E-Paper

ঘৃণার বৃষ্টি মেঘালয়কে ঘিরে, মনের কালো মেঘ কাটবে কি

প্রধানমন্ত্রীর সাধের ‘অষ্টলক্ষ্মী’ নিয়ে ভারতের তথাকথিত মূল ভূখণ্ডের মানুষের অজ্ঞতা, তাচ্ছিল্য ও ঘৃণার মানসিকতা এখনও কতটা প্রবল— রঘুবংশী-রহস্যেই তা ফের প্রকট হল।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৫ ০৮:৪৪
স্বামী রাজা রঘুবংশীর সঙ্গে সোনম রঘুবংশী।

স্বামী রাজা রঘুবংশীর সঙ্গে সোনম রঘুবংশী। —ফাইল চিত্র।

শিলং! সেটা আবার কোথায়?

মেঘালয়ে!

মেঘালয়টা কোথায়?

অসমের কাছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে!

সেখানে দেখার কী আছে?

ওখানে চা তৈরি হয়।

কাল্পনিক কথোপকথন নয়। ২০১৬ সালের সাড়া জাগানো ছবি ‘পিঙ্ক’-এর সংলাপও নয়। ইন্দোরে রঘুবংশী পরিবারের নতুন পুত্রবধূ সোনম রঘুবংশী যখন নিজেই অসম যাওয়ার টিকিট কেটে বাড়িতে সে কথা জানিয়েছিলেন, আকাশ থেকে পড়েছিল রঘুবংশী পরিবার। এত ভাল ভাল জায়গা থাকতে অসম-মেঘালয় কেন? খোদ রাজা রঘুবংশীর মা উমা রাজবংশী আজ এই কথোপকথনের কথা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাধের ‘অষ্টলক্ষ্মী’ নিয়ে ভারতের তথাকথিত মূল ভূখণ্ডের মানুষের অজ্ঞতা, তাচ্ছিল্য ও ঘৃণার মানসিকতা এখনও কতটা প্রবল— রঘুবংশী-রহস্যেই তা ফের প্রকট হল।

২৩ মে রাজা ও সোনম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে মেঘালয়ের মানুষদের নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য সমাজমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে মেঘালয়ের ভাবমূর্তি যত না নষ্ট হয়েছে, তার চেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে এই তথাকথিত ‘মূল ভূখণ্ড’-এর মানসিকতা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিয়ম করে গলায় অসমিয়া গামোসা জড়িয়ে, ‘মন কি বাত’-এ তুলে ধরেন এখানকার কথা। অথচ ঠিক তখনই একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা উত্তর-পূর্বকে এক বন্ধনীতে টেনে ‘জংলি আর জঙ্গিদের রাজ্য’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার ধুম দেখিয়ে দিল— ‘চিকেন নেক’-এর ও পারের অংশ নিয়ে এখনও কতটা অন্ধকার জমে রয়েছে দেশের বাকি অংশের মনে।

সোনমের খোঁজ যত দিন মেলেনি, তত দিন সোনম ও রাজার পরিবার নাগাড়ে বলে গিয়েছে, খাসিরা ‘সমাজবিরোধী’, সেখানে আকছার ডাকাতি ও অপহরণ হয়। খাসিরাই নাকি রাজাদের ‘হত্যাকারী’! এমনও দাবি করা হয়েছিল, সোনমকে অপহরণ করে বাংলাদেশে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে! মেঘালয় পুলিশ এব‌ং সরকারকেও তুলোধোনা করেছে রঘুবংশী পরিবার ও তাদের পরিচিতেরা।

মেঘালয়ের উপমুখ্যমন্ত্রী প্রেস্টন টিংসং আজ বলেন, “ঘটনার জেরে যে ভাবে দেশ-বিদেশে মেঘালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে, তা খুব দুঃখজনক। রঘুবংশী পরিবার হয়তো হতাশায় নানা কথা বলেছেন। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে অকারণে নিম্ন মানের মন্তব্য করা হয়েছে মেঘালয়কে নিয়ে।” পূর্ব খাসি পাহাড়ের এসপি বিবেক সিয়েম বলেছেন, “অনেকেই রাজ্যবাসীকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক ও ঘৃণ্য মন্তব্য করেছেন। এমনকি, ভিন্ রাজ্যে থাকা মেঘালয়ের মানুষকে আক্রমণ করারও ডাক দিয়েছেন। এই ধরনের অনেকের বিরুদ্ধে আমরা এফআইআর দায়ের করেছি।” মন্ত্রী এ এল হেক-এর দাবি, “এত দিন ধরে রাজা রঘুবংশীর পরিবার মেঘালয় পুলিশ এবং সরকারকে নাগাড়ে দোষারোপ করছে। তারা ধরেই নিয়েছিল, মেঘালয়ের মানুষই হত্যাকারী। যারা মেঘালয় এবং এখানকার জনগণের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা উচিত।”

আশ্চর্যের কথা, সোনম আত্মসমর্পণ করার পরেও রঘুবংশী পরিবারের মেঘালয়-নিন্দা কিন্তু থামেনি। সোনমের বাবা দেবী সিংহ দাবি করেন, “সোনমকে ফাঁসানো হচ্ছে। মেঘালয় সরকার প্রথম থেকেই মিথ্যাবাদী। মেঘালয় পুলিশ নিজের দোষ ঢাকতে আমার মেয়ের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।” নিহত রাজা রঘুবংশীর দাদা বিপিন রঘুবংশীও দাবি করছেন, “মেঘালয় সরকার ও পুলিশ এত মিথ্যে বলেছে যে, সোনম যত ক্ষণ নিজের মুখে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার না-করছে, তত ক্ষণ আমরা কেউ ওকে দোষী বলে মানব না।” তাঁর অভিযোগ, “মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী বলে গিয়েছেন, রাতদিন সোনমের সন্ধান চলছে। কিন্তু দিনে বড়জোর আট ঘণ্টা তল্লাশি চলেছে। রবিবার সারা দিন কেউ খোঁজেনি। সোনমের ভাই গোবিন্দ গত চার দিন ধরে চেরাপুঞ্জিতে বসে এসপি বিবেক সিয়েমকে ফোন করছিল। তিনি ফোন ধরেননি। গোবিন্দ হামলার আশঙ্কা করে পুলিশের কাছে নিরাপদ জায়গা চাইছিল, তা-ও দেয়নি পুলিশ। তাই মেঘালয় পুলিশের কথায় আমরা ভরসা করি না। আমরা সিবিআই তদন্ত চাই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Meghalaya Murder Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy