গভীর রাতে প্রেমিকার কাছ থেকে মেসেজ পেলেন যুবক, ‘‘আমাকে বাঁচাও। বাড়ির লোকেরা মেরে ফেলবে।’’ পরদিনই বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধার হয় তরুণীর। গুজরাতের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পুলিশ মনে করছে এটি ‘সম্মানরক্ষার্থে’ খুন।
চন্দ্রিকা চৌধরি। বয়স ১৮। বাবা সেধাভাই পটেল এবং কাকা শিবভাই পটেলের বিরুদ্ধে তরুণীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তরুণার কাকা-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু মূল অভিযুক্ত কিশোরীর বাবা পলাতক। ঘটনাটি গুজরাতের বনসকণ্ঠের দাঁতিয়ার। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, চন্দ্রিকার সঙ্গে হরিশ চৌধরি নামে এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাঁরা বিয়ে করার পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু চন্দ্রিকার পরিবারের প্রবল আপত্তি ছিল তাতে। কিন্তু চন্দ্রিকাও বেঁকে বসেছিলেন। জানিয়েছিলেন, বিয়ে করলে হরিশকেই করবেন।
এই সিদ্ধান্তের জেরে যে তাঁর প্রাণসংশয় হতে পারে সেটা আঁচ করতে পারছিলেন চন্দ্রিকা। হরিশকে সে কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। তার পরই তাঁরা দু’জনে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু পালিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করে চন্দ্রিকার পরিবার। তার পর পুলিশ চন্দ্রিকাকে খুঁজে বার করে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়। হরিশ অত্যন্ত উদ্বেগে ছিলেন চন্দ্রিকাকে নিয়ে। তাঁর যাতে কোনও রকম ক্ষতি না হয়, তাই আদালতে একটি মামলা করেন। কিন্তু শুনানির আগেই চন্দ্রিকার দেহ উদ্ধার হয়। আত্মীয়স্বজন, পড়শিদের কাউকে মৃত্যুর খবর না জানিয়েই তড়িঘড়ি চন্দ্রিকার শেষকৃত্য করে তাঁর পরিবার। স্বাভাবিক মৃত্যুর একটি শংসাপত্র বানিয়ে সকলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত্যুর আগের রাতে চন্দ্রিকা মেসেজ করেছিলেন হরিশকে। চন্দ্রিকা লিখেছিলেন, ‘‘আমাকে এসে নিয়ে যাও। বাড়ির লোকেরা অন্য কারও সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক করছে। যদি রাজি না হই, আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাঁচাও আমাকে।’’ গত ২৪ জুন রাতে চন্দ্রিকার করা সেই মেসেজ পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন হরিশ। তিনি অভিযোগ করেছেন, স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, খুন করা হয়েছে তাঁর প্রেমিকাকে। সহকারী পুলিশ সুপার সুমন নালা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে যে, এটি পরিকল্পিত খুন। তরুণীর বাবা এবং কাকা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। কারও স্বাভাবিক মৃত্যু হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ বা চিকিৎসককে দেখানো হয়। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু করা হয়নি। তরুণীর দ্রুত শেষকৃত্য করা হয়। তরুণীর মৃত্যুর খবর কাউকে জানানো হয়নি। এমনকি তাঁর ভাইকেও। আর এখান থেকেই সন্দেহ জাগে, তরুণীর পরিবার কিছু একটা গোপন করছে।
সহকারী পুলিশ সুপার নালা জানিয়েছেন, ২৪ জুন রাতেই চন্দ্রিকাকে খুন করা হয়। তাঁর মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে চালানোর জন্য তিনস্তরীয় পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘তরুণীকে প্রথমে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয়। তরুণী অচৈতন্য হয়ে পড়লে তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। যেন মনে হয় তরুণী আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পরদিন সকালে পাশের বাড়ির লোকজনকে জানানো হয় যে, হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ায় চন্দ্রিকার মৃত্যু হয়েছে। তড়িঘড়ি মৃত্যুর শংসাপত্র বানিয়ে তরুণীর শেষকৃত্য করা হয়।’’