Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Shehbaz Sharif

Modi-Shehbaz: ‘শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চাই’, বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে মোদীকে চিঠি শাহবাজের

পারস্পরিক এই সম্পর্কের আবহে শাহবাজ়ের চিঠির পরে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি নিয়ে তাঁর চেষ্টার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৩৩
Share: Save:

ফের ভারতের উদ্দেশে বন্ধুত্বের বার্তা দিলেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ।

এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তাঁকে লেখা চিঠির জবাবে পাল্টা চিঠি লিখে দু’দেশের মধ্যে সৌভ্রাত্রের বার্তা দিলেন শাহবাজ়। চিঠিতে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চাই। অর্থবহ একটি আলোচনার মাধ্যমেই তা হতে পারে।” সূত্রের খবর, পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর লেখা এই চিঠি শনিবার পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। ওই চিঠিতে শাহবাজ় একই সঙ্গে লিখেছেন, ”পাকিস্তান আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ় শরিফ। দীর্ঘ দিন পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের দায়িত্বভার সামলানোর পরে দাদা নওয়াজ়ের শূন্যস্থানে পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতিতে পা দিয়েই সাড়া ফেলেন। দিন কয়েক আগে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার পরে নিজেই বসেছেন পাক প্রধানমন্ত্রীর গদিতে। শরিফ পরিবারের সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক বেশ ভাল। সেই সূত্রেই কয়েক বছর আগে নওয়াজ় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ সফর সেরে ফেরার পথে কার্যত বিনা নোটিসে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন মোদী। তা নিয়ে ভারতে বিরোধীরা কটাক্ষও করে। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ভারতের উদ্দেশে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছিলেন শাহবাজ়। তাঁকে টুইটারে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন মোদীও।

মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে ক্রমশ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলায় বহু সেনা-জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানের মদতেই জঙ্গিরা ওই হামলা চালায় বলে অভিযোগ এনে সরব হয় ভারত। পুলওয়ামায় সেই হামলার জবাব দিতে ওই ঘটনার কয়েক দিন পরেই, সে বছর মার্চের গোড়ায় পাকিস্তানের বালাকোটে বিমানহানা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। ফলে দু’দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ওই বছরই অগস্টে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ধারা ৩৭০ প্রত্যাহার করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদাও তুলে নেওয়া হয়। এর পরেই দু’দেশের সম্পর্ক কার্যত তলানিতে এসে ঠেকে। দু’দেশই দূতাবাস থেকে কূটনীতিক এবং কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদে দু’দেশের দূতাবাসে বর্তমানে পূর্ণ সময়ের জন্য হাইকমিশনারও নেই।

পারস্পরিক এই সম্পর্কের আবহে শাহবাজ়ের চিঠির পরে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি নিয়ে তাঁর চেষ্টার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে নয়াদিল্লি। নতুন পাক প্রধানমন্ত্রীর তরফে এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন মোদী সরকারের কর্তারা। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি সরকারের কোনও কর্তাই।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পরে গত ১১ এপ্রিল শাহবাজ় শরিফ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন। প্রতিবেশী দু’দেশই যাতে দারিদ্র এবং বেকারত্ব দূরীকরণে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে পারে, সে আবেদনও জানান তিনি। অন্য দিকে শাহবাজ় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদী বলেন, ‘‘ভারত এমন এক অঞ্চল চায়, যেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকবে। সেই জায়গা হবে সন্ত্রাসমুক্ত। যাতে আমরা আমাদের উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলিতে মনোযোগ দিতে পারি। আমাদের জনগণের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারি।”

এ বারে শাহবাজ়ের চিঠির পরে অনেকেই মনে করছেন, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাধ্যবাধকতা থেকে দুই প্রধানমন্ত্রীই পরস্পরের প্রতি শান্তির বার্তা দিলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে মূল কাঁটা পাকিস্তানি জঙ্গিদের লাগাতার ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ এবং কাশ্মীর। এর মধ্যে জঙ্গি প্রসঙ্গে পাকিস্তান বরাবরই নিজেদের দায়িত্ব অস্বীকার করেছে। দীর্ঘদিনের রাজনীতিক শাহবাজ়ও তার ব্যতিক্রম হবেন না। আর কাশ্মীর এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে কোনও রকম নরম মনোভাবে দেখালে পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতিতে বিপুল চাপে পড়ে যাবেন শাহবাজ়। একই অবস্থা মোদীরও। এ দেশে ভোট এলেই মোদী তথা শাসক বিজেপি পাকিস্তান-বিরোধিতার সুর সপ্তমে নিয়ে যায়। এই অবস্থায় দুই নেতা কোন পথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি করতে পারেন, সে দিকেই নজর সব মহলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shehbaz Sharif Narendra Modi Indo Pak Relation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE