হচ্ছিল ফের জোড়-বিজোড়ের ঘোষণা। উড়ে এল জুতো।
বছরের শুরুতে দিল্লিরই ছত্রশাল স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের মুখে কালি ছিটিয়েছিলেন এক যুবতী। তার আগে ভোটের প্রচারের সময় এক জন কেজরীবালকে থাপ্পড়ও মেরেছিলেন। আজ একেবারে দিল্লি সচিবালয়ের মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে জুতো ছুড়লেন বেদ প্রকাশ নামের এক যুবক। ওই ঘটনার পরেই আম আদমি পার্টির নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপির মদতেই এই কাজ হয়েছে। বেদ প্রকাশ জুতো ছোড়ার আগে দিল্লির এক বিজেপি নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন।
১৫ এপ্রিল থেকে ফের ১৫ দিনের জন্য দিল্লিতে জোড়-বিজোড় নম্বরের ভিত্তিতে গাড়ির উপর বিধিনিষেধ চালু হচ্ছে। জোড় তারিখে শুধু জোড় নম্বরের গাড়িই চলবে। বিজোড় তারিখে বিজোড় সংখ্যার গাড়ি। আজ তার নিয়মকানুন ঘোষণা করতেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন কেজরীবাল। সঙ্গে ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়া ও পরিবহণ মন্ত্রী গোপাল রাই। সম্মেলন শুরু হতে না হতেই পিছনের সারি থেকে পিঠে ব্যাকপ্যাক নিয়ে চশমা পরা এক যুবক প্রশ্ন তোলেন, তিনি যে স্টিং অপারেশন করে কেজরীবালকে দিয়েছিলেন, উনি তার জবাব দিচ্ছেন না কেন? বেদ প্রকাশ নামে ওই যুবক দাবি করেন, সিএনজি গাড়ি জোড়-বিজোড়ের বিধিনিষেধের বাইরে। কিন্তু সিএনজি স্টিকার বণ্টন নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। সেই দুর্নীতি ফাঁস করে স্টিং অপারেশনের সিডিও তাঁর কাছে রয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ওই স্টিং অপারেশনের সিডি পেলেও কোনও জবাব দেননি। এর পরেই প্রথমে কেজরীবালের দিকে সিডি ছোড়েন ওই যুবক। তার পরে ছোড়েন জুতো। বেদ প্রকাশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উপস্থিত সরকারি কর্মীদের তৎপরতায় মুখ্যমন্ত্রীর গায়ে জুতো লাগেনি। কিন্তু এই ঘটনার পরেই রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়। প্রথমে কংগ্রেস, বিজেপি-সহ সব দলের নেতারাই এই ঘটনার নিন্দা করেছিলেন। কিন্তু এর পরেই আম আদমি পার্টির বিধায়ক তথা মন্ত্রী কপিল মিশ্র অভিযোগ তোলেন, ওই যুবক ঘটনার আগেই দিল্লির এক বিজেপি নেতাকে ফোন করেছিলেন। তদন্ত করে ওই বিজেপি নেতার নাম প্রকাশ করা হোক।
আপের নেতারা অভিযোগ করেন, আসলে জোড়-বিজোড় কর্মসূচির সাফল্যে হতাশ হয়েই এ ভাবে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা চলছে। জানুয়ারি মাসে প্রথম জোড়-বিজোড় কর্মসূচির সাফল্যের পরে ছত্রশাল স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানেও একই কারণে ভাবনা অরোরা নামে এক মহিলা কেজরীবালের দিকে কালি ছিটিয়েছিলেন। ভাবনা ও বেদ প্রকাশ, দু’জনেই নিজেদের আম আদমি সেনার সদস্য বলেও দাবি করেছেন। আপেরই কিছু বিক্ষুব্ধ সদস্য এই দল তৈরি করেছিলেন। আপের অভিযোগ, এই সেনার শিকড়ও বিজেপির দফতরেই রয়েছে। দিল্লি বিজেপির নেতা আর পি সিংহ পাল্টা অভিযোগ তোলেন, ওই যুবক ঘটনার আগে মনীশ সিসৌদিয়ার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁর যুক্তি, পি চিদম্বরমের দিকে জুতো ছুড়ে বিখ্যাত হওয়া জার্নেল সিংহকে আপই প্রার্থী করেছিল। তারাই এই ধরনের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয়।
এই হট্টগোলের পরেও কেজরীবাল অবশ্য সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় জোড়-বিজোড় চালু হওয়ার পর প্রতি মাসেই ১৫ দিনের জন্য এই বিধিনিষেধ চালুর কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। এ বার স্কুলপড়ুয়াদের পৌঁছে দেওয়ার গাড়িকেও ছাড় দেওয়া হবে।