Advertisement
E-Paper

স্মৃতি-রঙ্গে মজে নেট দুনিয়া

স্মৃতি সততই সুখের! এক সময়, নাকতলার বিখ্যাত ‘কবিতা ভবনের’ আড্ডা এবং বুদ্ধদেব বসুর যাবজ্জীবন সাহচর্যকে এই নামেই ধরে রেখেছিলেন কবিপত্নী এবং সাহিত্যিক প্রতিভা বসু।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৩
নতুন মন্ত্রকে স্মৃতি ইরানি। বুধবার প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

নতুন মন্ত্রকে স্মৃতি ইরানি। বুধবার প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

স্মৃতি সততই সুখের!

এক সময়, নাকতলার বিখ্যাত ‘কবিতা ভবনের’ আড্ডা এবং বুদ্ধদেব বসুর যাবজ্জীবন সাহচর্যকে এই নামেই ধরে রেখেছিলেন কবিপত্নী এবং সাহিত্যিক প্রতিভা বসু।

কিন্তু আজ দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দ থেকে টুইটার-বিশ্ব— ওই বাক্যটিই যেন সমসাময়িক রিং টোন! মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে ‘স্মৃতি’র বিদায়ে সুখ যেন উপচে পড়ছে রাজনৈতিক শিবির থেকে শিক্ষাজগতে। তাঁর বস্ত্র মন্ত্রকের ঠাঁই পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও সার্বিক আহ্লাদ স্পষ্ট হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। জেএনইউ-এর ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার থেকে ইতিহাসবিদ রাম গুহ, অথবা বিজেপির মহিলা সাংসদ থেকে মানবসম্পদ উন্নয়নের একাংশ— সুখের ছবিটা সর্বত্রই স্পষ্ট।

২০১৪-র নির্বাচনে জিতে আসার পরে প্রথম দিন থেকেই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে মন্ত্রিত্বের দরবার করে যাচ্ছিলেন দিল্লির এক বিজেপি মহিলা সাংসদ। এখনও পর্যন্ত শিকে ছেঁড়েনি। অথচ তাঁর চোখের সামনেই রাজ্যসভা
থেকে আসা স্মৃতি পেয়ে গিয়েছেন হাইপ্রোফাইল মন্ত্রিত্ব। প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে গোড়া থেকেই। মনোবেদনায় জর্জরিত সেই প্রমীলা সাংসদ একদা এ কথাও অরুণ জেটলিকে বলে বসেছিলেন যে, তাঁকে যখন মন্ত্রী করাই হচ্ছে না তখন তিনি রাজনীতিই ছেড়ে দেবেন। বাড়ি বসে রূপচর্চা করবেন দিল্লির অনেক অভিজাত গৃহবধূর মতো! সেই তিনি-ই গতকাল গভীর রাতে ঘনিষ্ঠ মহলে স্মৃতি-বিদায় প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘মন্ত্রী হই বা না হই, এখন আমার আর কোনও দুঃখ নেই! এ বার কাজে মন দেব।’’

কেউ বুক ঠুকে, কেউ বা কিছুটা ফিসফাসে (দলমত নির্বিশেষে) যা বলছেন তাঁর নির্যাস— রুক্ষ ব্যবহার, মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা এবং অপরিসীম ঔদ্ধত্য এই সুন্দরী মন্ত্রীকে ঘরে এবং বাইরে অপ্রিয় করে তুলেছিল। যে কানহাইয়ার মারাত্মক এবং অযাচিত বিরোধিতা করে তাঁকে দেশের জনপ্রিয় ছাত্রনেতায় পরিণত করেন স্মৃতি, আজ তাঁর টুইটটিও মজা মাখানো। কানহাইয়া লিখেছেন, ‘‘সংঘ পরিবার হাফ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্টে যেতে চাইছে। ‘ডিয়ার মা’-এর কাছে মানবসম্পদ নেই তো কী হয়েছে, বস্ত্র মন্ত্রালয় তো রয়েছে! তিনি সংঘের নুন খেয়েছেন, সেই দামও চোকাবেন।’’

বিহারের শিক্ষামন্ত্রী তথা রাজ্য কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট অশোক চৌধুরিও গত কাল মধ্যরাতে হর্ষ প্রকাশ করেছেন বলে খবর। জাতীয় শিক্ষানীতি সম্পর্কে স্মৃতিকে টুইট করে জানতে চেয়ে কিছু দিন আগে বিরাট ফ্যাসাদে পড়ে যআন অশোক। তাঁর অপরাধ ‘ডিয়ার স্মৃতি ইরানিজি’ লিখেছিলেন তিনি। তৎক্ষণাৎ রি-টুইট করে তৎকালীন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী জানতে চান, ‘‘মহিলাদের কবে থেকে ডিয়ার বলা চালু করলেন অশোকজি?’’ সে নিয়ে জল অনেকটা গড়িয়েছিল। আজ অশোক অবশ্য প্রকাশ্যে কোনও আহ্লাদ প্রকাশ করেননি। কিন্তু তাঁর হয়ে ব্যাট করেছে সোশ্যাল মিডিয়া। একটি সরস টুইট, ‘‘এই সবের মধ্যে একটাই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হল, তাঁকে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে সরানোর যে সরকারি চিঠিটি পাঠানো হয়েছে, সেখানে সম্বোধনে কী লেখা রয়েছে? ডিয়ার স্মৃতি, নাকি শুধুই স্মৃতি!’’

‘সাস ভি কভি বহু থি’ সিরিয়ালের সেই প্রাণবন্ত বধূ, বাঙ্গালি মায়ের (শিবানী বাগচী) সন্তান, বাংলা-সহ একাধিক ভাষায় পারদর্শী স্মৃতি গোড়া থেকেই রাজনীতির ‘স্পট লাইটে’ ছিলেন। জীবনের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে (২০০৪) যখন লড়েন দিল্লির চাঁদনি চক থেকে, তরুণী স্মৃতিকে দেখার জন্য ভিড় জমে যেত পুরনো দিল্লিতে। তাঁর সেই সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী কপিল সিব্বল এক ঘরোয়া আড্ডায় সহাস্যে বলেছিলেন, ‘‘ওঁর কাছে হেরে গিয়েও সুখ!’’ সেই ‘সুখ’ পাওয়ার পথে অবশ্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কবি, আইনজীবী ও পোড় খাওয়া রাজনীতিক সিব্বল নিজেই। তাঁর কাছে হেরে গিয়েছিলেন স্মৃতি।

কিন্তু আজ মন্ত্রক থেকে সরে যাওয়ার পরেও তাঁকে ঘিরে জনতার আমোদ অন্তহীন। ‘টেক্সটাইল ধামাকা’ ‘বাই বাই স্মৃতি’ নামে নতুন নতুন হ্যাশট্যাগ (#) ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন সোশ্যাল ওয়েবসাইটে। অবিরত পোস্ট হয়ে চলেছে বিভিন্ন ছবি, সরস টিকা-টিপ্পনী। কেউ লিখছেন, ‘‘মন্ত্রী হিসেবে প্রথমেই যে কাজটি করবেন স্মৃতি তা হলো, ‘চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়’ গানটি নিষিদ্ধ করা!’’ মোদীর মুখের ছবি দেওয়া শাড়ির ছবিও পোস্ট হচ্ছে একের পর এক। সেগুলো নাকি আগামী দিনে বস্ত্র মন্ত্রকের ‘সিগনেচার’ শাড়ি হতে চলেছে!

সব মিলিয়ে যেন স্মৃতি-কেন্দ্রিক রঙ্গ-রসিকতার এক উৎসব চলছে। রদবদলের পরে কোনও মন্ত্রীকে ঘিরে যা সচরাচর দেখা যায়নি। স্মৃতি নিজেও যে সে সব সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল, তা স্পষ্ট। কিশোরকুমারের বিখ্যাত গান উদ্ধৃত করে নিজেই আজ বললেন, ‘লোগো কা কাম হ্যায় কেহনা!’

এহ বাহ্য। বড় মন্ত্রক চলে
যাওয়ায় স্মৃতি ইরানির নিজস্ব বিষন্নতা নিশ্চয়ই রয়েছে। তবে ‘স্মৃতি তুমি বেদনা’— এই গানটি অন্তত কেউ-ই গাইছেন বলে শোনা গেল না!

smriti irani troll
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy