নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় এবং ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে তিন শিশু, ১৪ মহিলা-সহ অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অনেকে। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, শনিবার রাত ১১টা নাগাদ ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে চার জন মহিলা অজ্ঞান হয়ে যান। তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, নয়াদিল্লি রেলস্টেশন চত্বরে পরিস্থিতি সামাল দিতে পরে দমকলের চারটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তার কিছু ক্ষণ পরে হতাহতের খবর প্রকাশ্যে আসে। প্রথমে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। পরে দিল্লি পুলিশ ১৮ জনের প্রাণ হারানোর খবর নিশ্চিত করেছে।
রেলের তরফে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে রবিবার। মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া, শনিবারের ঘটনায় যাঁরা গুরুতর জখম, তাঁরা পাবেন আড়াই লক্ষ টাকা। যাঁদের আঘাত সামান্য, তাঁদের এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনের ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল। ওই দুই প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছিল বলেও যাত্রীদের অভিযোগ। কেউ কেউ দাবি করতে থাকেন, দু’টি ট্রেন বাতিল হয়ে গিয়েছে। ফলে ভিড়ের মধ্যে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনেকেই দাবি করেন, পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায় ওই দুই প্ল্যাটফর্মে । রেলের দাবি এই সবই গুজব ছিল।
এই ঘটনার পরেই শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “পদপিষ্টের ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে প্রশাসন।” শোক প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও। উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি।
শোক প্রকাশ করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “স্টেশনে পদপিষ্টের ফলে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।” পাশাপাশি, তিনি মৃত পরিবারদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্টের ঘটনায় মৃত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। মুখ্যসচিব ও পুলিশ কমিশনারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
আরও পড়ুন:
যদিও উত্তর রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক এএনআইকে জানিয়েছেন, নয়াদিল্লি স্টেশনে কোনও পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেনি। গুজব ছড়ানোর কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি। রেলের ওই কর্তা জানান, প্রয়াগরাজে যাওয়ার জন্য দু’টি স্পেশ্যাল ট্রেন চালানো হচ্ছে।
রেল মন্ত্রক থেকে জানানো হয়, রেল পুলিশ এবং দিল্লি পুলিশের দল নয়াদিল্লি স্টেশনে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি মন্ত্রকের। এই ভিড়ের মধ্যে পড়ে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় রেল মন্ত্রক।
রেল পুলিশের ডিসি বলেন, “প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ১৪ নম্বর স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। স্টেশনে প্রচুর মানুষের ভিড় ছিল সেই সময়ে। স্বতন্ত্র সেনানি এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস দেরিতে ছিল। তাই ওই দুই ট্রেনের যাত্রীরাও ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন। ১৫০০ জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই কারণেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।”