অভিনব: থার্মোকলের পাত ভাসিয়ে বাষ্পায়ন রোখার চেষ্টা। ছবি: পিটিআই।
আজব কাণ্ড করেছেন তামিলনাড়ুর সমবায় মন্ত্রী। সূর্যের ‘কোপ’ থেকে জল ‘বাঁচাতে’ গোটা জলাধার থার্মোকলের শিট দিয়ে ঢেকে দেওয়ার অভিযান চালালেন তিনি। এর জন্য সরকারি তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকার থার্মোকল শিট কিনে আক্ষরিক অর্থেই জলে দিলেন তিনি। যাকে পণ্ডশ্রম আর বিপুল অপচয় ছাড়া আর কিছুই বলতে নারাজ পরিবেশবিদেরা। রাজনীতির লোকজন বলছেন, বালতি দিয়ে সাগর ছেঁচার চেয়েও বেশি হাস্যকর কাজ করেছেন মন্ত্রী সেল্লুর কে রাজু।
খরায় পুড়ছে তামিলনাড়ু। বলা হচ্ছে, এমন খরা ১৪৮ বছরের মধ্যে দেখেননি এ রাজ্যের মানুষ। শুকিয়ে যাচ্ছে জলাশয়গুলি। রোদের তাপে জল যাতে বাষ্প হয়ে উড়ে না-যায়, তার ব্যবস্থা করতে গিয়ে সেল্লুর সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানান, মাদুরাইয়ের ভৈজয় নদীর উপরে বাঁধ দিয়ে তৈরি যে জলাধার রয়েছে তার জল বাঁচাতে চান তিনি। যেমন বলা তেমনই কাজ। সেল্লুর আজ ওই জলাধারের পাশে জড়ো হন সদলবল। তার পর একের পর এক ভাসাতে থাকেন থার্মোকলের শিট। হাওয়ার দাপটে, ঢেউয়ের দোলায় সেগুলি জলতল ঢেকে রাখার বদলে তীরের দিকে ভেসে চলে আসে। এতে অবশ্য দমে যাননি সেল্লুর। তিনি নিজে নেমে পড়েন জলে। তীরের দিক থেকে থার্মোকলগুলিকে জলে ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। এই করতে গিয়ে কিছু থার্মোকল ভেঙে যায়। কিছু টুকরো উড়েও যায়।
মন্ত্রী জানান, এই খরা পরিস্থিতিতে যে কোনও রকম ভাবে জল সংরক্ষণ করা জরুরি। জলের উপর থার্মোকলের পাত ভাসিয়ে জলের বাষ্পায়ন আটকানোর এই পদ্ধতি বিদেশে চালু রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘‘এই কাজের জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার।’’
আরও পড়ুন: গরু পাচার, বিজেপির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ সিপিএম
আদপে এই বিষয়টি অর্থহীন বলেই মনে করছেন রাজনীতিক ও পরিবেশবিদেরা। কারণ তথ্য বলছে, খালের উপরে মাচার মতো করে সোলার প্যানেল বসিয়ে জল বাঁচানো যায়। পশ্চিমবঙ্গে ডিভিসির খালের উপরে এমন ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। গুজরাতে এমনটা রয়েছে আগে থেকেই। তাতে সৌরবিদ্যুৎ যেমন মিলছে, তেমনই সরাসরি রোদ না পড়া জলের বাষ্প হয়ে যাওয়াও কমছে। পরিবেশবিদেরা বলছেন, থার্মোকলের মতো কিছু দিয়ে ছোট ছোট চাষের পুকুরেও জল ঢেকে রাখা যেতে পারে। কিন্তু এই পদ্ধতি বড় বাঁধ বা নদীর ক্ষেত্রে একেবারেই কাজে আসে না। পলকা থার্মোকলের টুকরো দিয়ে তো নয়ই।
মাদুরাইয়ের জেলাশাসক কে বীর রাঘব রাও কিন্তু এই পদ্ধতিকে সমর্থন করে বলেছেন, ‘‘পরীক্ষা করে দেখা যেতেই পারে। পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা সম্ভব, এই পদ্ধতি আদৌ কার্যকর কি না। শুধু থার্মোকলের নতুন শিট নয়, থার্মোকলের প্লেট এবং বলকেও এই কাজে লাগানো যেতে পারে।’’ এই থার্মোকল যে জলদূষণ ঘটাবে? রাঘব রাওয়ের জবাব, থার্মোকলগুলিকে জলে ভাসানোর পরেও কী ভাবে ফের ব্যবহার করা যায় তা দেখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy