ঘটনাস্থল ১৪ এবং ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। সংযোগরক্ষাকারী ওভারব্রিজে এখনও হুড়োহুড়ির ছাপ স্পষ্ট। যে দিকেই চোখ যায় সিঁড়ি জুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে রয়েছে জুতো, ব্যাগ, জামাকাপড়। এই ছবিই বলে দিচ্ছে শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনের ঘটনার ভয়াবহতা। কেউ স্বজনের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার স্বজনের খোঁজে হাসপাতালে ছুটছেন। রবিবার সকালে স্টেশনে স্পষ্ট শনি রাতের ভয়াবহতার ছবি। কুম্ভের পদপিষ্টের ঘটনার দু’সপ্তাহের মধ্যে আরও একটা পদপিষ্টের ঘটনার সাক্ষী রইল দেশ। ঘটনাচক্রে, এ বারও সেই কুম্ভমেলাকে কেন্দ্র করেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েক হাজার যাত্রী জড়ো হয়েছিলেন স্টেশনে। ট্রেনের জন্য যাত্রীদের একাংশ অপেক্ষা করছিলেন প্ল্যাটফর্মে। আবার বেশির ভাগই দাঁড়িয়ে ছিলেন ওভারব্রিজে। কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দেবে এই অপেক্ষায়। তার মধ্যেই ঠেলাঠেলি চলছিল। প্ল্যাটফর্মগুলিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। একই অবস্থা ছিল ওভারব্রিজেও। কেউ মাথায় ব্যাগ নিয়ে, কেউ কাঁধে সন্তানকে চাপিয়ে, ভিড় ঠেলে এগোনোর চেষ্টা করছিলেন। কেউ গোটা পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে, কেউ আবার একা, কেউ আবার বন্ধুদের নিয়ে কুম্ভের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন।

দুর্ঘটনাস্থল। ছবি: সংগৃহীত।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্টেশনের পুরো ছবিটাই বদলে গিয়েছিল। কয়েক হাজার যাত্রী হাজির হয়েছিলেন স্টেশনে। তাঁদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল পুলিশ এবং নিরাপত্তারক্ষীরা। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রেলপুলিশের তরফে বার বার ভিড় ফাঁকা করার অনুরোধ করা হচ্ছিল যাত্রীদের কাছে। কিন্তু ভিড় এতটাই বেশি হয়েছিল যে, সেই চাপ সামাল দিতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছিল পুলিশকর্মীদের। রাত তখন ৯টা। আচমকাই ওভারব্রিজ দিয়ে যাত্রীদের ভিড় হুড়মুড়িয়ে নামতে শুরু করে। আর তখনই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।

ট্রেনে ওঠার জন্য ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ি যাত্রীদের। নয়াদিল্লি স্টেশনে শনিবার রাতে। ছবি: পিটিআই।
রেলের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কেপিএস মলহোত্র জানিয়েছেন, প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই বিপুল সংখ্যক যাত্রী ওই প্ল্যাটফর্মে চলে আসেন। স্বতন্ত্র সেনানী এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস দেরি করায় সেই ট্রেনের যাত্রীরাও ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ভিড় জমিয়েছিলেন। ফলে একসঙ্গে কয়েক হাজার যাত্রী ওই তিনটি প্ল্যাটফর্মে হাজির হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যাত্রীদের কেউই পুলিশকে সহযোগিতা করছিলেন না বলে দাবি রেলপুলিশের ডেপুটি কমিশনার। তার মধ্যে ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরাও হুড়মুড়িয়ে নামতে শুরু করেন। আর তাতেই পদপিষ্ট হন অনেকে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মহিলা এবং শিশু মিলিয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। কী ভাবে এই দুর্ঘটনা, তার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।