অসম চুক্তির ছয় নম্বর দফা রূপায়ণ সংক্রান্ত কমিটির রিপোর্ট আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রহণ করলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও। কেন্দ্রের তৈরি করে দেওয়া এই উচ্চ পর্যায়ের কমিটির রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর গ্রহণ করার কথা থাকলেও তিনি সময় না-দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী রিপোর্টটি গ্রহণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ১৭০ পাতার এই রিপোর্ট তুলে দিতে ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিতে এ দিনই দিল্লি রওনা হন সর্বানন্দ।
কমিটির প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিপ্লবকুমার শর্মা বলেন, ‘‘অসমিয়া কারা, তার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা না-থাকায় অসম চুক্তি অনুযায়ী সাংবিধানিক, রাজনৈতিক রক্ষাকবচ কারা পাবে— তা স্থির করা যাচ্ছিল না। গত বছর ১৫ জুলাই ১৩ সদস্য নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছিল। আমরা ১২০০-র বেশি স্মারকলিপি ও আবেদন পেয়েছিলাম। আমাদের এক্তিয়ারের মধ্যে সর্বসম্মতি ক্রমে সংজ্ঞা তৈরি করেছি।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের সব জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে মানুষের মতামত নিয়েছি আমরা। অসমিয়াদের সাংবিধানিক, সম্পত্তি, চাকরি ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলি এখনই প্রকাশ করা যাবে না।’’
কমিটির কিছু সুপারিশ অবশ্য আগেই সংবাদমধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এবং সেগুলি নিয়ে জোর বিতর্কও তৈরি হয়েছে রাজ্যে। অসমিয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণে ১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরা, রাজ্যে ইনারলাইন পারমিট চালু করা, অসমিয়াদের জন্য জমি-সম্পত্তির অধিকার ও ১০০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সুপারিশ রয়েছে— এই সব তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরে বাঙালি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সমালোচনা ও প্রতিবাদে মুখর।
আরও পড়ুন: মোদী ভাল ইভেন্ট ম্যানেজার, মন্তব্য দিলীপের
কমিটির প্রধান বিপ্লব শর্মা এ নিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের যা ভাল মনে হয়েছে, বলেছি। এর পর সংবিধানের কথা আছে, সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ের ব্যাপার রয়েছে। সুপারিশ কতখানি রক্ষিত হয় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’ রাজ্য সরকারের মুখপাত্র হিমন্তবিশ্ব শর্মার বক্তব্য, যদি সংবিধানের আওতায় থাকে ও আইনসিদ্ধ হয় তবেই কমিটির সুপারিশগুলি অক্ষরে অক্ষরে পালিত হওয়া সম্ভব। কেন্দ্র সরকার সুপারিশগুলি বিবেচনার পরে রাজ্য সরকারের মতামতও চাইতে পারে।
কংগ্রেসের বক্তব্য, রাজ্যের সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই ওই কমিটি নিয়ে সুপরিকল্পিত নাটক মঞ্চস্থ করছে বিজেপি। সুপারিশগুলি আদৌ মানতে চাইছে না কেন্দ্র। তাই রিপোর্ট নিজে গ্রহণ করলেন না অমিত শাহ। রাজ্যে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে আসু। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে রিপোর্ট না-নেওয়াকে কমিটি তথা অসমবাসীর অপমান। তাই কমিটিতে থাকা আসুর তিন সদস্য আজ রিপোর্ট পেশের সময় ছিলেন না। অসম সরকারের অবশ্য বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতেই কমিটিকে রিপোর্ট তুলে দিতে হবে, তেমন নিয়ম নেই। শাহের নির্দেশেই মুখ্যমন্ত্রী রিপোর্ট জমা নিয়েছেন।
কারাবন্দি কৃষক নেতা অখিল গগৈকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘কমিটি গড়ে কেন্দ্র রাজ্যবাসীকে বোকা বানাচ্ছে।’’ সিএএ বাতিলের দাবিতে ১ মার্চ থেকে তিনি কারাগারেই অনশন শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।