ করেছে।’’ নবান্ন সূত্রে খবর, ‘সাধারণ সম্মতি’ প্রত্যাহারের নির্দেশিকা আজ সিবিআই-সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

নবান্ন সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ওঠা ৬৯ রকমের অভিযোগের তদন্ত করতে পারে সিবিআই। কিন্তু যেহেতু আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়, তাই কোনও রাজ্যে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুমতি লাগে। প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে রাজ্যগুলি সাধারণত ‘জেনারেল কনসেন্ট’ বা ‘সাধারণ সম্মতি’ দিয়ে রাখে। ১৯৯৮ সালে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী জে এইচ পটেল ওই অনুমতি ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তিন বছর পরে ফের সম্মতি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: প্রথম আয়াপ্পা দর্শনে ছুঁতেই হবে বাবর মসজিদ

অন্ধ্র ও পশ্চিমবঙ্গের সিদ্ধান্তের ফলে এখন ওই দুই রাজ্যে প্রতিটি মামলায় সিবিআই-কে আলাদা করে অনুমতি নিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী সিবিআই অনুমতি চাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্যকে।

তবে রাজ্য নিজেই সিবিআই-কে ডেকেছে এমন মামলা (যেমন তাপসী মালিক হত্যা) বা আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে এমন মামলার ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। সারদা বা নারদ তদন্ত আদালতের নির্দেশেই হাতে নিয়েছে সিবিআই।

(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)

অনেকের মতে, ‘সাধারণ সম্মতি’ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রশাসনিক প্রভাবের চেয়ে রাজনৈতিক নিশানাই বেশি। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে একজোট করতে উদ্যোগী হয়েছেন মমতা। সম্প্রতি এনডিএ ছেড়ে আসরে নেমেছেন চন্দ্রবাবু নায়ডুও। এখন সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে তাঁরা রাজনৈতিক বার্তা দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, কেন্দ্রের শাসক দল সিবিআই-কে ব্যবহার করে বিরোধীদের চাপে রাখতে চায়, এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অতীতে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠত। এখন উঠছে বিজেপির বিরুদ্ধে। সারদা-নারদ তদন্তের পিছনে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি আছে বলে বহু বার অভিযোগ করেছেন মমতা।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, কংগ্রেস কিন্তু এ দিন দলগত ভাবে মমতাদের পাশে দাঁড়ায়নি। পঞ্জাবে দলের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে সিবিআই তদন্তের অনুমতি প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। রাহুল গাঁধী কোনও সিদ্ধান্ত নিলে, সব কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীই তা মানবেন।

কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা, মণীশ তিওয়ারি অবশ্য আইনের যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘‘চন্দ্রবাবু ও মমতা ঠিক কাজ করেছেন। সংবিধানে কেন্দ্রীয় পুলিশের জায়গা নেই।’’ ২০১৩-তে এই কারণেই গৌহাটি হাইকোর্ট সিবিআই-কে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছিল বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। হাইকোর্টের যুক্তি ছিল, আলাদা আইন করে সিবিআই গঠন হয়নি। দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট (১৯৪৬) অনুযায়ী ১৯৬৩-র ১ এপ্রিল সরকারি নির্দেশিকা জারি করে সিবিআই গঠিত হয়। কিন্তু ঘটনা হল, ইউপিএ সরকারই ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। সেই মামলা এখনও ঝুলে রয়েছে।

মমতার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আমরা সিবিআইয়ের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে কাজে লাগানোর প্রশ্ন। কিন্তু সারদা-নারদ তদন্ত আদালতের নির্দেশে হচ্ছে। মমতা চান, সিবিআই তাঁকে সুবিধা দিতে কাজ করুক। আমরা তাই মোদী বা মমতার পক্ষে নই। ন্যায়ের পক্ষে।’’

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল আবার চন্দ্রবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘চন্দ্রবাবু ঠিক কাজ করেছেন। সিবিআই, আয়কর দফতরের অপব্যবহার করছেন নরেন্দ্র মোদী। যারা নোট বাতিল, বিজয় মাল্য, রাফাল, সহারা বিড়লা ডায়েরির মতো দুর্নীতির পিছনে, তাদের সিবিআই ধরছে না কেন?”

সম্প্রতি তেলুগু দেশম পার্টির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে আয়কর দফতর অভিযান চালিয়েছে। চন্দ্রবাবুকে কেজরীর পরামর্শ, আয়কর দফতরকেও রাজ্যে ঢুকতে দেবেন না। জেটলির মন্তব্য, ‘‘ওঁদের বোধহয় জানা রয়েছে, কে কে দুর্নীতিতে জড়িত। কোনও ব্যবস্থা হতে পারে, সেই আশঙ্কাও রয়েছে। তাঁদের বাঁচানোর জন্যই এই পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে।’’

Arun Jaitley CBI Saradha chit fund scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy