Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জন্মদিনে উল্লাসকরকে স্মরণ করলেন শিলচরের মানুষ

ফাঁসির সাজা শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই উল্লাসকর দত্ত গেয়ে উঠেছিলেন ‘সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে।’ আজ শিলচরে এই গানেই সূচনা হয় বিপ্লবীর ১৩২-তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানের। শহরের বিশিষ্টজনেরা তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান করেন। উপস্থিত ছিল বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রীও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৩
Share: Save:

ফাঁসির সাজা শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই উল্লাসকর দত্ত গেয়ে উঠেছিলেন ‘সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে।’ আজ শিলচরে এই গানেই সূচনা হয় বিপ্লবীর ১৩২-তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানের। শহরের বিশিষ্টজনেরা তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান করেন। উপস্থিত ছিল বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রীও।

অনুষ্ঠানে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রাক্তন বিধায়ক দীপক ভট্টাচার্য, কাছাড় কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুখময় ভট্টাচার্য, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্যামলকান্তি দেব, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বাদল দে, জনসংযোগ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম অধিকর্তা হারাণ দে, সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য, পরিতোষ দে ও নমিতা গোয়ালা।

তাঁদের স্মৃতিচারণায় তাঁরা বলেন, বোমা তৈরির অভিযোগে ফাঁসির সাজা হয়েছিল উল্লাসকর দত্তের। পরে আপিল মামলায় তা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন উল্লাসকর। আন্দামানের কারাগারে অমানুষিক নির্যাতন করা হয় তাঁর উপর। এতে তিনি অর্ধোন্মাদ হয়ে পড়েন। তাই ১১ বছর কারাবাসের পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। কলকাতা ফিরে আশ্রয় নেন রামমোহন লাইব্রেরির বারান্দায়। সেখানেই শুনতে পান, তাঁর এককালের প্রেমিকা লীলা পাল বিধবা, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে হাসপাতালে। ছুটে যান তাঁর কাছে। বিয়ে করেন দু’জনে। একজন ৬২ বছরের অর্ধোন্মাদ। অন্যজন হাঁটতে-চলতে পারেন না। লীলা দেবীর বয়স তখন ৫৭। দু’বছর লাইব্রেরির বারান্দার কোণেই দিন কাটান তাঁরা।

শ্যামল দেব, পরিতোষ দে-রা জানান, কলকাতায় দু’বছর কাটালেও তাঁরা সংসার পাতেন শিলচরে এসে। একদিন অসুস্থ স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জাহাজে করে এখানে আসেন উল্লাসকর। বাকি জীবন এখানেই কাটে তাঁদের। ১৯৬২ সালে লীলাদেবী ও ১৯৬৫ সালে উল্লাসকর দত্ত শিলচরেই প্রয়াত হন।

তাঁর মত মহান বিপ্লবী কী ভাবে শেষ জীবনে স্ত্রীর সেবায় দিন কাটিয়েছেন, আজ বিভিন্ন বক্তার আলোচনায় তা উঠে আসে। তবে তাঁদের আক্ষেপ, জেলে তাঁকে মেরে অর্ধোন্মাদ করে দেওয়ায় তাঁর সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের বিশেষ কিছু জানার সুযোগ নেই। একমাত্র অশোক মুখোপাধ্যায় তাঁকে নিয়ে গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেছেন। তাতেও বিপ্লবীর শিলচরের দিনগুলির উল্লেখ নেই। পরে ২০০১ সালে সুখময় ভট্টাচার্য লেখেন ‘সাগ্নিক উল্লাস’।

সুখময়বাবু আজ বলেন, উল্লাসকর কেন বৃদ্ধাবস্থায় তাঁর অথর্ব পত্নীকে নিয়ে শিলচরে এসেছিলেন, কী ভাবে এখানকার মানুষ তাঁর আসার খবর পেয়েছিলেন, তা আজও রহস্যাবৃত। শুধু জানা গিয়েছে, স্টিমার এসে থামতেই শিলচরের মানুষ তাঁকে মালা দিয়ে বরণ করেন। সংবর্ধনা জানান।

প্রসঙ্গত, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তেন উল্লাসকর। একদিন ক্লাশে ইংরেজ অধ্যাপক ডঃ রাসেল ভারতীয়দের সম্পর্কে কটু মন্তব্য করলে তাঁকে জুতো মারেন উল্লাসকর। পড়াশোনার সেখানেই ইতি। পুলিশ যখন তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল, তখনই দেখা হয় ঋষি অরবিন্দ ও বারীন ঘোষের সঙ্গে। বিপ্লবী দলে নাম লেখান উল্লাসকর। রসায়ন বিজ্ঞানে অর্জিত জ্ঞান দেশমাতাকে শৃঙ্খলমুক্ত করার বাসনায় বোমা তৈরির কাজে লাগিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE