মন্ত্রক বদলের কথা তখনও অজানা। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে স্মৃতি ইরানি ও প্রকাশ জাভড়েকর। ছবি: পিটিআই।
সকালের শপথগ্রহণের সময়ও মনে হচ্ছিল নেহাতই সাদামাটা রদবদল। কিন্তু রাত গড়াতেই তা হয়ে গেল বিস্ফোরক! মন্ত্রিসভার রদবদলে এক ধাক্কায় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে স্মৃতি ইরানিকে সরিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সৌজন্যে সঙ্ঘ পরিবারের চাপ।
রাষ্ট্রপতি ভবনে সকাল এগারোটায় ১৯ জন নতুন প্রতিমন্ত্রীর শপথ হয়ে গেলেও দফতরে রদবদল করতে প্রধানমন্ত্রী সময় নিলেন প্রায় দশ ঘণ্টা! তার আগে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়েছেন পাঁচ প্রতিমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বলা হয়েছে, দক্ষতা, উদ্যম, শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা— এই চারটি বিষয়কে মাথায় রেখেই রদবদল করা হয়েছে। যার সবথেকে বড় প্রমাণ মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে বিতর্কিত স্মৃতি ইরানির অপসারণ। তাঁকে দেওয়া হল অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বের বস্ত্র মন্ত্রক। বার্লিন থেকে পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে উড়িয়ে এনে মানবসম্পদ মন্ত্রকে আনা হল। পরিবেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে’র সঙ্গে যুক্ত অনিল দাভে। প্রকাশের ভূমিকা নিয়ে বহু দিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন পরিবেশ কর্মীরা। প্রকাশকে সরিয়ে মোদী পরিবেশের প্রতি সুবিচারই করলেন বলে মনে করছেন অনেকে।
এ দিন অরুণ জেটলির ভার লাঘব করে তাঁর হাত থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকটি নিয়ে তা দেওয়া হয়েছে বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে। বেঙ্কাইয়ার হাতে থাকা সংসদীয় মন্ত্রকে এসেছেন অনন্ত কুমার। সদানন্দ গৌড়ার থেকে আইন মন্ত্রক নিয়ে সেখানে আনা হয়েছে রবিশঙ্কর প্রসাদকে। গ্রামোন্নয়নে বীরেন্দ্র সিংহের কাজে অখুশি ছিলেন মোদী। বীরেন্দ্রকে ইস্পাত মন্ত্রকে ঠেলে দিয়ে গ্রামোন্নয়নে আনা হয়েছে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে।
কিন্তু এ দিন সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে স্মৃতি-বিদায়। বিজেপি সূত্র বলছে, যার পিছনে মূল ভূমিকা নিয়েছে আরএসএস। গতকাল রাতেই সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের দূত কৃষ্ণগোপালের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সেখানে সঙ্ঘ নেতৃত্ব স্পষ্ট জানান, স্মৃতিকে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে সরাতে হবে। উপাচার্য নিয়োগ থেকে শিক্ষানীতি, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা থেকে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কানহাইয়া কুমারের গ্রেফতার— অনেক বিষয়েই স্মৃতির ভূমিকায় বিস্তর শোরগোল হয়েছে। মুখ পুড়েছে সরকারের। রোহিত ভেমুলা কাণ্ডে স্মৃতির ভূমিকার জন্য দলিতদের মধ্যে বিজেপি-বিরোধিতাও বাড়ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধীরা অনেকে সংসদের ভিতরে-বাইরে লাগাতার কটাক্ষও করেছেন। এই অবস্থায় সঙ্ঘের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীও মনে করেছেন স্মৃতিকে সরানোই শ্রেয়।
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, স্মৃতিকে বোঝানো হয়েছে বস্ত্র মন্ত্রকও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে স্মৃতিকে কাজে লাগানো হবে। এ বারে কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রিয়ঙ্কা বঢরাকে উত্তরপ্রদেশের মাঠে নামাচ্ছেন। স্মৃতিকে উত্তরপ্রদেশের মুখ করা না হলেও প্রিয়ঙ্কার মোকাবিলায় তাঁকে ব্যবহার করা হতে পারে।
স্মৃতির পরেই সবথেকে বড় বদল হল অরুণ জেটলির। তাঁর হাত থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক নিয়ে তা দেওয়া হয়েছে বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে। জেটলি অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই জানাচ্ছিলেন, অর্থ মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকে বেশি সময় দেওয়া তাঁর পক্ষে কঠিন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তাই পরবর্তী রদবদলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সে কাজ এ দিন সম্পূর্ণ করলেন মোদী। অর্থে জেটলির প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে জয়ন্ত সিন্হাকে সরিয়ে আনা হয়েছে সন্তোষ গাঙ্গোয়ার এবং অর্জুন মেঘওয়ালকে। জেটলি-বিরোধী বলে পরিচিত সুষমা স্বরাজের বিদেশ মন্ত্রকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে এম জে আকবরকে।
বেঙ্কাইয়াকে তথ্য ও সম্প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাঁকে সংসদীয় মন্ত্রী রাখা হয়নি। সেটি দেওয়া হয়েছে অনন্ত কুমারের হাতে। তাঁর প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া। দার্জিলিঙের সাংসদকে কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রকে সদানন্দ গৌড়ার উপর অসন্তুষ্ট মোদী ভরসা রাখলেন আগে এই মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা রবিশঙ্কর প্রসাদের উপরে। তবে ‘কল ড্রপ’ মন্ত্রী হিসেবে সমালোচিত রবিশঙ্করের হাত থেকে টেলি-যোগাযোগ দফতরের স্বাধীন দায়িত্ব পেয়েছেন মনোজ সিন্হা।
মন্ত্রিসভার রদবদলে স্পষ্ট, শুধু কাজ নয়, কিছু রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে জাতপাতের সমীকরণও মাথায় রাখতে হয়েছে মোদীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy