ধ্বংসস্তূপ: লেনিনহীন, ফাঁকা বেদির কাছে সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। রবিবার বিলোনিয়ায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী
সারা দেশে হইচই ফেলে বেদি থেকে তাঁকে উপড়ে ফেলেছিল বুলডোজার। ফাইবারের লেনিন এখন টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে আছেন বিলোনিয়া পুরসভা ভবনের ভিতরের চত্বরে! লেনিনহীন, ফাঁকা বেদির কাছেই আজ এসে দাঁড়ালেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।
শুধু ভাঙা লেনিনই নয়। বিলোনিয়া, উদয়পুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙা দলীয় কার্যালয়, দোকানপাট এবং আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের বাড়িতে দিনভর সাহস জোগাতে ঘুরে বেড়ালেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। ইয়েচুরি ও মানিকের সঙ্গেই ছিলেন গৌতম দাশ, বাদল চৌধুরী, রতনলাল ভৌমিক, শঙ্করপ্রসাদ দত্তেরা। পরপর দু’দিন রাজ্যের নানা এলাকায় তাণ্ডবের পরের ধ্বংসাবশেষ স্বচক্ষে দেখার পরে ইয়েচুরির দাবি, ‘‘মূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দল করার দায়ে যাঁদের বাড়ি বা সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এবং অবশ্যই এই অপরাধে জড়িতদের শাস্তি চাই।’’
উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব অবশ্য ইতিমধ্যেই যুক্তি দিয়েছেন, ওই লেনিন মূর্তি সরকারি কোনও সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেনি। বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি মূর্তি কিছু ব্যক্তি ধ্বংস করেছে। তাই সরকারের কোনও ভূমিকা নেওয়ার নেই।
বিলোনিয়ার সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব মজুমদার ফলপ্রকাশের পর থেকে এলাকার নানা ঘটনার তথ্য তুলে দিয়েছেন ইয়েচুরির হাতে। বিলোনিয়া মহকুমা কমিটির সম্পাদক তাপস দত্তের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের বহু পার্টি অফিস দখল করে স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীরা সেখানে বসে আছেন। তা হলে পুলিশ তাঁদের কী ভাবে খুঁজে পাচ্ছে না?’’
সোনাইছ়়ড়ি, মির্জাপুর, ভারতচন্দ্রনগর, তেরাপিয়া, চন্দ্রপুর, তুলামুড়ার নানা জায়গায় আক্রমণের চিহ্ন আজ দেখে বেড়িয়েছেন মানিকবাবুরা। তার মধ্যে বীরচন্দ্রমনু সোসাইটির কেয়ারটেকারের বিবরণ শুনে স্তম্ভিত হয়েছেন তাঁরা। সেই ১৯৮৮-’৯৩ কংগ্রেস জমানায় দখল হওয়া দলীয় কার্যালয়ে ফের পতাকা তুলতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছিল ১৩ জন সিপিএম কর্মীর। তাঁদের স্মৃতিতে সোসাইটি গড়ে সেখানে স্কুলছুট ছেলেমেয়েদের পড়ানোর শিবির এবং একটি কম্পিউটার সেন্টার চলে। কেয়ারটেকার জানিয়েছেন, বিজেপির জয়োল্লাসে কী ভাবে তাঁর কাছ থেকে চাবি কেড়ে ওই সোসাইটির জিনিসপত্র ঘেঁটে-ফেলে এখন তালাবন্ধ করে ফেলে রাখা হয়েছে!
দুই সাংবাদিকের হত্যার তদন্ত বিজেপি সরকার সিবিআইকে দিতে তৎপর হওয়ায় বিচার চাওয়ার আন্দোলন আজই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আগরতলায় সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। আর সে দিনই তেরাপিয়া বাজার থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন এক প্রৌঢ়। কিছু বলবেন? প্রশ্ন শুনে প্রৌঢ় বলেছেন, ‘‘কী আর বলব! সবই তো শেষ!’’ মানিকবাবু জবাব দিয়েছেন, ‘‘শেষ নয়! ভোটে হার-জিত থাকে। তা-ই নিয়ে মাথা খারাপ করতে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy